প্রতিদিন কত কাপ চা পান করা উচিত? গ্রীন টি কেন খাবেন?
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাদের অনেকের চায়ে চুমুক না দিলে হয় না। আবার অনেকেরই দিনে একাধিক বার চা পান করার অভ্যাস রয়েছে।কখনো কি ভেবে দেখেছেন আমাদের আসলে দিনে ঠিক কতটুকু পরিমান চা খাওয়া উচিত? আসলে বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন তিন কাপের বেশি চা খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
ভূমিকা
প্রতিদিন একাধিক পরিমাণ চা আমাদের শরীরে আয়রনের শোষণ মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং একই সঙ্গে ডেকে আনে মানসিক চাপ। এমনকি একাধিক চা পান করা আমাদের অনিদ্রার কারণ হতে পারে। আবার কারো কারো বমি বমি ভাব বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। অনেকেরই আবার মাথা ঘোরা বা মাথাব্যথা সমস্যা দেখা দেয় ।
চিনি এবং দুধ দিয়ে চা পান করা
তাদের অনেকের ই দুধ চা খাওয়ার প্রচুর পরিমাণে অভ্যাস রয়েছে। অনেকে আবার দীর্ঘমেয়াদি চায়ের সাথে চিনি খাওয়ার ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এর পরিবর্তে আপনি লেবু চা বা আদা চা খেতে পারেন।
কত কাপ চা পান করা উচিত
এটি সব থেকে একটু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যে দিনে আমরা কত কাপ চা খেতে পারি। কত কাপ চা খেলে আমাদের শরীরের কোন ক্ষতি হবে না। হেলথ কেয়ার অনুসারে আপনি প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ কাপ বা ৭১০ থেকে ৯৫০ মিলি চা পান করতে পারেন। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা দিনে দুইবার বা তার বেশি চা পান করে তাদের মৃত্যুর হার যারা অ্যালকোহল পান করে তাদের তুলনায় ৯ থেকে ১৩ শতাংশ কম।
অত্যাধিক চা পান করলে কি হবে
হেলথ লাইন রিপোর্ট অনুযায়ী চায়ের বহু বহিঃস্থ রয়েছে যার কারণে এটি ঐতিহ্যবাহী ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয় বা হয়ে আসছে। অনেকে ক্লান্ত বা মাথাব্যথা হলে চা খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু এই পছন্দের জিনিস অত্যাধিক বেশি হয়ে গেলে আমাদের জীবনে অনেক রকম সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত চা পান করার ফলে আমাদের শরীরের জলের শূন্যতা এসিডিটি উচ্চ রক্তচাপ বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যা, বুক জ্বালাপোড়া এবং তার সাথে অন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে। তাই অতিরিক্ত চা পান করলে একজন সুস্থ ব্যক্তিও খুব তাড়াতাড়ি অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
শরীরে আয়রন শোষণ ক্ষমতা কমায়
এক গবেষণায় পাওয়া গেছে চায়ের মধ্যে পাওয়ার ট্যানিন প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করার ফলে আমাদের শরীরের আয়রন চুষে নেই। যা আয়রন শোষণের ক্ষমতা ৬০% পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে যা আমাদের শরীরের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
ওষুধের প্রভাব কমিয়ে দেয়
পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেছে যে অতিরিক্ত চা খাওয়া কিছু এন্টিবায়োটিক এর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। এছাড়াও কেমো থেরাপির ঔষধ এবং গর্ভনিরোধ ওষুধের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
মাথা ঘোরা
চায়ের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন। এই অতিরিক্ত ক্যাফেইনের ফলে আমাদের মাথা ঘোরার সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই কেউ যখন অতিরিক্ত চা পান করে তখন তার এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
গর্ভাবস্থায় জটিলতা
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে চা পান করা ক্যাফেইনের ঝুঁকি অনেকটা বাড়িয়ে দেই। এটি গর্ভপাত এবং শিশু জন্মের ওজন হতে পারে। তাই প্রত্যেকটি গর্ভবতী মহিলাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি চা পান করা উচিত নয়।
আপনি জানেন কি দুধ চা না খেয়ে কেন গ্রিন টি খাবেন?
