ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
ঘৃতকুমারীর নামটি শুনে অনেকের ভুরু কুঁচকালেও অ্যালোভেরা নামটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আজকে এই ভেজস উদ্ভিদ অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব যা আমাদের জন্য জানা খুব দরকার। প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জানবো অ্যালোভেরা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে।আশা করি আজকের পোস্টটি সবার জন্য খুব উপকারে আসবে। ওষুধে এই অ্যালোভেরার বিভিন্ন রকম গুণের কথা পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ চিনে জানে। শরীরের নানা প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দিতে এবং ছাড়িয়ে তুলতে অ্যালোভেরার উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না।
ভূমিকা
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা একটি রসালো জাতীয় উদ্ভিদ। ঘৃতকুমারী গাছটা দেখতে অনেকটাই কাঁটাওয়ালা ফনিমনসা বা ক্যাকটাসের গাছের মতো। এটি ক্যাকটাসের মতো দেখতে হলো আসলে ক্যাকটাস নয়। লিলি জাতীয় প্রকৃতির উদ্ভিদ। অ্যালোভেরার ব্যবহার হয় সেই খ্রিস্টপূর্ব যুগ থেকেই। রাস্তাঘাটে কিংবা বাজারে খুবই সহজলভ্য একটা জিনিস।
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা খাওয়ার উপকারিতা
শরীরের বিভিন্ন রকম প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দিতে এবং অসুখ বিসুখ সারিয়ে তুলতে এলোভেরার কোন বিকল্প নেই। এই উদ্ভিদ পানীয় হিসেবে যেমন কার্যকর, ঠিক তেমনি বাইরের বিভিন্ন কাজেও ব্যবহারযোগ্য। ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার রস খাওয়া এবং ত্বক ও চুলে ব্যবহার করলে আপনি দারুন উপকৃত হবেন। চলুন জেনে নেই ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা খাবার কিছু উপকারিতার কথাঃ
ভিটামিন এবং খনিজ লবণ
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা বিভিন্ন রকম ভিটামিন এবং খনিজ লবনের উৎস হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন এ সি ফলিক এসিড ভিটামিন বি ইত্যাদি অ্যালোভেরাতে থাকে। আর অল্প কিছু উদ্ভিদের মধ্যে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী এমন একটি উদ্ভিদ যার মধ্যে ভিটামিন বি টুয়েলভ অবস্থিত রয়েছে।
এছাড়াও রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়াম সোডিয়াম আয়রন এবং ম্যাঙ্গানিজ। যেগুলা আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম শক্তির যোগান দিয়ে থাকে। তাই ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
রোগ প্রতিরোধ করতে
শরীরে প্রাকৃতিক ক্ষমতাটা বাড়িয়ে বাহ্যিক বিভিন্ন রকম রোগ প্রতিরোধ করতে ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা দারুণ একটি উদ্ভিদ। শারীরিক ও মানসিক চাপ মোকাবেলা করার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমাদের দেহ এবং তোকে সুরক্ষিত রাখে।
হজমে সহায়ক
আমাদের সুস্বাস্থ্যের মূলমন্ত্র হল সঠিকভাবে হজম হওয়া। হজমের সমস্যা থেকে আসলে বিভিন্ন রকম রোগের সৃষ্টি হয়। তাই পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করে হজম শক্তিকে বাড়াতে সাহায্য করে ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা। মৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার রস খাওয়ার দারুন একটি উপকারিতা হলো এটাই কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়ার দুই ক্ষেত্রেই কার্যকর।
ঘৃতকুমারী বা এলোভেরা পরিপাক ও রেচন যন্ত্রকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্ত রাখে বলে জানা গেছে। এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে ঘৃতকুমারীর রস খেলে আমাদের পেটে কৃমি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। এমন কি থেকে থাকলেও সেটি দূর হয়ে যায়।
দূষণ মুক্তি
ঘৃতকুমারী বা এলোভেরা রস প্রচুর পরিমাণে আঠানো হয়। এবং মজার বিষয় হল এইরকম আঠালো রস খাওয়ার ফলে আমাদের খাদ্যের ভেতর দিয়ে প্রবেশের সময় পুরো পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করে ফেলে। এই আঠালো রস দেহের অভ্যন্তরের নানা দূষিত ও পদার্থকে চুষে মলাশয়ের মাধ্যমে বের করে দেয় ফলে আমাদের শরীর দূষণমুক্ত থাকে।
প্রদাহ ও ব্যথা কমায়
শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা দূর করতে ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার কোন বিকল্প নেই। এতে বিভিন্ন ধরনের উপাদান রয়েছে যা প্রদাহ তৈরি হওয়া টাকায় এবং প্রদাহ হয়ে গেলে তা কমে আনে। ঘৃতকুমারীর বিভিন্ন গুণ হাতে পায়ে সন্ধিস্তরের জড়তা দূর করে এবং আমাদের শরীরের বিভিন্ন গিটের ব্যথা দূর করে ফেলে।
ওজন কমাতে সহায়ক
খাবার হজম করা এবং শরীরকে দূষণমুক্ত রাখতে ঘৃতকুমারী উপকারী এবং এর সাথে সাথে আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতেও ঘৃতকুমারীর কোন বিকল্প নেই। নিয়মিত কুমারীর আপনার শরীরের বাড়তি ওজনের সমস্যা কমে যাবে। তাই ঘৃতকুমারের রস খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
মুখের ঘা দূর করতে
এলোভেরা বা ঘৃতকুমারীতে রয়েছে ভিটামিন ডি যা আমাদের মুখের ঘা শুকাতে সাহায্য করে।তাই মুখের ঘা শুকাতে ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা দারুন উপকারী। ঘা আক্রান্ত স্থানে ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা লাগিয়ে রাখলে দ্রুত শুকিয়ে যায়।
দাঁত ও মাড়ির যত্নে
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার জুস আমাদের দাঁত ও মাড়ির জন্য ঔষদের মতো কাজ করে থাকে।এতে করে দাঁতের কোন রকম সমস্যা বা ইনফেকশন বা মাড়ির কোন রকম সমস্যা থাকলে দূর হয়ে যায়। কারন এতে রয়েছে ভিটামিন শি। যার জন্য আমাদের দাঁত ও মাড়ির বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে।
হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে
হার্টকে সুস্থ রাখতে ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। কারন এটি রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়।তার সাথে ব্লাড প্রেশারকে কমিয়ে দেয়। রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে।আমাদের রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করার ক্ষমতা বারায়। এবং রক্ত কনিকাকে বাড়িয়ে হার্ট কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিকার করতে
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার মধ্যে রয়েছে ইমাডিন যা মেয়েদের স্তন কান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া অন্যান্য কান্সার প্রতিরোধেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন রাখতে
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার জুস আমাদের রক্তে সুগারের পরিমান কমিয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিস ধরা পড়ার আগেই যদি নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস খাওয়া হয় তাহলে আর এই সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
শেষকথা
প্রিয় পাঠক প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ ঘৃতকুমারী অ্যালোভেরার গুণের কোন সীমা সংখ্যা নেই। এটি জুস হিসেবেও খাওয়া হয়। আজকে আমরা জানলাম ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি আমার পোস্টটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আজকে এ পর্যন্তই। সকলে সুস্থ থাকবেন এবং ভালো থাকবেন। এতক্ষণ আমার পোষ্টের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url