শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা,অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বর্তমানের স্মার্ট বাংলাদেশে ইন্টারনেট ছাড়া চলা অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অফিস আদালত থেকে শুরু করে শিক্ষা ক্ষেত্রেও ইন্টারনেটের ব্যবহার পিছিয়ে নেই। প্রিয় বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলে আমি আলোচনা করব শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে।
শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা,অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
ঘুম থেকে উঠা শুরু করে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় সব সময় কমবেশি আমরা ইন্টারনেটের ব্যবহার করে থাকি। ইন্টারনেটের বিশাল পরিধির জন্য আমাদের জীবন অনেকটা সহজ হয়ে গেছে। কারণ ইন্টারনেট হল একটি বিশাল তথ্য ভান্ডার।

ইন্টারনেট কি

ইংলিশ দুটি শব্দ ইথার এবং নেট থেকে ইন্টারনেট শব্দটি উৎপত্তি হয়েছে। যার যার অর্থ হলো অন্তর্জাল। সত্যিকার অর্থে গোটা বিশ্বে বিশাল নেটওয়ার্কের নাম হলো ইন্টারনেট। পৃথিবীর মাঝে বিদ্যমান এক একটি কম্পিউটার এর সাথে অন্য কম্পিউটার গুলোর বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্যে যে সমষ্টি সেটাই হলো ইন্টারনেট।

 যেখানে ইন্টারনেট প্রোটোকল বা আইপি নামের এক প্রামাণ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ডাটা আদান প্রদান করা হয়। ইন্টারনেটকে সাধারণত www বা world wide web নামে অভিহিত করা হয়। অর্থাৎ ইন্টারনেট হল সারা বিশ্বের ছড়িয়ে থাকা একটি নেটওয়ার্ক যার মাধ্যমে আমাদের বিশ্বের সমস্ত কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ গুলো সংযুক্ত থাকে।

ইন্টারনেটের জনক কে

আমরা কম বেশি সকলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকলেও অনেকেই জানিনা এই ইন্টারনেটের জনক কে। এ বিষয়ে আমাদের অনেকের মনের প্রশ্ন আসতে পারে। আসলে আধুনিক ইন্টারনেটের জনক হলেন Vinton Gray Cerf. তবে ইন্টারনেট আবিষ্কারের পেছনে অনেকেরই অবদান রয়েছে। এদের মধ্যে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি তারা হলেন Vinton Gray Cerf এবং রবার্ট কানের। আর এজন্যই এদেরকে ইন্টারনেটের জনক বলা হয়।

ইন্টারনেটের কাজ কি

ইন্টারনেটের প্রধান কাজ হল বিশ্বব্যাপী সমস্ত আন্তসংযুক্ত ডিভাইস গুলোর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের তথ্য আদান প্রদান করা। ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন রকম তথ্য যেমনঃ মেসেজ, ভিডিও, ছবি, অডিও ইত্যাদি পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যেকোন ডিভাইসে পাঠাতে পারি। চলুন ইন্টারনেটের প্রধান কাজ গুলো জেনে নিইঃ

যোগাযোগ

ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি এবং খুব সহজেই পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে অন্য ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে পারি। ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভিডিও অডিও চ্যাট ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা সহজেই অন্য যেকোনো কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারি।

বিনোদন

ইন্টারনেট হল বিনোদনের একটি বিশাল উৎস। যেখানে আমরা টিভি , সিনেমা ,গান, গেম ইত্যাদি উপভোগ করে থাকি।

ব্যবসা

ইন্টারনেট হল ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এখানে আমরা অনলাইনে বিভিন্ন পণ্য কেনা বেচার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে থাকে।

তথ্য

ইন্টারনেট হলো বিশ্বের সবথেকে বড় তথ্য ভান্ডার। এখানে আমরা যেকোনো ধরনের তথ্য খুঁজে পেতে পারি।

শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। তাই ভালোভাবে জীবন যাপন করতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। বর্তমান দুনিয়ায় কোন জায়গায় ইন্টারনেটের ব্যবহার হয় না এরকম সংখ্যা খুবই কম। সে সাথে শিক্ষাক্ষেত্র পিছিয়ে নেই।

ইন্টারনেট শিক্ষাকে করে তুলেছে সহজ এবং সাশ্রয়ী। ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় ঘরে বসে শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার বিশাল একটি বিপ্লব। শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের কয়েকটি সুবিধা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

বই সংগ্রহ করা এবং পড়া

আগেকার যুগে বই সংগ্রহ করে পড়া অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। হয় নিজে বই কিনে পড়তে হত আর না হয় লাইব্রেরীতে গিয়ে বসে পড়তে হতো। একটি মানুষের সংগ্রহে কয়টি বই থাকতে পারে! কিন্তু ইন্টারনেটের দুনিয়ায় কোন কিছুর অভাব নেই। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন লাইব্রেরী থেকে বই সংগ্রহ করে পড়া হয় যাকে বলা হয় ebook রিডার। 

পৃথিবীতে এমন কোন বই নেই যেটা ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায় না। নিজের পছন্দমত নাম লিখে সার্চ দিলে চলে আসে নিজের পছন্দের বই।ইচ্ছে করলেই যে কোন কম্পিউটার বা ল্যাপটপ অথবা মোবাইল ফোন দিয়ে বিভিন্ন লাইব্রেরী থেকে যেকোনো বই খুব সহজেই পড়া যায়।

অনলাইন ক্লাস পদ্ধতি

২০১৯-২০ সালের দিকে তাকালেই আমরা দেখতে পাই যে অনলাইন ক্লাস করার কতখানি গুরুত্ব রয়েছে। একমাত্র ইন্টারনেটই হল একটি মাধ্যম যার সাহায্যে ঘরে বসে খুব সহজেই শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো সম্ভব।

 করোনা কালীন সময়ে অনলাইন ক্লাসের পদ্ধতির না থাকলে পৃথিবীর শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক দুর্দশা হয়ে যেত। কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহার করে খুব সহজেই ঘরে বসে শিক্ষার্থীরা পাঠদান করতে পেরেছে।

বিনামূল্যে ক্লাস করার সুযোগ

ইন্টারনেট আবিষ্কারের পূর্বে যে কোন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করতে হলে অবশ্যই তাকে যেকোনো শিক্ষকের কাছে যেতে হতো। কিন্তু ইন্টারনেটের দুনিয়ায় একজন শিক্ষার্থী বাইরের না গিয়েও ইউটিউবে বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষকের ক্লাস দেখে তারা পাঠদান করতে পারে।

 এতে করে তার যাতায়াত ভাড়া এবং শিক্ষকের বেতন অনেক টাকা বেঁচে যায়। এছাড়াও যেকোন সমস্যার সমাধান করতে সার্চ করলেই একজন শিক্ষার্থী তার সমস্যার সমাধান পেয়ে যায়।

ভর্তি প্রক্রিয়া

ইন্টারনেট ব্যবহারের পূর্বে ভর্তি ফরম ফিলাপ ইত্যাদি কাজগুলোর জন্য আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বা অন্য শহরে স্কুল-কলেজে বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যেয়ে ফরম ফিলাপ করতে হতো কিন্তু এখন ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে এই প্রক্রিয়াগুলো এত সহজ হয়ে গেছে যে খুব কম সময়ে ঘরে বসেই এই কাজগুলো করা যায়।

বইয়ের বাইরে বিভিন্ন তথ্য

ইন্টারনেট এমন একটি মাধ্যম যেখানে মানুষ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পৃথিবী যে কোন প্রান্তের যে কোন খবর নিতে পারে। তেমনি শিক্ষার্থীরাও তার পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের যেকোনো বই ডাউনলোড করে সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে রীতিমতো একটি যুদ্ধ করতে হয় ।

 এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হলে শুধুমাত্র পাঠ্য বইয়ের বিষয় পড়লেই চলবে না অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে জানতে পারে।

