ভাত খেয়ে ওজন কমাবেন নাকি রুটি খেয়ে চলুন জেনে নেই

 বর্তমান সময়ে আমরা যেভাবে জীবন যাপন করছি তাতে করে শরীরে খুব সহজেই মেদ জমে । প্রতিদিন অনেকে অলসতার কারণে ব্যায়ামও করতে পারে না । কিন্তু সার্বক্ষণিক শরীর ফিট রাখার জন্য আমরা ব্যস্ত হয়ে থাকি । অনেকে আবার দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম করে দেয় । তবে কোনটি খেলে দ্রুত ওজন কমে এ প্রশ্ন আমাদের কম বেশি সবার মনেই । চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ।

ভাত খেয়ে ওজন কমাবেন নাকি রুটি খেয়ে চলুন জেনে নেই

 আজকে আমি আপনাদের ওজন কমানোর বেশ কয়েকটি উপায় জানিয়ে দিব । ভাত খেয়ে ওজন কমাবেন নাকি রুটি খেয়ে জানতে হলে আমার পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন । ওজন কমাতে আদা পানির উপকারিতা এবং ওজন কমাতে হলে নিয়মিত কি ব্যায়াম করা জরুরী নাকি নয়, কম ঘুমানো দরকার নাকি বেশি ঘুমানো দরকার সেগুলো সঠিকভাবে জেনে নিন । চলুন তাহলে শুরু করা যাক ।
ভূমিকা
ওজন কমানোর রেসে কম বেশি আমরা সকলেই দৌড়াচ্ছি । আমরা সবাই চাই ফিট থাকতে । তবে আমাদের ভুল জীবন যাপনের জন্য আমরা অনেকেই অতিরিক্ত মোটা হয়ে যায় । এতে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ে । তাই সুস্থ থাকতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার কোন বিকল্প নেই । সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ধীরে ধীরে শরীরের অতিরিক্ত ওজন ও মেদ কমানো সম্ভব ।

ওজন কমাতে ডায়েট

শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর কথা মাথায় আসলে আমাদের সর্বপ্রথম মাথায় আসে এই ডায়েটের কথা । বিভিন্ন রকম ডায়েট করা যায় । দ্রুত ওজন কমানোর জন্য ক্র্যাশ ডায়েট , কিটো ডায়েট ইত্যাদি করে থাকেন অনেকেই । ডায়েট করা মানে আসলে অনেকেই মনে করেন খাবার না খাওয়া বা খাবারের পরিমাণ অতিরিক্ত কমিয়ে ফেলা ।

কিন্তু বিভিন্ন পুষ্টিবিদদের মধ্যে আসলে ডায়েট হল বিশেষ অবস্থায় ব্যক্তি বিশেষে নিয়ন্ত্রিত বা শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী খাবার খাওয়া । সুষম খাদ্য আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে । একজন ব্যক্তির বয়স, ওজন, উচ্চতা ইত্যাদি বিবেচনা করে প্রতিদিন ক্যালোরি নির্ধারণ করা হয় । একটি সঠিক ও সুষম খাদ্যের তালিকা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে ।

ওজন বৃদ্ধি শুধু খাবার থেকেই হয় বিষয়টা কিন্তু এমন নয় । শারীরিক অসুস্থতা, হরমোনের সমস্য্‌ বিভিন্ন রকম ওষুধ সেবন ইত্যাদি কারণ থেকেও বাড়তে পারে আমাদের শরীরের ওজন । আসলে কি কারনে আমাদের ওজন বেড়েছে সেটা শনাক্ত করা খুবই জরুরী । তাই আমাদের সঠিক জীবন যাপন ও খাদ্য কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে আমরা কমাতে পারি শরীরের বাড়তি ওজন ।

জেনে নেই কিভাবে কমবে শরীরের ওজন

সকালে নাস্তার আগে কার্ডিও করা

আমরা অনেকেই রাতে অনেক দেরি করে ঘুমাই এবং সকালে খুব দেরি করে ঘুম থেকে উঠি । আসলে নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে উঠলেও শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে যায় । ঘুম থেকে ওঠার পর শরীরের কিছু হালকা ব্যায়াম যেমন জোরে হাটা, সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করা বা সাইকেল চালানো ইত্যাদি এগুলো আমাদের শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে ।


তাদের অবশ্যই ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের ক্যালরি বার্ন করতে হবে । এটাকে বলে সকালে কার্ডিও করা । মানে হচ্ছে সকালে ব্যায়াম করলে শরীরের ক্যালরি বেশি বার্ন হয় । ফলে খাওয়ার পরে কার্ডিও করার চেয়ে খালি পেটে খাওয়ার আগে কার্ডিও করলে আপনি ভাল ফল পাবেন ।

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম

রাত জাগা ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে তাই রাত জাগার অভ্যাস থাকলে সেটা দ্রুত পরিত্যাগ করতে হবে । রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম নিশ্চিত করতে হবে । প্রতিদিন রাতে সর্বনিম্ন সাত আট ঘন্টা ঘুমানো দরকার । এর ফলে আপনার শরীরের বিপাকক্রিয়া ভালোভাবে হবে । এবং একই সাথে আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন ।

পানি পান করা

অনেকেই বলে থাকেন খাবার খাওয়ার আধা ঘন্টা আগে পানি খেতে হবে, ঠিক খাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে পানি খাওয়া যাবে না । এটা কিন্তু পুরোপুরি একটি ভ্রান্ত ধারণা । বরং আপনি যদি একটু কম খেতে চান তাহলে খাওয়ার পূর্বে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিন এতে করে আপনার পেট ও ভরবে আবার তুলনামূলকভাবে খাবারও কিছুটা কম খেতে পারবেন । আর নিয়মিত পানি পান করার অভ্যাস করুন ।

