শীতকালে ত্বকের খসখসে ভাব দূর ও হাত পায়ের চামড়া উঠলে করণীয়

শীতকাল চলে এসেছে। শীতকাল কারোর কাছে অনেক ভালো আবার কারোর কাছে অনেক কষ্টের একটি ঋতু। কেউ কেউ শীতকালে অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে যায়, আবার কেউ ঠিকঠাক মতো ত্বকের যত্ন করতে পারে না, আবার কারোর এলার্জি সমস্যা বেশি হয় ইত্যাদি। প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জানবো কিভাবে শীতকালের ত্বকের খসখসে ভাব দূর করব এবং হাত পায়ের চামড়া উঠা বন্ধ করব।
শীতকালে ত্বকের খসখসে ভাব দূর ও হাত পায়ের চামড়া উঠলে করণীয়
অন্য কোন ঋতুর থেকে শীতকালে আমাদের ত্বকের হাত পায়ের যত্ন একটু বেশি পরিমাণে করতে হয়। না হলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা এবং সাথে হাত পায়েরও চামড়া ওঠার বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা যায়। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই সমস্যাগুলো থেকে সমাধান পাওয়ার উপায় গুলো কি ।

ভূমিকা

উত্তরের হাওয়া জোরালোভাবে বইতে শুরু করে দিয়েছে। চলে এসেছে শীত। রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডিসেম্বরে এসেছে সপ্তাহ জুড়ে মাঝারি প্রবাহ। শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের বেড়ে যাবে বিভিন্ন রকম ভোগান্তি। এ সময় সুস্থ থাকার জন্য আমাদের দরকার বাড়তি সতর্কতা। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক এই শীতকালীন সময়ে আমরা আমাদের নিজেদের যত্ন কিভাবে নিতে পারি।

শীতকালে হাতের চামড়া ওঠার কারণ

শীতকালের দেখা যায় কমবেশি আমাদের সবারই প্রায় হাতে চামড়া উঠেছে। এই চামড়া উঠাকে ডাক্তারের ভাষায় বলা হয় ক্যারাটোলাইসিস । ফোসকা পড়ার মতো করে চামড়া উঠে যায়। এটি দেখতেও যেমন খারাপ লাগে তেমনি ভোগান্তিও পোহাতে হয়। অনেকের শুধু হাতেরই না পায়ের চামড়া ও উঠে থাকে। শীতকালে বাতাসের আদ্রতার পরিমাণ কম থাকে ফলে সমস্যাগুলো দেখা দেই। খাওয়া দাওয়া করতেও ভীষণ রকম অসস্তিতে পড়তে হয়। এই সমস্যাগুলো থেকে রক্ষা পেতে আমরা ঘরোয়া কিছু সমাধান পেতে পারি। সেগুলো হলঃ

গরম পানি ও কাঁচা দুধ

হাফ কাপ গরম পানির সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে হালকা গরম করে তুলা ভিজিয়ে হাত-পায়ের যে জায়গা গুলোতে চামড়া উঠে গেছে সেগুলোতে লাগিয়ে রাখুন। এতে করে হাত পা নরম থাকে। কিছুদিন এটি করে দেখুন আপনার হাত পায়ের চামড়া ওঠা অনেকাংশে কমে আসবে।

লেবুর রস ও গোলাপজল

গোলাপ জল লেবুর রস এ দুটি উপাদান একসাথে মিশিয়ে হাত ও পায়ের নির্দিষ্ট অংশে লাগিয়ে রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে সুন্দর ভাবে ধুয়ে ফেলুন এবং তারপর ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে দিন। এতে করে হাত পা নরম থাকবে।

গুড়া দুধ চিনি এবং অলিভ অয়েল

একসাথে এই তিনটি জিনিস ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর কিছুক্ষণ হাত ও পায়ে চামড়া জায়গায় লাগিয়ে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখার পরে আলতো ভাবে ঘষে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর মশ্চারাইজার লাগাতে হবে। সপ্তাহে একদিন এই পদ্ধতি অবলম্বন করবেন।

গোসলের আগে অলিভ অয়েল

অলিভ অয়েল আমাদের চুল এবং ত্বকের জন্য ভীষণ উপকারী। প্রতিদিন গোসল করার আগে অলিভ অয়েল লাগিয়ে রাখবেন। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন উপকারী ফ্যাটি এসিড। অলিভ অয়েল না থাকলে নারকেল তেল লাগাতে পারেন। এই তেল গোসলের আগে এবং পরে নিয়মিত কয়েকদিন লাগালে হাত ও পায়ের চামড়া উঠা বন্ধ হয়ে যাবে।

