শীতকালে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের তালিকায় কি কি রাখবেন বিস্তারিত জেনে নিন

রংবেরঙের সবজির জন্য শীতকাল আমাদের কাছে অনেকেরই খুব প্রিয়। ঠিক তেমনি ঠান্ডা আবহাওয়া সাথে শরীরকে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে এইসব রংবেরঙের বিভিন্ন সবজি।
শীতকালে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের তালিকায় কি কি রাখবেন বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জানব শীতকালে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের তালিকায় কি কি রাখবেন। চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।

ভূমিকা

শীতকালে আমরা অনেকেই ঠিক মতো নিজের যত্ন না নেওয়ার কারণে খুব বেশি অসুস্থ হয়ে যায়। আবার অনেকেই শুধু ত্বকের যত্ন নেই কিন্তু শরীরের কোন যত্ন নিতে পারে না। তাই শরীরের যত্ন নিতে প্রয়োজন স্বাস্থ্যসম্মত খাবার।

শীতের খাবার যা আপনাকে সতেজ রাখবে

শীতকালে শরীর সুস্থ রাখা বেশ কঠিন একটি কাজ বলা যায়। এই সময়ে আবহাওয়া ঠাণ্ডার কারণে ঠান্ডাজনিত সমস্যাসহ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা লেগেই থাকে। শরীর যত্নের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া দরকার। শীতের সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ঠান্ডা অথবা কাশির মতো রোগবালাই দূর করার জন্য শীতের খাবার হিসেবে খাদ্য তালিকায় গমের রুটি,দুধ, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখা উচিত।

 শীতের সময় শরীর গরম রাখতে অনেকেই চা কফি খাওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেই। এতে করে ঘুমের সমস্যা হয় খাবারের রুচি কমে যায় এবং বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দেয়। তাই অতিরিক্ত চা কফি না খেয়ে খাবারের তালিকায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখা উচিত। বাদাম বা খাবারের তালিকায় মাছ রাখলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকবে।

পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম,ব্যায়াম,কম মানসিক চাপ, আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উন্নত রাখতে সহায়তা করে। শীতের কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আবার ঐতিহ্যগত কারণে শীতে বিভিন্ন ধরনের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি অতিরিক্ত পিঠা খাওয়ার কারণে এবং শীতকালে কম হাঁটার কারণে আমাদের মধ্যে অনেকেরই ওজন প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায়।

 তাই সব খাবার খুব সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাইরের ত্বকের যত্ন যেমন প্রয়োজন তেমনি চাই ভেতর থেকেও সুস্থতা।দেখে নেওয়া যাক সেসব শীতের খাবারগুলো খেলে শরীর সতেজ থাকবেঃ

কমলা

শীতের সময় কমলা খুব ভালো একটি সাইট্রাস ফল। এর মধ্যে রয়েছে পরিমিত পরিমাণ ভিটামিন সি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট। এটি শীতকালে বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সহায়তা করে এবং সাথে সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

গাজর

গাজর একটি শীতকালীন ফল। গাজরের মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন। গাজর বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। শ্বসনতন্ত্রের সমস্যা কমিয়ে ফুসফুসকে সুরক্ষা দেই।

ডিম

ডিমের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড। রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং আয়রন।শরীরের বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধে ডিম কার্যকর। ডিমে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যেমন বি২, বি১২,ভিটামিন এ ও ই এবং আরো রয়েছে জিংক ফসফরাস এবং প্রয়োজনীয় মিনারেল। শীতের খাবার হিসেবে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিম রাখা উচিত।

কাঠবাদাম

কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলের সঙ্গে লড়াই করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

মাশরুম

মাশরুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শীতে ঠান্ডা ও ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে মাশরুম খুব উপকারী একটি খাবার। তাই শীতের খাবার হিসেবে আপনার খাদ্য তালিকায় অবশ্যই মাশরুম রাখতে পারেন। এছাড়াও মাশরুম তৈরি স্যুপ শীতের সময় বেশি খেতে পারেন।

মধু

জ্বর ও ঠান্ডা প্রতিরোধে মধু সব থেকে বেশি কার্যকর একটি উপাদান। শীতের খাবার হিসেবে তো মধু প্রত্যেক ঘরেই থাকা উচিত। মধুর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা আমাদের শরীরের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে। চিনির পরিবর্তে মধুর ব্যবহার করতে পারেন।

