মাথাভর্তি খুসকি ও চুলকানি দূর করতে কি করবেন বিস্তারিত জেনে নিন
অনেক মানুষ জীবনের বিভিন্ন সময় খুশকির সমস্যায় ভুগেন। জীবনের কোন না কোন এক সময় হলেও এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জানবো মাথা ভর্তি খুশকি ও চুলকানি দূর করতে কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করবেন।
সঠিক সময় কিছু সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে আমাদের মাথার খুশকি চিরতরে দূর হয়ে যেতে পারে। আজকে সেগুলো বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন তাহলে দেরি না করে শুরু করি।
ভূমিকা
বিভিন্ন রকম সমস্যার কারণে আমাদের মাথায় খুশকি বা চুলকানি দেখা দেয়। বিশেষ করে শীতকালীন সময় খুশকি সমস্যা বেশি হয়ে যায়। আবার অনেকের খুশকি থেকে চুলকানি হয়ে যায়। সঠিকভাবে আমাদের চুল এবং মাথার ত্বকের যত্ন করতে পারলে এ ধরনের সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যায় খুব তাড়াতাড়ি।
খুশকি কেন হয়
খুশকি খুব স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। যখন মাথার ত্বকের মৃত কোষগুলো ঝরে পড়ে, সেগুলোকে আমরা খুশকি বলি। শীতকালে খুশকির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। কারণ শীতকালে আদ্রতার কারণে চামড়া শুকিয়ে যাই এবং পুরনো চামড়া উঠে নতুন চামড়া তৈরি হতে থাকে। আর এই মৃত চামড়া বা কোষগুলোকে আমরা খুশকি হিসেবে দেখতে পায়।
শুধু শীতকালে নয় বছরের অন্যান্য মৌসুমেও খুশকির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। বর্ষাকালে ফাং গাছের সংক্রমণ বেশি হয়। তাই এই সময় পরিমাণ একটু বেশি দেখা যায়। এছাড়াও বেশ কয়েকদিন চুল না ধরলে বা মাথার ময়লা পরিষ্কার না করলে মাথার ত্বক ঘেমে থাকলে সেখান থেকে ফাঙ্গাস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে থাকে। এছাড়াও নিম্নমানের পণ্য ব্যবহার করার ফলে মাথার ত্বক তার নিজস্ব গুণাগুণ হারিয়ে ফেলে।
খুশকি চুলের কি ধরনের ক্ষতি করে
আমাদের চুলের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর খুশকি। আর এটার জন্য বিভিন্ন রকম সমস্যা হয়ে থাকে আমাদের। মাথার ত্বকের চুলকানি থেকে শুরু করে ঘা হয়ে যায়। অতিরিক্ত চুলকানির ফলে চিরুনি বা নখের আঁচড়ে আমাদের মাথার অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। এ সময় আমাদের চুল রুক্ষ হয়ে যায়। এ ধরনের সমস্যা থেকে আমাদের চুল পড়ে যায়।
কোথায় কোথায় হতে পারে খুশকি?
