জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কত দিন লাগে ও সংশোধনের নিয়ম কি

আমরা যারা বাংলাদেশে বসবাস করি এবং বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয় পত্রের পাশাপাশি জন্ম নিবন্ধন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কত দিন লাগে ও সংশোধনের নিয়ম কি
প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমরা জানবো জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কতদিন লাগে এবং সংশোধন করার নিয়ম কি ।

জন্মসনদ সংশোধনের কিছু প্রাথমিক শর্ত

আমাদের দেশের প্রায় মানুষেরই জন্ম সনদে কিছু না কিছু সমস্যা থেকে থাকে। বিশেষ করে কেউ যখন প্রথম জন্ম নিবন্ধন করে থাকে তখন প্রায়ই তার নাম অথবা বাবা-মায়ের নাম অথবা ঠিকানা অথবা জন্ম তারিখের সালে ভুল হয়ে থাকে।
 ভুলের জন্য পরবর্তীতে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তবে ভুল হলেও জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের কিছু শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যেমনঃ
  • জন্ম নিবন্ধন সংশোধনকারীর বাবা-মা এর নাম যদি সংশোধনের প্রয়োজন হয় তবে বাবা-মায়ের জন্ম নিবন্ধন কার্ডের নাম্বার আছে সে নাম্বার প্রয়োজন হবে(যদি জন্ম সনদ না থাকে তাহলে অবশ্যই করে নিতে হবে)
  • কারোর পিতা বা মাতা মৃত হলে তাদের ডেথ সার্টিফিকেট করে নিতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের ফ্রি

কোন কারণবশত অথবা ভুলবশত আমাদের জন্ম সনদে অনেকেরই ভুল তথ্য পড়ে যায়। ফলে তখন আমাদের খুব কম সময়ের মধ্যে সমাধান করার জন্য জরুরি হয়ে পড়ে। কোন সমস্যা দেখা দিলে সবকিছু ঠিকঠাক করে সাবমিট করে দিলে ১৫ দিনের মধ্যেই আবেদন অনুবাদন হয়ে যায়।

 আবার আমরা অনেকেই ভেবে থাকি যে হয়তো জন্ম নিবন্ধন করতে হয়তো অনেক টাকা লাগে। বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম অনুসারে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কিছু টাকা নির্ধারণ করা রয়েছে। সে অনুযায়ী আমাদের খরচ করতে হবে। নিতে জন্ম নিবন্ধনের জন্য কত টাকা ফ্রি দিতে হয় সে সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হলঃ
  • জন্ম নিবন্ধনে থাকা নিজের নাম অথবা পিতা-মাতার নাম এবং ঠিকানা পরিবর্তন করতে হলে সেই ক্ষেত্রে সংশোধনের ফি ৫০ টাকা।
  • এছাড়াও অন্যান্য যেকোনো ধরনের তথ্য সংশোধনের জন্য ফ্রি ৫০ টাকা।
  • বাংলা বা ইংরেজি ভাষায় মূল সনদ সংশোধনের পর সংশোধনকৃত কপি সরবরাহ করতে হলে তার ফ্রি বিনামূল্যে নেওয়া যায়। এর জন্য কোন টাকা দিতে হয় না।
  • বাংলাও ইংরেজি সনদের ডুবলিকেট কপি ৫০ টাকা।

ডিজিটাল জন্ম সনদ করতে কত টাকা লাগে

আমাদের অনেকেরই জন্ম নিবন্ধন হাতে লেখা কপি রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে হাতের লেখা জন্ম নিবন্ধন সনদ অনেক জায়গায় গ্রহণযোগ্য নয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের জন্ম সনদ অবশ্যই ডিজিটাল করতে হবে। হাতে জনসনদ লেখাগুলোতে ১৩ ডিজিট থেকে ১৬ ডিজিটের ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন করার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়। 