সবুজ পাতার সবজি

শীতকাল মানে হরেক রকমের সবজির চাষ। শীতের সময় প্রত্যেক দিনের খাদ্য তালিকায় সবুজ শাকসবজি রাখুন। এছাড়াও হালকা হলুদ ও ফ্যাকাশের সবুজ পাতা বা শাঁকে প্রচুর পরিমাণ ফোলের থাকে যা গর্ভবতী মা এবং বাড়ন্ত শিশুর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শীতের সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা পলিস্যাকারাইড নামের শর্করা।

 সাধারণত হালকা সিদ্ধ করা সবজিতে পরিপূর্ণ পুষ্টি পাওয়া যায়। তবে সবজি সিদ্ধ করে পানি ফেলে দেওয়া যাবে না। রান্নার সময় চেষ্টা করতে হবে সবজির রং যেন নষ্ট না হয়। এই সবুজ রঙের সবজির মধ্যে রয়েছে পুঁইশাক, বাঁধাকপি, পালং এবং লাল শাক ইত্যাদি।

মুলা

আমাদের মধ্যে অনেকেই মূলা খেতে একদমই পছন্দ করেন না। কিন্তু মুলার উপকারিতা শুনলে আপনি নিজেই অবাক হয়ে যাবেন। মুলাই রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং কপার। যা আমাদের হজম প্রক্রিয়া ভালো রাখে।

 মুলা রক্ত পরিশোধন করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যেতে সাহায্য করে। মুলা জন্ডিসের চিকিৎসায় বেশ উপকারী। কারণ এটি রক্তে বিরিলুবিন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং শরীরের অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। মূলা এমনিতেও খাওয়া যায় আবার রান্না করেও খাওয়া যায়। আমাদের কিডনি ভালো রাখে মুলা।

শিম

শীতকালের একটি জনপ্রিয় খাবার শিম। ভাজি বা রান্না করে বিভিন্নভাবে আমরা শিম খেতে পছন্দ করি। শিমে রয়েছে বিভিন্ন খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন সি ও জিংক। আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। আর নিয়মিত শিম খেলে আমাদের চুল পড়া কমে এবং ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে।

মিষ্টি আলু

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি খাবার মিষ্টি আলু। মিষ্টতা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। হার্ট ও ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। এছাড়াও ডায়াবেটিস টাইপ টু ঝুঁকি কমায় ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে দূরে রাখে।

টক জাতীয় ফল

শরীরে ফাইবার বা আঁশের ঘাটতি পূরণ করতে এবং ভিটামিন সি এর যোগান দিতে শীতের সময় বেশি করে টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। বড়ই কমলা পেয়ারা লেবু এগুলো হতে পারে ভিটামিন সি এর উৎস। তাই শীতকালে টক জাতীয় ফল এড়িয়ে চলবেন না।

মুরগির কলিজা

মুরগির কলিজা খেতে অনেকেই খুব পছন্দ করেন। এই খাবার শীতের সময় আপনার জন্য আরও বেশি উপকার। ভিটামিন বি সিক্স ছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ফোলেট।

সুপ

শীতে শরীর সুস্থ রাখতে খুব দারুণ উপকারী। শীতের বিকেলে বার রাতের খাবারের সাথে গরম গরম ধোঁয়া ওঠা একবাটির সুপ একদমই মন্দ নয়। শীতের সময় নানা রকম সবজি দিয়ে বানিয়ে খেতে পারেন সুপ।।

ঘি

ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকেই ঘি এড়িয়ে চলেন। কিন্তু অন্যান্য স্নেহ পদার্থের তুলনায় ঘি অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। ঘিয়ে থাকে বিভিন্ন রকমের পুষ্টি উপাদান যা আমাদের অস্থিসন্ধির সক্ষমতা বজায় রাখার সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক সুন্দর রাখে।

লাল ক্যাপসিকাম

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার লাল ক্যাপসিকাম। এতে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি এবং পাশাপাশি বিটা ক্যারোটিন। তাই খাবারের তালিকায় লাল ক্যাপসিকাম রাখতে পারেন।

শেষ কথা

শীতকালে আমাদের খাবার খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়। তাই খুব বেশি মসলাদার খাবার গুলো এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়াও শীতকালে খুব একটা ব্যায়াম না করার ফলে অনেকেরই ওজন বেড়ে যায় সেদিকে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে। সব খাবারের নিয়ম অনুসারে স্বাভাবিকভাবে খাওয়া উচিত।

 প্রিয় পাঠক আশা করি উপরের বিষয়গুলো আপনারা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাই এই শীতকালে নিজের যত্ন খুব ভালোভাবে নিবেন। আজকে এ পর্যন্তই। সবাই সুস্থ থাকবেন এবং ভালো থাকবেন নিজের যত্ন নিবেন। এতক্ষণ আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url