কিডনি রোগের লক্ষণ প্রতিকার ও ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নিন
মানবদেহের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। অপর নাম বৃক্ক । কিডনি রক্তে অবস্থিত দূষিত পদার্থ গুলো পরিশোধন করে এবং মূত্র তৈরি করে। সেগুলো দেহ থেকে বের হয়ে যায় । এই ব্যবস্থা করে দেয় বৃক্ক বা কিডনি ।
কিডনি রোগ হচ্ছে একটি নিরব ঘাতক রোগ। ডায়াবেটিস ও নিরব ঘাতক রোগ। চলাফেরা ও জীবন যাপনে খাদ্য অভ্যাসে পরিবর্তন না আনলে সমস্যা বেশি হয় । প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জানবো এই কিডনি রোগের লক্ষণ প্রতিকার ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক ।
ভূমিকা
প্রত্যেকটা মেরুদন্ড প্রাণীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এই কিডনি যা দেহের রেচনতন্ত্রের প্রধান কাজ করে থাকে। এর প্রধান কাজ রক্ত থেকে বজ্র মুত্র হিসেবে দেহের বাইরে বের করে দেওয়া । মানবদেহের প্রতিদিন ৪০ বার বৃক্কের মধ্যে দিয়ে দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়।
কিডনি রোগের কারণ
ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন এর এক জরিপে জানা গেছে বিশ্বব্যপি জনসংখ্যার প্রায় ১০% লোক কিডনি সমস্যা তে আক্রান্ত। প্রতিবছর প্রায় লক্ষাধিক লোক মারা যায় কিডনি সমস্যার জন্য। তাই যদি কিডনি রোগের কারণ গুলো আপনার জানা থাকে তাহলে আপনি সতর্ক থাকতে পারবেন। যেসব কারণে কিডনি রোগ হয় সেগুলো হলঃ
- জন্মগতভাবে কিডনি অস্বাভাবিক থাকলে
- ডায়াবেটিস থাকলে
- কিডনিতে পাথর হলে
- বংশগতভাবে কিডনির রোগ থাকলে
- বেশি সময় ধরে ব্যথার ওষুধ সেবন করলে।
- উচ্চ রক্তচাপ থাকলে
কিডনি রোগের উপসর্গ ও লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না । ধীরে ধীরে যখন বৃক্কের ক্ষমতা কমে আসে তখন সমস্যা দেখা দেয় । কি কি সমস্যা দেখা দেয় সেগুলো আমরা এখন জানবো ।
ফোলা ভাব
চোখমুখে চারপাশ হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক ভাবে ফুলে যাবে। বিভিন্ন চিকিৎসকরা বলে, কিডনিতে সমস্যা হলে চোখের নিচে অথবা পায়ের গোড়ালিতে এবং মুখের ফোলা ভাব বেশ কয়েকদিন স্থায়ী হয়। সেটা যদি এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ হয় তাহলে সেটা কিডনি সমস্যার কারণেই হতে পারে। কিডনির সমস্যার কারণে যখন শরীর থেকে পানি বের করতে পারেনা তখন শরীরের পানে জমে এই ফোলা ভাবটা চলে আসে ।
ক্লান্তি
কোন নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া বা পরিশ্রম ছাড়াই সব সময় ক্লান্তি বা দুর্বল ভাব শরীরটা লেগেই থাকে। ওজন দ্রুত কমে যাওয়া কিডনি সমস্যার অন্যতম একটি লক্ষণ। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কিডনি ঠিকঠাক মতো কাজ না করলেও শরীরের রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। এছাড়াও রক্ত পরিশুদ্ধ হয় না । ফলে রক্তে বিষাক্ত ও অপ্রয়োজনীয় উপাদান বাড়তে থাকে। আর এই জন্যই ক্লান্তি ভাবটা চলে আসে।
প্রস্রাবে সমস্যা
ঘনঘন প্রস্রাব করা অথবা প্রস্রাবের চাপ কমে যাওয়া দুটি কিডনি সমস্যার লক্ষণ। প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বদলে নির্গত হয় । কিন্তু কিডনি ঠিকঠাক মতো কাজ না করলে মধুথলিতে সমস্যা দেখা দেয় । বারবার মধ্য ত্যাগ বা মূত্রের সাথে রক্ত বের হওয়া অথবা মূত্রের অতিরিক্ত ফেনা হওয়া কিডনি সমস্যার লক্ষণ । বিশেষত রাতে বারবার প্রস্রাব হওয়ার কিডনি সমস্যার লক্ষণ।
শ্বাসকষ্ট
আমাদের শরীরের তরলের ভারসাম্য রক্ষা করে কিডনি । তবে কিডনিতে সমস্যা হলে ফুসফুসের তরল জমা হবে ফলে শ্বাসকষ্ট হবে । এ শ্বাসকষ্ট হওয়াকে হাইপারভোলেমিয়া বলা হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেকে বুকে ব্যথা অনুভব করেন ।
কিডনি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
কিডনি ভালো রাখার জন্য আমরা ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি। কিভাবে কিডনি ভালো রাখতে ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করবেন সেটা দেখে নিনঃ
নিয়মিত ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম করার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো এবং শরীর সুস্থ সবল রাখতে প্রতিদিন ব্যায়াম করা দরকার । নিয়মিত রক্তচাপ কমায়। তাই চিকিৎসকরা সবসময় প্রতিদিন 20 থেকে 30 মিনিট ব্যায়াম করার নির্দেশ দিয়ে থাকেন।
ধূমপান ত্যাগ করুন