গ্রিন টি অবশ্যই একটি জনপ্রিয় পানীয়। আপনার সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে অবশ্যই এক কাপ চা খাবেন। তবে যদি খেতে হয় তাহলে গ্রিন টি খাবেন।
কেন গ্রিন টি
গ্রিন টিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্লেভনয়েড নামক একটি উপাদান যা এ ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি এমন একটি শক্তিশালী উপাদান যা আমাদের শরীরের সব সময় তরতাজা রাখে। এবং গ্রিন টি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া গ্রিন টি তে রয়েছে ভিটামিন ই ও সি।
ওজন কমাতে গ্রীন টি
গ্রিন টি খেলে আমাদের শরীরের ওজন কমে যায়। এছাড়াও এটি আমাদের হজম শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে। শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমায়। গ্রিনটিতে উপস্থিত মেটাচিন নামক এক ধরনের পদার্থ যা আমাদের শরীরে মেদ ঝরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই অতিরিক্ত ওজন কমাতে নিয়মিত গ্রিন টি খেতে পারেন।
কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি
সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ গ্রিন টি পান করলে আপনি দেখবেন সারাদিন আপনার শরীর সতেজ থাকবে। এটি শরীরের স্টেমিনা তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি করে, তাই সারাদিন আমরা সতেজ থাকতে পারি।
গ্রিন টি খেলে কি সবাই শুকিয়ে যায়
গ্রিন টি খেলেই আপনি শুকিয়ে যাবেন এই ধারণা আমাদের অনেকের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু এটা আমাদের একটি ভুল ধারণা। এর মধ্যে রয়েছে এক্সট্রা এন্টি অক্সিডেন্ট যার নরমাল চায়ে থাকে না।
ক্যান্সার প্রতিরোধে
গ্রিন টি বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার যেমন কিম ক্যান্সার লাঞ্চ ক্যান্সার লিভার ক্যান্সার গলব্লাডার ক্যান্সার ইত্যাদি প্রতিরোধে সাহায্য করে ।এটি গ্রিন টির একটি বড় গুণ।
ত্বকের যত্নে গ্রিন টি
চর্ম রোগের চিকিৎসায়, ত্বকের সুরক্ষায়, সৌন্দর্য ঠিক রাখতে গ্রিন টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া রোধ করে। ত্বককে রক্ষা করে সূর্যকিরণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে। ত্বকের পুড়ে যাওয়া ভাব দূর করে এই গ্রিন টি। মেস্তা ফুসকুড়ি ব্রণ ইত্যাদি রোধেও গ্রিন টি সাহায্য করে।
গ্রিন টি এর ক্ষতিকর প্রভাব
গ্রিন টি আমাদের জন্য খুবই উপকারী। তবে অতিরিক্ত কোন কিছুই আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয়। গ্রিন টি ও তার ব্যতিক্রম নয়। এটি বেশি পান করলে শরীরে নানারকম জটিলতা সৃষ্টি হয়।
মাথা ব্যথা
গ্রিনটিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফিন । যার ফলে মাথা ব্যথা হতে পারে। তাই অতিরিক্ত গ্রিন টি পান থেকে বিরত থাকুন।
হার্টের ক্ষেত্রে
গ্রিন টি হার্টের জন্য খুব ভালো। এটি হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তবে এটি বেশি পান করলে হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হতে পারে। তাই আমাদের অতিরিক্ত গ্রিন টি পান থেকে বিরত থাকতে হবে।
গ্রিন টি কতটা খাওয়া প্রয়োজন
পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে এই গ্রিন টি। গ্রিন টি অনেক উপকারী। এর উপকার গুলো পেতে দিনে তিন থেকে চার কাপ গ্রিন টি পান করুন। এর বেশি পান করতে গেলে এর উপকারিতা পাবেন না।
শেষ কথা
প্রিয় বন্ধুরা, আজকে আমরা জানলাম গ্রিন টি সম্পর্কে। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। আজকের আর্টিকেলটি এই পর্যন্তই।
আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এতক্ষণ আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। পরিমাণ মতো গ্রীন টি পান করুন, সুস্থ থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url