প্রাকৃতিকভাবে মোটা হওয়ার সহজ উপায় ও খাদ্য তালিকা নিন
সন্ধানে দেখা গেছে প্রচুর মানুষ জানতে চায় সে মোটা হবে কিভাবে ?
বাড়িতে খেতে দেয় না ? শুটকি ,ফু দিলে উড়ে যাবে্অপুষ্টিতে ভুগছে , এমন নানা তির্যক মন্তব্য ও নেতিবাচক ঠাট্টা মশকরায় জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে অনেকেরই । ফলে স্বাভাবিকভাবে ওজন,বাড়ানোর জন্য আমাদের সমাজের অনেকেরই অনেক কষ্ট করতে হয় । অনেকে অনেক কিছুর সম্মুখীন হয়ে থাকেন ।
কিন্তু ওজন বাড়াতে গিয়ে মাঝেমধ্যে বিশেষ বিশেষ ভুল করে থাকে । যার ফলে শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন । কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে মোটা হলে সমস্যা সম্মুখীন কম হতে হয় । চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটা হওয়া যায় ।
ভূমিকা
আসলে মোটা হওয়া মানেই শরীরে অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি জমানো নয় । বয়স ও উচ্চতা অনুসারে শরীরের সঠিক ওজন থাকায় হল মোটা হওয়া । শরীরের স্বাভাবিক ওজন না থাকলে তখন সেটাকে রোগা হিসেবে ধরা হয় । প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমি আপনাদের জানাবো কিভাবে প্রাকৃতিক ভাবে মোটা হওয়া যায় এবং মোটা হওয়ার জন্য খাদ্য তালিকা ।
আমরা অনেকেই আছি যারা বেশি চিকন হওয়ার জন্য অনেক দুশ্চিন্তায় থাকি ওজন বাড়তে চায় না , ফলে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । আপনি যদি প্রাকৃতিক ভাবে মোটা হতে চান তাহলে আজকের এ আর্টিকেলটি আপনার জন্য । চলুন শুরু করা যাক ।
কি খেলে মোটা হওয়া যায়- মোটা হওয়ার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা
আমরা অনেকেই না বুঝে মোটা হওয়ার জন্য বা ওজন বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন ওষুধ সেবন করে থাকে । এটা মোটেও সঠিক নয় । মোটা হওয়ার জন্য আপনার প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করা জরুরি । তাহলে কোন ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে । তবে মোটা হওয়ার জন্য আপনার খাদ্য তালিকায় যদি বিশেষ কিছু খাবার রাখতে পারেন এবং নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে আপনি প্রাকৃতিক ভাবেই মোটা হতে পারবেন । তো চলুন জেনে নেই কি সেই খাবারগুলোঃ
দুধঃ
দুধ অনেকেরই খুব পছন্দের একটি খাবার আবার অনেকেরই একদমই অপছন্দের খাবার । কিন্তু এই দুধের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন ও ক্যালরি । সেজন্য যদি আপনি প্রতিদিন ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ খেয়ে ঘুমাতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে বৃদ্ধি পাবে ফলে আপনি খুব সহজে মোটা হতে পারবেন ।
গরুর মাংসঃ
অনেকেই হয়তো মনে করে থাকেন গরুর মাংস খুবই ক্ষতিকর খাবার বা এটি উপকারী নয় সবার জন্য । তবে যারা মোটা হতে চান তাদের জন্য গরুর মাংস খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার । এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ ফ্যাটি এসিড । তাই যারা মোটা হতে চান তাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন গরুর মাংস রাখুন ।
মাখন এবং ঘিঃ
মোটা হওয়ার উপায় এর ভেতর অন্যতম একটি উপাদান হলো মাখন এবং ঘি । এটা অনেকেই খেতে পছন্দ করেন না আবার অনেকেই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখেন । কিন্তু মোটা হওয়ার জন্য মাখন এবং ঘি এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে । আপনি যদি এটি নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে খুব সহজেই কম সময়ে মোটা হয়ে যেতে পারবেন । তবে অধিক পরিমাণে না খেয়ে পরিমাণ মতো খাওয়ার চেষ্টা করবেন ।
বাদামঃ
আমাদের মধ্যে অনেকেরই পছন্দের একটি উপাদান হচ্ছে এই বাদাম । বিভিন্ন ধরনের বাদাম রয়েছে যেমনঃ কাঠবাদাম, চিনাবাদা্ কাজুবাদাম ইত্যাদি । সবগুলো বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন । তাই বাড়তি ওজন বাড়াতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বাদাম রাখুন । এটি খুব সহজেই আপনার শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে মোটা হতে সাহায্য করবে ।
আলুঃ
আলু খুবই কমন একটি সবজি যা প্রত্যেকটি তরকারির সাথে খাওয়া যায় । আপনি যদি ওজন বাড়াতে চান তাহলে আলু আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান । প্রতিদিনের খাদতালিকায় আলু রাখুন । এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ লবণ শর্করা ইত্যাদি । তাই আপনি মোটা হতে চাইলে আলু সিদ্ধ করে খেতে পারেন ।
ফলমূলঃ
আমরা সকলেই জানি শরীর তরতাজ া রাখতে , স্কিন সুন্দর করতে ফলমূল খাওয়া জরুরি । মোটা হওয়ার জন্য বা শরীরের ওজন বৃদ্ধি করার জন্য আপনি প্রতিদিন ফলমূল খেতে পারেন এতে করে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে চেহারা সুন্দর হবে এবং আপনার ওজনের বৃদ্ধি পাবে ।