অতিরিক্ত ধূমপান যেমন ফুসফুসের ক্ষতি করে তেমনি কিডনিরও ক্ষতি করে। তাই আপনি যদি ধূমপান করে থাকেন তাহলে আজকে থেকেই এই বদভ্যাসটি বাদ দিয়ে ফেলুন।
ব্যথার ওষুধ কম খান
আমরা অনেকেই খুব বেশি পরিমাণে ব্যথার ওষুধ খেয়ে থাকি। যা আমাদের শরীরের জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে এক্সপিরিন এর মত ব্যথার ওষুধ গুলো অতিরিক্ত সেবনের ফলে কিডনি ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। এই ওষুধগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
স্বাস্থ্যকর খাবার
কিডনিকে ভালো রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবারের কোন বিকল্প নেই। অতিরিক্ত তেল চর্বিযুক্ত খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। অতিরিক্ত লবণ, চিনি, তেল , কিডনি রোগের ঝুঁকির কারণ বাড়ায়। অন্যদিকে কমলালেবু, পালং শাক , কলা ইত্যাদি হাই পটাশিয়ামযুক্ত খাবার কিডনিকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
প্রচুর পরিমাণে পানি খান
কিডনিকে ভালো রাখার একটি অন্যতম সহজ উপায় হলো পরিমিত পরিমাণে পানি খাওয়া। পরিমাণমত জল খেলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পানি আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেই যা কিডনির জন্য খুবই উপকারী ।
রক্তে শর্করার মাত্রা কমান
উচ্চ রক্তচাপ বা অতিরিক্ত শর্করা কোনটিই কিডনির জন্য ভালো না। এছাড়াও প্রতিদিন আমাদের নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করানো দরকার।। এবং তার সাথে রক্তের শর্করার মাত্রা সঠিক রাখার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চলা দরকার এবং প্রয়োজনে ওষুধ সেবন করতে হলে সেটিও করা উচিত।
ভিটামিন সি
কিডনি সমস্যা প্রতিরোধ করার জন্য ভিটামিন সি যুক্ত খাবারের কোন বিকল্প নেই। ব্রকলি, পালংশাক, লেবু, টমেটো এইসব সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা কিডনির যেকোনো সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন খাবারের তালিকায় ভিটামিন সি যুক্ত খাবার রাখা জরুরী ।
কিডনি রোগ প্রতিরোধে উপায়
কিডনি রোগ যেমন জটিল তেমনি এর চিকিৎসাও অনেকটাই ব্যয়বহুল। দীর্ঘ মেয়াদে কিডনি সমস্যার জন্য কিডনি প্রতিস্থাপন বা ডায়ালাইসিস ছাড়া কোন উপায় থাকেনা। এ দুটো চিকিৎসায় আমাদের দেশে প্রচুর ব্যয়বহুল । তাই ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে এবং আমাদের নিজেদেরকে সচেতনতার মাধ্যমে আমরা আমাদের কিডনিকে সুস্থ রাখতে পারি।
যেমন আমাদের বয়স ৪০ পার হওয়ার পরেই আমাদের নিয়মিত রক্তচাপ মাপা দরকার এবং প্রয়োজনমতো ওষুধ খাওয়া দরকার। রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিক রাখা জরুরি। নিয়মিত খাবারের শর্করা ঠিক রাখুন এবং রক্তে শর্করা মাপুন। সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা কিছুদিন পর পর ডায়াবেটিস পরীক্ষা করুন।
মনে রাখবেন , ডায়াবেটিস যেকোনো বয়সেই হতে পারে। যখন তখন ইচ্ছা হলে দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাবেন না। অনেক ওষুধ আছে যা কিডনির জন্য অনেক ক্ষতিকর। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই কোনো ওষুধ সেবন করবেন না । এছাড়াও ধূমপান কিডনিতে রক্ত চলাচল ব্যাহত করে। তাই ধূমপান একেবারে বর্জন করুন। সুষম খাদ্য অভ্যাস তৈরি করুন ।
প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খান এবং মোটা মাংস এড়িয়ে চলুন । প্রস্রাব লাগলে অনেক সময় আমরা আটকে রাখি। এ অভ্যাস থেকে বিরত থাকুন । প্রসাবে সংক্রমণ কমাতে বাথরুম সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।। প্রস্রাব কম হওয়া প্রস্রাব লাল হওয়া এসব লক্ষণ দেখা দিলে বসে না থেকে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হন ।
এছারাও আমরা অনেক সময় অনেকেই চর্বি কমানোর ওষুধ খেয়ে থাকে। যারা জটিল সমস্যায় ভুগছেন তারা চর্বি কমানো ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে খুবই সচেতন থাকুন।। কেননা চর্বি কমানোর ঔষধ কিডনির ব্যাপক ক্ষতি করে।
শেষ কথা
আশা করছি উপরোক্ত লেখার মাধ্যমে কিডনি রোগের লক্ষণ প্রতিকার সম্পর্কে আপনি সঠিক ধারণা পেয়েছেন। রোগ নিরাময় সচেতনতা অত্যন্ত জরুরী। তাই নিজে সচেতন এবং আপনার পরিবারের মানুষদেরও সচেতন নিশ্চিত করুন। আমার এই পোস্ট যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আজকে এ পর্যন্তই সকলে সুস্থ থাকুন এবং ভালো থাকুন সবাইকে এতক্ষন আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url