পরীক্ষার ফলাফল দেখা

আগেকার দিনে যখন ইন্টারনেট ব্যবহার করা হতো না তখন পরীক্ষার ফলাফল দেখার জন্য তাকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো। অথচ এখনকার দিনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই খুব কম সময়ে তার ফলাফল গুলো দেখতে পায়।

শিক্ষা সফরে ইন্টারনেটের ব্যবহার

প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষা সফরে যাওয়ার আয়োজন করা হয়। আর সেসময় তাদের প্রতিষ্ঠান কোথায় নিয়ে যাবে সেটার জায়গা নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের জায়গা নির্বাচন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করে। গুগল ম্যাপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই লোকেশন বের করে তাদের পছন্দ জায়গা ঠিক করতে পারে।

মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তার

ইদানিং মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে বইয়ের বিভিন্ন বিষয়গুলো বাস্তব চিত্র তুলে ধরে পাঠদান করানোর ব্যবস্থা রয়েছে। গবেষণায় জানা গেছে, দৃশ্য-শ্রাব্য কনটেন্ট পড়াশোনা মনে রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। সেজন্যই ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যাপক অগ্রগতিকে কাজে লাগিয়ে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান বর্তমানে একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এছাড়াও মাল্টিমিডিয়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যবস্থা আরো সহজ সাবলীল করে তুলেছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের অপকারিতা

শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারে যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি অনেক অপকারিতাও রয়েছে। এবং শুধুমাত্র শিক্ষাক্ষেত্রেই নয় যে কোন ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত ইন্টারনেটের ব্যবহার আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইন্টারনেট ব্যবহারের কিছু অসুবিধা গুলো হলোঃ
  • অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারে আমাদের আসক্তি হয়ে যেতে পারে। এতে করে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়।
  • ইন্টারনেটের বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করে সাইবার বুলিং এবং বিভিন্ন হয়রানির শিক্ষার হতে হয়।
  • অতিরিক্ত ইন্টারনেটের ব্যবহার শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন চোখের চাপ, কোমরে ব্যথা, পিঠে ব্যথা হতে পারে। এটি মানসিক স্বাস্থ্যেরও ভীষণ ক্ষতি করে থাকে।
  • ইন্টারনেটে প্রচুর পরিমাণে তথ্য দেওয়া থাকে। যার মধ্যে কিছু ভুল বা বিভ্রান্তকর হতে পারে। শিক্ষার্থীদের অবশ্যই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে সক্ষম হতে হবে অর্থাৎ ভুল তথ্য নেওয়া যাবে না।
  • অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রকম গেমে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি হয়ে যাচ্ছে ফলে তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ কম থাকছে।
  • শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করার ফলে তাদের পড়াশোনা হুমকির সম্মুখীন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
আর একজন শিক্ষার্থীর যদি সঠিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার না করে তাহলে তার জীবনে নেমে আসতে পারে ব্যাপক দুর্জয়। এজন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। কেননা ইন্টারনেট ব্যবহারের যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি অপকারিতা ও রয়েছে।

শেষ কথা

বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। আর এই যুগে শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার একটি যুক্তিসম্মত বিষয়। প্রিয় পাঠক আশা করি শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে আপনারা একটি ধারণা পেয়েছেন।তবে ইন্টারনেট ব্যবহারে একটা শিক্ষার্থীকে নানা বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে।

 বিশেষ কোনো প্রয়োজন না থাকলে একজন শিক্ষার্থী যেন খুব বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারে সেই বিষয়ে তার অভিভাবককে দৃষ্টি দিতে হবে। তবে সঠিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করলে এর ক্ষতির থেকে উপকারী দিক বেশি। আজকে এ পর্যন্তই। দেখা হবে পরের কোন পোস্টে। সে পর্যন্ত সকলের সুস্থ থাকবেন এবং ভালো থাকবেন। এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url