তবে অনেক ক্ষেত্রে যদিও অনলাইনে কোন চার্জ নাও দিতে হয় তবে কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করার সময় অবশ্যই ৫০ টাকা ফী দিতে হবে। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ডিজিটাল জন্ম সনদেও অনেক ভুল থেকে থাকে। ডিজিটাল কোন প্রকার ভুল থাকলে সেটি সংশোধন করার জন্য অবশ্যই আগে ফ্রি প্রদান করতে হয়। তবে বলে রাখা ভালো যে সরকারি কর বা খাজনা না দেওয়া থাকলে জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করার জন্য তা পরিশোধ বাধ্যতামূলক।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার প্রয়োজনীয়তা

আমরা যারা বাংলাদেশে বসবাস করি আমাদের বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের পাশাপাশি জন্ম নিবন্ধন করা আবশ্যক। জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করা সবার জন্যই বেশ জরুরি একটি কাজ। শিশু জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যেই শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। আর যদি ৪৫ দিনের মধ্যে না করা হয় তাহলে পরবর্তীতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। 

যেমন জাতিসংঘের শিশু সনদ অধিকার অনুযায়ী, শিশুর জন্ম গ্রহণ করার পরপরই তার জন্ম নিবন্ধন করার কথা বলা রয়েছে। উন্নত দেশে শিশু জন্মের পরপরই তার জন্ম নিবন্ধন করা হয়। তাই বাংলাদেশেও প্রতিটি শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মূলত জন্ম সনদ হল একটি মানুষের নির্দিষ্ট পরিচয় পত্র। 

আর এই জন্ম সনদে যদি ভুল থাকে তাহলে এটি নিয়ে আমাদের বিভিন্ন ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। রাষ্ট্রের স্বীকৃতি নাগরিকের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে হলে জন্ম সনদ প্রদর্শন করা অবশ্যই বাধ্যতামূলক। আর যদি এই জন্ম নিবন্ধনের তথ্য ভুল থাকে তবে আজই সবকিছু সংশোধন করে নিন।

জন্ম সনদ ইংরেজি করার নিয়ম

বর্তমানে আধুনিক যুগে আপনার জন্ম সনদ যদি ইংরেজি করা না থাকে তাহলে আপনি বিভিন্ন কাজে ব্যর্থ হয়ে যাবেন। বিশেষ করে যখন বৈদেশিক কোন কাজ করতে হয় তখন যদি আপনার জন্ম সনদ ব্যবহার হয় তাহলে সেটি অবশ্যই ইংরেজিতে হতে হবে। সাধারণত আগেকার দিনে জন্ম সনদ ইংরেজিতে ছিল না।

 তাই আপনারটা যদি ইংরেজি না হয়ে থাকে তাহলে জন্ম সনদের তথ্য সংশোধনের সময় ইংরেজিতে তথ্যগুলো এড করে নিবেন। আপনার জন্ম নিবন্ধন ইংরেজিতে করাটাও একটি সংশোধনের মধ্যেই পড়ে। তাই আর দেরি না করে আজই আপনার জন্ম সনদ ইংরেজিতে করে নিন।

জন্ম সনদ সংশোধন করতে কি কি লাগে

তথ্য ভুল থাকে সে ক্ষেত্রে সংশোধন করতে স্কুলের সার্টিফিকেট, এনআইডি কার্ড, প্রত্যয়ন পত্র লাগে। এছাড়াও আপনি যদি ঠিকানা সংশোধন করতে চান তাহলে আপনার বাড়ির ট্যাক্স পরিষদের রশিদ অথবা জমির খাজনা পরিষদের রশিদের প্রয়োজন হয়।

শেষ কথা

প্রিয় বন্ধুরা আশাকরি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি বুঝতে পেরেছেন কিভাবে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে হয় এবং সংশোধন করতে কতদিন লাগে। তাই দেরি না করে আজই আপনার ভুল হওয়া জন্ম সনদ সংশোধন করে নিন। আজকে এ পর্যন্তই। সকলের সুস্থতা কামনা করে আজকের আর্টিকেল এখানেই শেষ করছি। এতক্ষন আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url