ছোট বাচ্চাদের মধু খাওয়ার উপকারিতা এবং নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত জানুন

আপনার বাসায় কি একজন বারন্ত শিশু রয়েছে? যদি থেকে থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই জানেন যে, একটি শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য তার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা কতটা প্রয়োজন। সঠিক উপায় যত্নে নেওয়া, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো, প্রপার রুটিন ফলো করা আরো কত কি! কিন্তু মাত্র একটি উপাদান যা আপনার শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য ম্যাজিকের মত কাজ করবে।
ছোট বাচ্চাদের মধু খাওয়ার উপকারিতা এবং নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত জানুন
তাহলে বলি উপাদানটির নাম শুনলে হয়তো আপনিও অবাক হয়ে যাবেন। আর কিছু নয় সে উপাদানটি হলো মধু। প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমরা জানবো কিভাবে ছোট বাচ্চাদের মধু খাওয়াবেন এবং মধু খাওয়ানোর নিয়ম কি। আসুন তাহলে দেরি না করে জেনে নিই নিয়মিত বাচ্চাদের জন্য মধু খাওয়ার কি কি উপকারিতা আছে।

ভূমিকা

সব বাবা মায়ের চাই তার বাচ্চাদের সব সময় নিরাপদ এবং সুস্থ রাখতে। সেরা মানের খাদ্য নিশ্চিত করতে। বাচ্চাদের কোন খাবারটি দিলে তারা সুস্থ থাকবে তার গ্রোথ ঠিকমতো হবে এসব নিয়ে যেন বাবা-মায়ের চিন্তার শেষ নেই। তাইতো বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করে আছে একটি উপাদান খাঁটি মধু। আজকে এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। তাই আপনার বাচ্চা সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে আমার আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত থাকুন।

কোন বয়স থেকে বাচ্চাদের মধু খাওয়াবেন

আমরা কমবেশি প্রায় সকলেই জানি, মধু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী। বাচ্চা থেকে বয়স্ক ব্যক্তি সকলের জন্যই মধু অত্যন্ত উপযোগী। তবে বাচ্চাদের কোন বয়স থেকে মধু খাওয়ানো উচিত এটা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে। আমাদের দেশে প্রচলিত রয়েছে শিশু জন্মানোর পরপরই তার মুখে মধু দেওয়া। 

তবে বাচ্চার স্বাস্থ্যের পক্ষে এটা কতটা উপযোগী তা আমরা অনেকেই জানিনা। কোন বয়সী বাচ্চাদের মধু খাওয়ানো উচিত বা কিভাবে খাওয়ানো উচিত আবার মধুর উপকারিতা কি এগুলো খতিয়ে দেখার পর আপনার বাচ্চাকে মধু খাওয়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।এক বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের মধু খাওয়ানো যাবে না।

 কারণ একবারই কম বয়সী বাচ্চাদের মধু খাওয়ানোর ফলে ইনফ্যান্ট বটুলিজম হতে পারে। ছয় মাসের কম বয়সী বাচ্চাদের মধু দিলে বটুলিজম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ক্লষ্টিডিয়াম বটিলিনোম নামক এক ধরনের জীবাণুর আক্রমণে ইনফ্যান্ট বোটুলিজম হয়ে থাকে। এই জীবাণুটি মাটি, মধু দিয়ে তৈরি খাদ্য সামগ্রীতে থাকে। 

ফলে এই জীবাণু শিশুর অন্ত্রে প্রবেশ করে ব্যাকটেরিয়ায় পরিণত হয়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করে। এটি এমন এক ধরনের গুরুতর রোগ, যা দ্বারা আক্রান্ত হলে শিশুকে প্রায় ২৩ দিন পর্যন্ত ডেন্টিলেটরে রাখতে হয়। যদিও প্রাপ্তবয়স্কের মানুষের এবং বড় বাচ্চাদের শরীরে এটি আক্রান্ত হতে পারে না।