খুশকি আমাদের শরীরের যেকোনো জায়গায় হতে পারে। সাধারণত মাথার ত্বকে, চোখের পাপড়িতে এবং ভুরুতে খুশকি হয়ে থাকে।
চোখের পাতা বা ভুরুতে খুশকি
অনেক সময় চোখের পাতা বা ভুরুতে সাদা সাদা হয়ে খুসকি বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়ে থাকে। যাদের মাথায় বেশি খুশকি তাদের ভ্রু বা চোখের পাতাতেও এ ধরনের খুশকি দেখা যায়। এক্ষেত্রে মাথার খুশকি নিয়ন্ত্রণে থাকলে অন্যান্যগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হলে চোখ লাল, জ্বালাপোড়া, পানি ঝরা ইত্যাদি সমস্যা গুলো হতে পারে। এক্ষেত্রে নিজের প্রতি বেশী যত্নবান হয় হলে এ ধরনের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
মাথা ভর্তি খুশকি ও চুলকানি দূর করতে করণীয়
বিভিন্ন প্রফেশনাল বিউটি ক্লিনিকগুলো খুশকিরোধে কেমিক্যাল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কেমিক্যাল প্রোডাক্টগুলো খুশকি রোধে দারুন কার্যকর। তবে খুশকি রোধ করতে শুধু ক্লিনিক্যাল ট্রিটমেন্ট করলেই হবে না এর সাথে সাথে আমাদের ঘরোয়া কিছু টিপস ফলো করতে হবে। চলুন তাহলে জেনে নেই কি সেই টিপসগুলোঃ
ঘরোয়া সমাধান
কয়েকটা নিম পাতা গুড়ো করে নিন। অলিভ অয়েল বা নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মাথায় দিয়ে রাখুন। ঘন্টাখানেক পরে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে এক মাস ব্যবহার করতে থাকুন আপনার খুশকি অনেকটা কমে যাবে।
- পেঁয়াজের রস মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
- একটা চামচ পাতি লেবুর রস সাথে একটুখানি কমলালেবুর রস করে মিক্স করে মাথায় লাগিয়ে রাখুন।তারপর ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটি অনেক ভাল কার্যকরীতা দিবে।
- সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন চুলের শ্যাম্পু করে চুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
- বর্তমান দেশের অনেক জনপ্রিয় একটি উপাদান হল ভিনেগার। অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মাথার ত্বকের শুষ্ক কোষগুলো সরাতে সাহায্য করে। দেড় কাপ পানির সঙ্গে আধা কাপ আপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে চুল পরিষ্কার করার পরে মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে রাখুন।
মাথার খুশকি ও চুলকানি দূর করতে তেলের ব্যবহার
অর্গান অয়েল
চুল এবং মাথার ত্বক ভালো রাখতে অর্গান অয়েল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রথমে সামান্য তেল নিয়ে মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এমনভাবে তেল ব্যবহার করুন যাতে পুরো চুলের গোড়ায় ভালোভাবে পৌঁছায়। এভাবে সারা রাত রেখে দিন এবং সকালে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
পিপারমেন্ট অয়েল
পিপারমেন্ট অয়েল এর কাজ হল ত্বক শীতল রাখা। তাই মাথার ত্বকে নিয়মিত এর তেল ব্যবহার করলে মাথা ঠান্ডা থাকে। পাশাপাশি ধরে রাখে মাথার আদ্রতাও। পরিষ্কার তুলার মাধ্যমে মাথার ত্বকে এই তেল লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর শ্যাম্পু করে নিন।
অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েল উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের কম বেশি সবারই ধারণা রয়েছে। আমাদের ত্বক এবং চুলের উভয়ের যত্নে এই তেল ভীষণ উপকারী। কয়েক চামচ তেল নিয়ে গরম করে ভালোভাবে চুলের উপরে লাগিয়ে রাখুন।
ট্রি ট্রি ওয়েল
কিছুদিন আগে আমাদের অনেকেই কোন ধারণা ছিল না। কিন্তু যারা সৌন্দর্যচর্চায় নিত্য নতুন উপাদান নিয়ে ঘাটাঘাটি করেন এবং সেগুলো ব্যবহার করেন তারা এই তেল নিয়ে খুব ভালো করে জানেন। ট্রিটি অয়েল প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাসনাশক চুলের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। যে কোন তেলের সাথে এই তেল মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করলে কয়েকদিনের মধ্যে খুশকি প্রকোপ দূর হয়ে যায়।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক মাথা এবং চুলকানি দূর করতে কি কি করবেন সেগুলো নিয়ে আমরা এতক্ষন ধরে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। । আশা করি আজকে আর্টিকেলটি থেকে আপনারা সকলে উপকৃত হবেন। আজকে পর্যন্তই সকলে ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। আর এতক্ষণ আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। দেখা হবে পরের কোন আর্টিকেল নিয়ে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url