শীতকালে মধু খাওয়ার উপকারিতা এবং নিয়ম জেনে নিন

প্রাকৃতিকভাবে মধু নানা রকম গুণের অধিকারী । এর সাথেও রয়েছে একাধিক রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা । কেননা মধু একটি ভালো শক্তি প্রদায়ী উপাদান । দেহের তাপ ও দেহে তাপ ও শক্তি যুগে উষ্ণতা বাড়ায় মধু ।


এছাড়াও মধুর রয়েছে আরও বিভিন্ন রকম গুনাগুন । আজকে আলোচনা করব শীতকালে মধু খাওয়ার উপকারিতা এবং নিয়ম নিয়ে । আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনারা সবাই উপকৃত হবেন । চলুন তাহলে শুরু করা যাক ।

ভূমিকা

প্রকৃতিতে শীতের আমেজ চলে এসেছে । এই সময় প্রায় সব বয়সের মানুষেরই ঠান্ডা জনিত সমস্যাতে ভুগেন । তবে বেশিরভাগ শিশু এবং বয়স্করা ঠান্ডা সমস্যা জনিত রোগে । গবেষণায় দেখা গেছে মধু খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি । এছাড়াও সর্দি-কাশির সমস্যা ছাড়াও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা তে অনেকেই ভোগেন । এসব সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে মধু ।

মধুর পুষ্টি গুনাগুন

মধুতে ফ্রুক্টোজ নামক সুগার থাকে । অবশ্য শুক্র থাকে অল্প পরিমাণে । এটি একটি নির্ভেজাল খাদ্য । এর মধ্যে শর্করার ঘনত্ব এত বেশি যে কোন জীবাণু এক ঘন্টার বেশি সময় এর ভেতর বাঁচতে পারে না । এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ বি সি । এছাড়াও রয়েছে আরো বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান । যেমন খনিজ পদার্থ, পটাশিয়াম, ফসফরাস্ম্যা‌ঙ্গানিজ ও এনজাইম ।

এবং সাথে রয়েছে প্রোটিন ও । তবে বিশেষ বিষয় হল মধুতে কোন কোলেস্টেরল নেই । সে জন্য অসুস্থ সুস্থ মধু খেতে পারেন । যে কোন মানুষ দিনে দুই থেকে তিন চামচ মধু খেতে পারে অনা আসে । তবে যদি বেশি খেতে চান তাহলে শর্করা জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে । এছাড়া মোটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে । তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ খেলে মোটা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই ।

শীতে মধু খাওয়ার আশ্চর্যজনক কিছু উপকারিতা

শীতকালে আমরা বিভিন্ন রোগে ভুগি । মধু খেয়ে মিলবে এসব সমস্যার অনেকাংশে সমাধান এবং মধু খাওয়ার ফলে শীত কম অনুভব হবে । সেই সঙ্গে আমাদের শরীরও সুস্থ থাকবে । চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক শীতে মধু খাওয়ার আশ্চর্যজনক কিছু উপকারিতা ।
  1. হালকা সর্দি কাশিতে মধু তুলসী পাতার রসের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারলে অনেক উপকার হয়ে থাকে । সামান্য গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খেলে কাশির সমস্যা দূর হয়ে যায় । তবে খুবই ছোট বাচ্চা যেমন এক এক বছর বয়সী শিশুদের মধু খাওয়ানো যাবে না কারণ মধুতে রয়েছে ক্রস্টিডিয়াম বটুলিনাম নামক এক ধরনের উপাদান যা বাচ্চাদের পেটে বিভিন্ন রকম বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে ।
  2. সাধারণত শীতে কাটা ছেঁড়া ঠিক হতে অনেক বেশি সময় লেগে থাকে । মধুতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান । যা আমাদের শরীরের কাটা ছেঁড়া জায়গায় ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে ।
  3. শরীরের কোথাও পুড়ে গেলে বা কেটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে মধুর একটি প্রলেপ লাগিয়ে দিন এতে করে ব্যথা কমবে এবং কাটা ছেঁড়া দ্রুত নিরাময় হবে ।
  4. এছাড়াও মধুর এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুন পেটের এসিডিটি কমাতে সাহায্য করে । রাতে গরম জল এবং মধুর মিশ্রণটি শরীরকে হাইড্রেট করে, অন্ত্রের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে ফলে আমাদের গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমে যায় ।