 শুধুমাত্র বারো মাস বা তার চেয়ে কম বয়সী বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরোপুরি থাকে না বলে এই ধরনের রোগে তারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। ইনফ্যান্ট বটুলিজম এর কারণে বাচ্চাদের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে, বাচ্চারা টেনে দুধ খেতে পারে না, এবং তাদের কান্নার শব্দ শোনা যায় না, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ আরো বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।

বাচ্চাদের মধু খাওয়ানোর উপকারিতা

ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর মধু

মধুতে থাকা অ্যামাইনো এসিড এনজাইম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ছাড়াও ভিটামিন বি এবং সি উপস্থিত। যা বাচ্চাদের বিকাশে অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়াও বাচ্চাদের খাবারে চিনির পরিবর্তে মধু মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।

সর্দি কাশি এবং গলার সমস্যা দূর করতে

বাচ্চার বয়স এক বা দেড় বছরের বেশি হলে তাদের সর্দি কাশি গলা ব্যথা এবং খুসখুসে কাশির সমস্যা থেকে স্বস্তি দিতে মধু খাওয়াতে পারেন। কারণ মধুর প্রকৃতি গরম হওয়ার জন্য সর্দি কাশি কম করতে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদেও গলা সমস্যা দূর করতে মধু খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।

বাচ্চাদের পর্যাপ্ত শক্তি যোগায়

মধুতে তিন ধরনের উপাদান থাকে। গ্লুকোজ সুক্রোজ এবং সুক্রোজ। আমাদের শরীর এই তিন ধরনের শর্করাকেই আলাদা আলাদা ভাবে ব্যবহার করে থাকে। গ্লুকোজ এবং সুক্রোজ তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায় ও রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেই। অন্যদিকে শরীরে দীর্ঘ সময় থাকে। যার ফলে বাচ্চাদের শরীরে স্থায়ী এবং ভারসাম্যযুক্ত শক্তির যোগান সম্ভব হয়।

লিভার সুস্থ রাখে

লিভারের রক্ষাকবচ হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে মধু। প্যারাসিটামল এর মত লিভারের ওপর কাজ করে থাকে। তাই শিশু অসুস্থ থাকলে তাকে ওষুধের পাশাপাশি মধু খাওয়াতে একদমই ভুলবেন না।

তাড়াতাড়ি ঘা নিরাময় করতে পারে

আমাদের অনেকের বাচ্চা আর হাত পা কেটে গেলে বা পুড়ে গেলে ভালো হতে চায় না। ক্ষতস্থানে মধু লাগাতে পারেন। ফলে ক্ষত জায়গা খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে। মধুতে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিবায়োটিক গুণ বিদ্যমান যা খুব দ্রুত শরীরের ক্ষত সারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পাচনতন্ত্র মজবুত রাখতে

বাচ্চার পেট খারাপ হলে বা পেট ফুলে গেলে বা গ্যাস জনিত সমস্যা দেখা দিলে মধু খাওয়াতে পারেন। কেননা মধু অন্ত্রে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তাই পেট সুস্থ রাখতে ছোট বাচ্চাদের মধু খাওয়ানো দরকার।

ত্বকের যত্নে মধু

শীতে আমাদের সবারই স্কিন রাফ হয়ে যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি পরিমাণে হয়। তাই আপনার বাচ্চার স্কিনকে সফট এবং হেলদি রাখতে প্রতিদিন গোসলের আগে অলিভ অয়েলের সাথে মধু মিশিয়ে মাসাজ করে দিতে পারেন। অলিভ অয়েল ত্বককে করে মসৃণ এবং মধু ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফলে আপনার বাচ্চার স্কিন সফট থাকবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আমরা জানলাম যে ছোট বাচ্চাকে মধু খাওয়ানোর উপকারিতা এবং কত বয়সের বাচ্চাদের মধু খাওয়ানো যাবে সে সম্পর্কে। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। আমার এই পোস্টটি ভাল লেগে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং আরো বিভিন্ন তথ্য পেতে আমার ওয়েবসাইটটি ফলো করবেন। আজকে এ পর্যন্তই। এতক্ষন আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url