গরম পানি

গরম পানির মধ্যে এক প্যাকেট শ্যাম্পু এবং হালকা লবণ দিয়ে 10 থেকে 15 মিনিট হাত পা ডুবিয়ে রেখে দিন। তারপর ব্রাশ দিয়ে আলতো করে নাড়া দিন দেখবেন হাত পায়ের মরা চামড়া উঠে যাবে।

এছাড়াও হাত পায়ে যত পানি কম লাগানো যায় ততই ভালো। গোসল করে এসে বা রান্নাঘর থেকে কাজ করে এসে তাড়াতাড়ি হাত পা মুছে ফেলুন।

ত্বকের খসখসে ভাব দূর করা

শীতকালে কমবেশি প্রায় সকলের ত্বক এবং পায়ের গোড়ালি ফেটে যায়। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের চর্ম ও যৌন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা খাতুন বলেন, শীতে কারোর কারোর খুবই বেশি পরিমাণে ত্বক ফেটে যায়। এ ত্বক ফেটে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তার মধ্যে  অন্যতম সমস্যা হতে পারে তার জন্মগত কারণ। আবার কারো কারোর বিভিন্ন অসুখের জন্য ত্বক ফাটতে পারে। তবে নিয়মিত মশ্চারাইজার লাগানোর পরেও ত্বক ফাটলে অবশ্যই বুঝতে হবে তার কোন সমস্যা রয়েছে। অনেকে যারা বিশেষ করে বাগানে বা কৃষি কাজ করেন তাদের খুব বেশি ত্বক থাকতে পারে। ভিটামিন এ ও বি এর  অভাব হলে ত্বক ফাটে। অনেকের আবার সমস্যার কারণে ত্বক ফাটে। ত্বকের খসখসে ভাব দূর করার জন্য কয়েকটি উপায় অবলম্বন করতে পারেন। সেগুলো হচ্ছেঃ
  1. ভালোভাবে মশ্চারাইজার লাগাতে পারেন।
  2. নরম সুতি কাপড় ব্যবহার করতে পারেন।
  3. ঘুমাতে যাওয়ার আগে অলিভ অয়েল লাগিয়ে রাখতে পারেন।
  4. প্রচুর পানি পান করবেন যাতে করে ত্বক তরতাজা থাকে।

শীতকালে অসুস্থ হলে করণীয়

শীতের তীব্রতা যত বাড়তে থাকে অসুস্থ তার সাথে তত বাড়তে থাকে। তবে বেশিরভাগ সময়ই সর্দি কাশি এলার্জি হাত-পা ব্যথা শ্বাসকষ্ট গলা ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা গুলো বেশি দেখা যায়। এসব সমস্যা কোন ভয়াবহ সমস্যা নয়। ঘরোয়া কিছু উপায় এ সমস্যাগুলোর সমাধান করা যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক  কিভাবে আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে পারি। 
  1. কুসুম গরম পানি করে তার মধ্যে লেবুর রস এবং মধু দিয়ে খেতে পারি। ভিটামিন সি এবং মধুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের দেহকে সুরক্ষা করে।
  2. ঘন ঘন আদা চা খেতে পারি।
  3. তুলসী পাতার রস মধু দিয়ে খাওয়া খুব উপকারী এতে করে আমাদের খুশখুসে কাশি দূর হয়ে যাবে।
  4. এছাড়াও সর্দি কাশি সারতে কালোজিরা ভর্তা, সরিষা ভর্তা ইত্যাদি খুব উপকারী।

ডিহাইড্রেশন

আমাদের মধ্যে শীতকালে অনেকেই পানি কম খেয়ে থাকে। ফলে তাদের ডিহাইড্রেশন হয়ে থাকে। এডিহাইড্রেশনের ফলে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেই। যেমন দুর্বলতা, মাথাব্যথা, মুখের ভেতরে শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। তাই শীতকালে পানি কম না খেয়ে সঠিক পরিমাণে খাওয়া উচিত। এতে করে আমরা সুস্থ থাকতে পারবো। ডিহাইড্রেশনের ফলে আমাদের মস্তিষ্কের তৈরি হওয়ার শক্তির মাত্রা কমে যায়। অ্যাজমার টান উঠলে পানি খেলে আরাম পাওয়া যায়। এছাড়াও পানি আমাদের শরীরের বজ্র পদার্থগুলোকে বের করে দেয় । মায়ের বুকের দুধ তৈরি হওয়ার জন্য নিয়মিত পানি খাওয়া দরকার।