রাতে ঘুমানোর আগে মধু খেলে শরীরের ওজন কমে

কি আশ্চর্য হচ্ছেন কথাটি শুনে তাই না ? আশ্চর্য হলেও কথাটি সত্য । মধু আমাদের লিভারের জন্য জ্বালানি হিসেবে কাজ করে এবং এটি গ্লুকোজ উৎপাদন করতে সক্ষম করে । ফলে যখন গ্লুকোজ উৎপাদিত হয় এটি মস্তিষ্ক সতর্ক করে যে চিনির মাত্রা বেশি এবং এটি চর্বি পোড়ানো হরমোন মিশ্রণ করতে বাধ্য করে ফলে আমাদের চর্বি অনেক কমে যায় ।
 
সত্যিকার অর্থে ওজনের পার্থক্য দেখতে রাতে ঘুমানোর আগে আপনাকে অবশ্যই এক চামচ মধু ও গরম জল একত্রে করে মিশিয়ে খেতে হবে । এটি নিশ্চিত করতে যেয়ে এটি চর্বি পোড়ানো হরমোন গুলিকে সারারাত কাজ করতে সক্ষম করে । আপনার খাতা তালিকা থেকে তিনি সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে ।

আপনি যদি চিনি দিয়ে কপি বা চা পান করে থাকেন তাহলে চিনির পরিবর্তে মধু ব্যবহার করুন । আপনি যদি ডায়েটে মধু প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনি এর ফলাফল দেখতে পাবেন । এছাড়াও রাতে মধু খেলে এটি ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক হবে । একই সাথে এটি মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা রোধ করবে ।

মধুর উৎস

সানফ্লাওয়ার মধুঃ

ঠান্ডা লাগা গলা ব্যথা সর্দি কাশি নিরাময় এই সূর্যমুখী ফুল থেকে তৈরি মধুর রয়েছে বিশেষ গুনাগুন ।

লিচি মধুঃ

লিচু ফুল থেকে মূলত এই মধু তৈরি হয়ে থাকে । এই মধু আমাদের হজমে সহায়তা করে থাকে ।

ইউক্যালিপটাস মধুঃ

এটি মূলত ইউক্যালিপটাস গাছের ফুল থেকে তৈরি হয় । আমাদের দেহের ভেতরের কোনো সমস্যা দূর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই মধুটি । এছাড়াও ব্যথা বা ক্ষত নিরাময় এর গুরুত্ব অপরিসীম ।

মাল্টিফ্লোরাল মধুঃ

বিভিন্ন ফুলের পরাগ থেকে এই মধু তৈরি হয়ে থাকে । এটি মানসিক চাপ অনিদ্রা ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে ।

করঞ্জা মধুঃ

করঞ্জা স্কুল থেকে তৈরি হওয়া এই মধু মূলত ঠান্ডা লাগা ও ভাইরাসজনিত সমস্যা থেকে সুরক্ষা দেয় ।

ত্বকের যত্নে মধু

এর মধ্যে রয়েছে কিছু কার্যকরী নির্যাস যা আমাদের ত্বকের উচ্চতা বাড়ায় । দৈনিক ত্বক পরিষ্কার করতে আমরা মধু ব্যবহার করতে পারি । এছাড়াও ব্রণের জন্য , বয়সের ছাপ দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মধু । ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করতে এবং প্রতিদিন এই মধুর ব্যবহার ত্বকের ভারসাম্য বজায় রাখে । এমনকি একজিমা বা সিরোসিস উপশমে মধু অনেক সহায়তা করে ।

এছাড়াও ত্বকের করা দাগ দূর করতে সহায়তা করে সাহায্য করে । মধু সম্পূর্ণভাবে ত্বকের বলি রেখা কমিয়ে বয়সের ছাপ দূর করে দিতে পারে ।

তবে মনে রাখা দরকার যে, যাদের এলার্জির সমস্যা বেশি তারা মধু ব্যবহারে একটু সতর্ক থাকবেন । তাই ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে । এছাড়াও মুখে মধু ব্যবহার করার পরে ভালোভাবে মুখটি পরিষ্কার করে নিতে হবে। কেননা মুখের লোমকূপে মধু আটকে থাকলে তা ব্রণে পরিণত হতে পারে।

শেষ কথা

প্রিয় বন্ধুরা এতক্ষণ আমরা মধু নিয়ে অনেক কথা জানলাম । শীতকালে মধু খাওয়ার উপকারিতা এবং নিয়ম সম্পর্কেও আশা করি জানতে পেরেছেন । এতক্ষন আমার আর্টিকেলটির সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন । আজকে এই পর্যন্তই । সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন ধন্যবাদ ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url