রাজশাহীতে ঘোরার জায়গা ও রাজশাহীর আশেপাশে ঘুরার জায়গা কোনগুলো জেনে নিন
এটি উত্তরবঙ্গের সকল জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং সুন্দর শহর । পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত এই রাজশাহীকে রেশমি বস্ত্রের কারণে রাজশাহীতে রেশম নগরী হিসেবে ডাকা হয় । এই জেলার নামকরণ নিয়ে প্রচুর মতপার্থক্য রয়েছে । চলুন জেনে নেওয়া যাক রাজশাহীতে ঘোরার জায়গা কোনগুলো । একই সাথে রাতের আশেপাশে ঘোরার জায়গা গুলো জেনে নিন ।
রাজশাহী শব্দটি বিশ্লেষণ করলে দুটি ভিন্ন ভাষার একই অর্থ দুটি শব্দ সংযোজন পাওয়া যায় । সংস্কৃত রাজ ও ফরাসি শাহ এর বিশেষণ শাহী শব্দযোগে রাজশাহী শব্দের উদ্ভব । যার অর্থ রাজা বা বাদশা । অনেক রাজা বাদশার বসবাসের জন্য এই জায়গার নাম করা হয় রাজশাহী ।
ভূমিকা
প্রাচীন ঐতিহ্য মন্ডিত শহর রাজশাহী । অনেক আগে থেকেই এটি প্রাচীন বাংলায় পরিচিত ছিল । জনসংখ্যার দিক থেকে বর্তমানে রাজশাহীর নগরায়ন বাড়ছে । উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় এবং অনেকগুলো খ্যাতি দেশের গণ্ডি ছড়িয়ে বিদেশ ছড়িয়ে পড়ায় বেশ সুনাম রয়েছে। জনসংখ্যার বিচারে এটি বিশ্বের প্রায় তৃতীয় বৃহত্তম শহর ।
রাজশাহী যাওয়ার উপায়
রাজশাহীতে খুব সহজে বাসযোগে যাওয়া যায় । আপনি ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর, মহাখালী, কিংবা সায়েদাবাদ থেকে বাসযোগে যেতে পারবেন । যাওয়ার ভাড়া নন এসি ৭০০ টাকা এবং এসি ১৪০০ টাকা । আপনি চাইলে ট্রেনেও যেতে পারবেন । ট্রেনে ভাড়া পড়বে আসন ভেদে ৩৫০ টাকা থেকে সাড়ে সাতশ টাকার মতো ।
রাজশাহীতে ঘোরার জায়গা
- পদ্মা গার্ডেন ।
- লালন শাহ মুক্তমঞ্চ ।
- টি বাঁধ ও আই বাঁধ ।
- সবুজে ঘেরা সিএনবি রাস্তা ।
- রাতের আলোকসজ্জিত রাস্তা ।
- এইচ এম কামরুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা শহীদ জিয়া শিশু পার্ক ।
- রাজশাহী কলেজ ।
- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ।
- বরেন্দ্র জাদুঘর ।
রাজশাহী পদ্মা নদীর কোল ঘেসে নির্মিত রয়েছে লালন শাহ মুক্ত মঞ্চ । এটি রাজশাহী জেলার একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র যেটি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ২০১৩ সালে নির্মাণ করেছিলেন । কবি লালন শাহের নাম অনুসারে এটির নামকরণ করা হয়েছে লালনশা মুক্ত মঞ্চ । সবার জন্য উন্মুক্ত হয় ছোট বড় সবাই আসে এ জায়গায় ঘুরতে। বর্ষাকালে পদ্মা নদীর খুব সুন্দর দৃশ্য এখানে দেখা যায় ।
আসলে রাজশাহীকে পদ্মা নদীর ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মোট পাঁচটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে । তার মধ্যে টি বাট এবং ত আইবার্থ হচ্ছে অন্যতম । কারণ এটি হচ্ছে একদম শহরের মধ্যে । বর্ষার সময় বাঁধের চারপাশে একদম পানি দিয়ে থৈ থৈ করে । দেখতে টি এবং আয়ের মত হওয়ায় এর নামকরণ করা হয়েছে তিবাদ এবং আই বাত ।
১৯১০ সালের নির্মাণ করা হয়েছে এই বরেন্দ্র জাদুঘর । ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার ঐতিহ্য ও নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য বরেন্দ্র অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয় । ওই সময়ের আছে বিভিন্ন স্থান অনুসন্ধান করে ৩২ টি দুষ প্রাপ্য নিদর্শন সংগ্রহ করা হয় । এই নিদর্শন সংরক্ষণ করার জন্য শরৎকুমার রায়ের দান করার জমিতে জাদুঘরের একটি নির্দিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হয় ।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় । জানলে অবাক হবেন যে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশের একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় । বিশ্ববিদ্যালয়টি এত বড় এবং এত সুন্দর যে আপনি একদিনে পুরোটা ঘুরে শেষ করতে পারবেন না ।
রাজশাহীর আশেপাশে ঘুরার জায়গা
রাজশাহীর আশেপাশে ঘুরতে যাওয়ার জায়গার মধ্যে রয়েছ
- বাঘা মসজিদ ।
- পুঠিয়া শিব মন্দির ।
- পুঠিয়ার রাজবাড়ি ।