শীতকালে ঠোঁটের যত্ন

শীতের সময় আমাদের ঠোঁট শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়। এ সময় আমরা অনেকেই লিপবাম ইউজ করে থাকি। কিন্তু তারপরেও ঠোঁটের শুষ্কতা দূর হয় না। এরকম পরিস্থিতি হলে লিপবামও হতে পারে ক্ষতির কারণ। কেননা লিপবামে থাকা এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের ঠোঁটের শুষ্কতা আরো বাড়িয়ে দেয়। 
এছাড়া যাদের ত্বক অতি সংবেদনশীল তাদের লিপবাম কেনার সময় উপাদান গুলো দেখে কেনা উচিত। আবার শুষ্ক ঠোটের অন্যতম এক সমস্যা হলো পানি শূন্যতা। তাই আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়া দরকার। আবার ভিটামিনের অভাবেও এরকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন ভিটামিন বি টুয়েলভ কোষের বৃদ্ধি ও সেরে উঠাতে সাহায্য করে।

 এই ভিটামিনের অভাবে মুখে অনেক সময় শুষ্কভাব তৈরি হয়। কিন্তু ভিটামিন বি আমাদের দেহ বেশি সময় ধরে রাখতে পারে না। তাই প্রতিদিন খাবারের মাধ্যমে এই ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করতে হয়। আবার অনেকের গরমের মধ্যেও ঠোঁটে শুষ্কতা দূর হয় না। এই সমস্যার অন্যতম কারণ হচ্ছে সূর্যের আলো। রোদে পোড়া শুধু দেহ নয় মুখেও হতে পারে। 

আর দেহের চেয়ে মুখে রোদ পরেও বেশি আবার ক্ষতিও হয় বেশি। সূর্যের অতি বেগুনের রশ্মির সংস্পর্শে আমাদের ঠোঁটের রং নষ্ট হয়ে যায় ঠোটের চামড়া নষ্ট হয়ে যায় বা বিভিন্ন প্রদাহ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। তাই লিপবাম ব্যবহারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

শীতকালে হাতের চামড়া কুঁচকে যাওয়া

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের খুব অল্প বয়সে হাতের চামড়া বয়স্কদের মতো কুঁচকে যায়।এবং এটি সবথেকে বেশি হয় শীতকালে। ফলে দেখতে বয়স্কদের মত লাগে। এ সমস্যা থেকে সমাধান পেতে নিজের কিছু ঘরোয়া টিপস ফলো করতে পারেন।
  1. অলিভ অয়েল তেলের সাথে খুবই সামান্য পরিমাণ চিনি নিয়ে হাতে মাসাজ করতে থাকুন। চিনি না গলা পর্যন্ত মেসেজ করতেই থাকুন। এরপর চিনি গলে গেলে সামান্য কুসুম গরম পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন এবং তারপর মশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
  2. আপনার হাতকে যদি নরম এবং কোমল রাখতে চান তাহলে সামান্য টক দই এবং দুই চামচ বেসনের পেস্ট করে হাতের ওপর 10 থেকে 12 মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর পরিষ্কার করে হাত ধুয়ে ফেলুন। এতে করে হাত খুব সুন্দর নরম এবং কোমল থাকবে।
  3. হাতের রং ফর্সা করতে দুই চামচ পাতি লেবুর রসের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে হাতের উপর লাগিয়ে রাখুন। দুই থেকে তিন মিনিট রাখার পরে ভালোভাবে মাসাজ করুন। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। এটি সপ্তাহে তিন থেকে চারবার ব্যবহার করতে পারেন।এতে করে আপনার হাতের রং উজ্জ্বল হবে।

শেষ কথা

আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমরা শীতকালে ত্বকের খসখসে ভাব দূর করার জন্য এবং হাত পায়ের চামড়া নরম এবং কোমল রাখার জন্য বিভিন্ন টিপস জানতে পারলাম। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। শীতকালে নিজের যত্ন নিন এবং আপনার পরিবারেরও যত্ন নিন। আজকে এ পর্যন্তই, সকলে সুস্থ থাকবেন এবং ভালো থাকবেন। আর এতক্ষণ আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url