দইঃ
মোটা হওয়ার জন্য দুধের তৈরির দই খুবই গুরুত্বপূর্ণ । প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দই রাখুন । দুধের তৈরি যে কোন জিনিসেই পুষ্টিগুণ অনেক বেশি । তাই শুধু দই নয় মিষ্টিও রাখতে পারেন। । এতে করে আপনার শরীরে প্রচুর বৃদ্ধি পাবে এবং আপনি মোটা হয়ে যাবেন ।
ঘরোয়া ভাবে মোটা হওয়ার উপায়ঃ
ঘরোয়া ভাবে খুব কম সময়ে মোটা হওয়ার কিছু টিপস দেই আপনাদের । সেগুলো হচ্ছেঃ
- খাওয়ার আগে পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন এতে করে পেট ভরে যাবে এবং আপনি প্রয়োজনীয় ক্যালোরি খেতে পারবেন না ।
- তিন বেলা খাবার খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে হালকা কিছু খাবার রাখুন ।
- নিয়মিত দুধ ডিম খাবেন ফলে আপনার দেহের প্রোটিনের চাহিদা মিটবে ।
- যার নিয়মিত কফি খান তারা কফিতে ক্রিম যোগ করতে পারেন ।
- দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন এবং পর্যাপ্ত ঘুমান ।
- ধূমপান এড়িয়ে চলুন ।
প্রাকৃতিকভাবে মোটা হওয়ার সহজ উপায়
প্রাকৃতিক ভাবে মোটা হতে কয়েকটি উপায় অনুসরণ করতে পারেন । যেমনঃ
- এক টেবিল চামচ মাখন এর সঙ্গে এক টেবিল চামচ চিনি মিশিয়ে প্রতিদিন দুপুরে বা রাতে খাওয়ার আগে খেতে পারেন । এতে করে আপনার এক মাসের মধ্যেই শরীরের ওজন বেড়ে যাবে ।
- কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি । দ্রুত মোটা হতে বা শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে এটি দারুন একটি ফল তাই প্রতিদিন কলা খাবেন ।
- অন্যদিকে যারা রাতে খাবারের পরে কফি বা চা বা ক্যাফিন জাতীয় কোন পানীয় খেয়ে থাকেন তাহলে তার পরিবর্তে দুধ এবং কলার মিল্কশেক বানিয়ে খেতে পারেন এতে করে আপনার খুব সহজেই ওজন বেড়ে যাবে ।
- গবেষণায় ভাতঘুমের ব্যাপারে বিভিন্ন রকম কথা বলা হয়েছে । প্রতিদিন দুপুরে খাবারের পর 45 মিনিট বা ৩০ মিনিট ঘুমালে আমাদের মস্তিষ্ক ও পেশিকে বাড়তি শক্তি জোগাড় দেই । এজন্য যারা রোগা প্রকৃতির, তারা প্রতিদিন দুপুরে খাওয়ার পর একটি ভাতঘুম দেওয়ার অভ্যাস করুন ।
এবার জেনে আসি মোটা হওয়ার ভিটামিন সম্পর্কেঃ
আজকাল বাজারে বিভিন্ন রকম মোটা হওয়ার ওষুধ বা ভিটামিন বা মূলত রুচি বাড়ানোর ঔষধ পাওয়া যায় । আমরা অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই এসব ওষুধ সেবন করে থাকি । কিন্তু এগুলো আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম পাশে প্রতিক্রিয়া নিয়ে আসতে পারে । যা ক্যান্সার পর্যন্ত ঘটাতে পারে ।
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এইসব ভিটামিন বা বিভিন্ন রকম ঔষধ খাওয়া ঠিক নয় । এ ভুল আমরা অনেকেই করে থাকি । তাই এইসব ওষুধ এড়িয়ে প্রাকৃতিকভাবে ওজন বাড়ানো বা মোটা হওয়ার চেষ্টা করাই ভালো ।
মোটা না হওয়ার বিভিন্ন কারণ
আমাদের অনেকেরই বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যা আছে । ফলে আমরা মোটা হতে পারছি না । মোটা না হওয়ার সাধারণ কিছু কারণ রয়েছে যেমন থাইরয়েডের সমস্যা , ক্যান্সার, অতিরিক্ত পরিশ্রম ,বিষন্নতা, ডায়াবেটিস । থাইরয়েড অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে গেলে শরীরের ওজন হ্রাস পায় ফলে আমরা মোটা হতে পারি না । আবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে শরীরের ওজন খুব অস্বাভাবিক ভাবে হ্রাস পায় ।
অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে ক্যালোরি খুব দ্রুত ক্ষয় হয় ফলে মোটা হওয়া যায় না । এছাড়াও বিষণ্নতায় ভুগলে ক্ষুধা হ্রাস পায় ফলে আমরা খেতে পারে না এবং আস্তে আস্তে আমাদের শরীরের ওজন কম হয়ে যায় । কিডনির সমস্যা ও আমাদের শরীরের ওজন কমিয়ে ফেলে ।
শেষ কথা
মোটা হওয়ার জন্য খাবার তালিকার ক্ষেত্রে বয়স বিবেচনায় সতর্ক থাকতে হবে । এর পাশাপাশি ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা কোন অসুখ-বিসুখ আছে কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে । বিভিন্ন পুষ্টিবিদ জানান যে, রোগ থাকলে অবশ্যই চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত । সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সব ধরনের খাবার খাওয়া উচিত নয় ।
তবে আমার আর্টিকেলটি পড়ে আশা করি বুঝতে পেরেছেন কিভাবে প্রাকৃতিক ভাবে মোটা হওয়া যায় । এতক্ষণ আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ । আমার আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন এতে করে তারা অনেক উপকৃত হবে । আজকে এ পর্যন্তই । সবাই সুস্থ থাকবেন এবং ভালো থাকবেন ধন্যবাদ ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url