- মহাস্থানগড় ।
- পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ।
বাঘা মসজিদ বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার বাবা উপজেলায় অবস্থিত । রাজশাহী সদর থেকে প্রায় ৪১ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে এটি অবস্থিত । বাঘা মসজিদটি পুরোটাই ইট দিয়ে নির্মিত । মসজিদের চারপাশে চারটে গম্বুজ রয়েছে । হিরোইন বাস স্ট্যান্ড থেকে সহজেই বাসে করে যেতে পারবেন ।
পুঠিয়া শিব মন্দির বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলায় অবস্থিত । এই মন্দিরের কাছে রয়েছে আর একটি মন্দির । তাদের মধ্যে দোলো মঞ্চ,গোবিন্দ গোপাল, রাধাগোবিন্দ মন্দির ইত্যাদি লক্ষণীয় । এজন্য লোকে বলে পুঠিয়া শহর মন্দিরের শহর। । রাজ পরিবারের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয় এই পুঠিয়া শিব মন্দির । মাথার উপর রয়েছে পিতলের কলস বসানো ।
প্রাচীন বঙ্গ জনপদে পাল বংশ সুধীর ঘোষ ৪ শতক রাজত্ব করেছেন । তারা বৌদ্ধ ধর্মের ছিলেন ধারণা করা হয় পাল বংশের তৃতীয় রাজা ধর্মপাল এবং অষ্টম শতকে শেষের দিকে বা নবম শতকে নির্মাণ করা হয় পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার । এই বিহারটি প্রায় ৩০০ বছর বৌদ্ধদের শিক্ষাদান কেন্দ্র ছিল । এটি রাজশাহী জেলার বদলগাছা উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত ।
মহাস্থানগড়ের ইতিহাসের মধ্যে রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন বাংলার গড়ে ওঠা জনপদ । মহাস্থানগড়ে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান এবং স্থাপনা । এর মধ্যে রয়েছে গোবিন্দ ভিটা, বৈরাগীর ভিটা, মাজার শরীফ, জাদুঘর ইত্যাদি । বগুড়া শহর থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা নিয়ে সহজেই চলে যাওয়া যায় এই মহাস্থানগড়ে ।
রাজশাহীর বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ
এই রাজশাহী জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গদের মধ্যে রয়েছেনঃ
- মোঃ শামসুজ্জোহা ।
- আবুল হাসানাত মাহমুদ কামরুজ্জামান ।
- বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ।
- পলান সরকার ।
- প্রফেসর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ।
- মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ।
বিখ্যাত এই ব্যক্তিবর্গুলোর জন্য স্থানে রাজশাহীতে। রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বা পাশাপাশি অনেক জায়গায় এনাদের জন্মস্থান । রাজশাহী বিখ্যাত হওয়ার এটি একটি বিশেষ কারণ । এই বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ কর না আজ বিখ্যাত হয়েছে তাদের বিভিন্ন কাজে কর্মে ।
কেন রাজশাহী শহর এত সুন্দর
সবুজ সুন্দর এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দিক থেকে প্রথম স্থানে রয়েছে আমাদের এই রাজশাহী । রাস্তার ল্যাম্প পোস্টে লাগানো রয়েছে রয়েছে বিভিন্ন রকমের লাইট । নজর কারায় এই সুন্দর শহরটিতে রয়েছে বিভিন্ন রকম ফুল এবং সারি সারি সবুজ গাছ । এই উন্নয়ন একেবারে কম সময় সম্ভব হয়নি এর জন্য ছিল দীর্ঘ সময় এবং পরিকল্পনা ।
রাজশাহিকে নিয়ে মনে রয়েছে নানান রকম প্রশ্ন । কেন রাজশাহী এত সুন্দর? কিভাবে এত পরিছন্ন ?
এর উত্তরে বলতে গেলে বলা যায় রাজশাহী যতটা সুন্দর এখানের মানুষ ঠিক ততটাই সুন্দর। । কারণ মানুষ সুন্দর না হলে পরিবেশ সুন্দর হওয়াটা সম্ভব না । তবে রাজশাহীর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে মেয়র সাহেবের রয়েছে ব্যাপক অবদান ।
শেষ কথা
উপরে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে রাজশাহীতে ঘোরার জায়গা এবং রাজশাহী শহরকে নিয়ে বিভিন্ন তথ্য জানানোর চেষ্টা করেছি । এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । পোস্টটি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই ফলো করুন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন ধন্যবাদ ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url