চিনি পরিহার

ওজন কমানোর জন্য খাদ্য তালিকা থেকে একেবারেই চিনি পরিহার করা উচিত কেননা মাত্র এক চামচ চিনিতে 16 শতাংশ ক্যালরি থাকে যা আপনার শরীরের ওজন বাড়ানোর জন্য ভয়াবহ । যারা চায়ের সাথে অতিরিক্ত চিনি খান তারা এ অভ্যাস পরিহার করুন । আবার অতিরিক্ত খাবার হিসেবে যারা কোমল পানীয়, ডুবো তেলে ভাজা বিভিন্ন খাবার খেতে পছন্দ করেন তারা একেবারেই এ অভ্যাস বাদ দেন ।

ভাত খেয়ে ওজন কমাবেন নাকি রুটি খেয়ে

আমাদের অনেকেই মনে করেন যে, ভাত না খেয়ে রুটি খেলে হয়তো ওজন কমে যাবে । আবার অনেকেই ভাতের বদলে রুটি বেছে নেন । আবার অনেকেই ভাত বা রুটি কোনটাই বেছে নেন না । আসলে বিভিন্ন পুষ্টিবিদের মতে, রুটি বা ভাত যেটাই হোক না কেন পরিমিত পরিমানে খেলে ওজন বাড়বে না বরং কমবে ।

দুটি খাবারের রয়েছে অধিক পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট । রুটিতে রয়েছে বেশ ভালো মাত্রায় প্রোটিন ও ফাইবার । যা আমাদের পেট ভরা রাখে দীর্ঘক্ষণ । এছাড়াও রুটিতে রয়েছে সোডিয়াম যা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী ।অন্যদিকে ভাতেও রয়েছে ফাইবার কিন্তু সেটা রুটির থেকে কম । তাই সহজেই এটি হজম করা সম্ভব ।

তবে যারা ডায়েটের মাধ্যমে ওজন কমাতে চাচ্ছেন তারা চাল এবং ডাল একসঙ্গে নিয়ে খিচুড়ি বানিয়ে খেতে পারেন । এতে ডালে থাকা অধিক পরিমাণে প্রোটিন আপনার শরীরে প্রবেশ করবে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ পাবেন । আর যদি মনে করেন রুটি খাবেন তাহলে আটা বা ময়দার পরিবর্তে রাগির আটাও ব্যবহার করতে পারেন । এগুলোতে পুষ্টি বেশি ।

তবে ভাত রুটি যেটাই খান না কেন পরিমিত পরিমানে খেতে হবে । সবজি বেশি পরিমাণে খাবারের তালিকায় রাখুন । এক বাটি ডাল খাবেন । প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাছ মাংস ডিমের মতো প্রাণীর প্রোটিন গুলো রাখুন । ওজন কমাতে রাতে আধা কাপ ভাত খেতে পারেন ।

সকালে খালি পেটে কি খেলে ওজন কমবে

আমাদের প্রত্যেকেরই সকালের জল খাবারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । গবেষণায় দেখা গেছে সকালে খালি পেটে হালকা কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস এবং একটা চামচ মধু মিশিয়ে এক গ্লাস পানি খেতে পারলে শরীরের ওজন অনেক কমে আসে । পেট ভরানোর জন্য সকালে বাদাম খাওয়া খুব উপকারী । এছাড়াও পুষ্টিবিদরা সকালে খালি পেটে একটি ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ।

সকালের নাস্তার ক্ষেত্রে তরমুজ হতে পারে একটি স্বাস্থ্যকর ফল । এই ফলের ৯০% পানি ফলে আমাদের শরীরের পানির অভাব পূরণ করবে । তরমুজ খেলে শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখা সহজ হয়ে যায়। তরমুজে আছে উচ্চ স্তরের লাইকোপিন এটি আমাদের হৃদপিণ্ড ও চোখের জন্য খুবই উপকারী ।

ওজন কমাতে আধা পানির গুণ

আমরা সকলেই জানি আদতে রয়েছে বিশেষ রকমের গুনাগুন । এটি ঠান্ডা, সর্দি ও গ্যাস কমায় । বিশেষজ্ঞরা এমনটাও বলেন যে, আদা পানি ওজন কমাতে বেশ কার্যকর । প্রথমে দুই কাপ পানিতে আদা থেতো করে ফুটিয়ে নিন ভালোভাবে । ১৫ থেকে ২০ মিনিট ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন । সকালে খালি পেটে খাবেন, দুপুরেও খেতে পারেন তবে ভারি খাবার খাওয়ার আগে খাবেন না ।
বিশেষজ্ঞরা আদা পানির গুণের কথা আরো জানান যে,
  1. আধা পানি দেহের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে ।
  2. এটি উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং রক্তকে পাতলা করতে সাহায্য করে ।
  3. শরীরে তাপের ভারসাম্য রক্ষা করে ফলে এটি ক্যালোরি ঝরতে সাহায্য করে ।
  4. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং এলার্জি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে ।
  5. কটিসল হরমোন এর মাত্রা কমাতে সহায়তা করে ফলে পেটের মেদ কমায় ।
  6. হজম ক্ষমতা বাড়ায় ফলে দ্রুত ওজন কমতে সুবিধা হয় ।        

মন্তব্য

বর্তমান সময়ে আমাদের ওজন নিয়ে আমরা খুবই বিপাকে পড়ে যায় এবং এই ওজন কমানোর জন্য বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে অনেক অর্থ ব্যয় করে থাকি । তাই অযথা অর্থ দেয় না করে কিভাবে খুব কম সময় ওজন কমানো যায় আশা করি সে সম্পর্কে আপনি সঠিক ধারণা পেয়েছেন । প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমার পোস্ট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । আমার পোস্ট পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন ।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url