শীতকালে ঠোঁট ফাটে কেন ও কুয়াশা পড়ে কেন চলুন জেনে নিই

মেরু ও নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে শীতকাল বছরের অন্যতম একটি ঋতু। যখন উত্তর গোলার্ধে শীতকাল, তখন দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল। প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জানবো, শীতকালে ঠোঁট ফাটে কেন এবং কুয়াশা পড়ে কেন! জানতে হলে আমার আর্টিকেলের সাথেই থাকুন।
শীতকালে ঠোঁট ফাটে কেন ও কুয়াশা পড়ে কেন চলুন জেনে নিই
এই ঋতু প্রাচুর্যের একটি ঋতু। সৌন্দর্যের সাথে সাথে এই ঋতুতে বিভিন্ন রকম অসুবিধাও ভোগ করতে হয় আমাদের।

শীতকালে ঠোঁট ফাটা

শীতকালে ঠোঁট ফাটা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এ সময় ত্বক সহ ঠোঁটের ত্বক অনেক রুক্ষ থাকে ফলে আমাদের ঠোঁট ফাটতে দেখা যায়। আমাদের ত্বকে থাকা সিবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে এক ধরনের তৈলাক্ত মেদ বা মোমের মতো এক প্রকার রস নিঃসৃত হয় । একে সিবাম বলে। এটিই ঘামের সঙ্গে মিশে ত্বকে ছড়িয়ে যায় ফলে আমাদের ত্বক নরম ও কোমল থাকে। এজন্য ত্বক ফাটেনা।

 কিন্তু শীতকালে বাতাসের জলীয়বাষ্প কম থাকায় আমাদের শরীরে ঘাম হয়না। এ কারণে সিবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে বের হয়ে আসা নিঃসৃত পদার্থগুলো শরীরের চামড়ার মধ্যে ঠিকঠাক মতো ছড়িয়ে পড়তে পারে না। এজন্য শরীরের বিভিন্ন জায়গাগুলো কুঁচকে যায়। 

শরীরের অন্য জায়গার তুলনায় ঠোঁটের চামড়া অনেক পাতলা। এ ছাড়া এর অবস্থান নাকের নিচে হওয়ার জন্য নিঃশ্বাসের সঙ্গে বেরিয়ে আসা গরম বাতাস ঠোঁটের শুষ্কতা আরো বাড়িয়ে দেয়।

যেসব কারণে সমস্যা বাড়ে

কিছু কিছু বিষয় আছে যা আমাদের ঠোঁট ফাটা বাড়ায়। যেমনঃ
  •  বারবার ঠোঁট জিহ্বা দিয়ে ভিজানোর অভ্যাস, পুষ্টিহীনতা, বিভিন্ন রকম ভিটামিনের অভাব, সূর্যের প্রখর তাপ, পানিশূন্যতা সহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খাওয়া অথবা এলার্জিজনিত সমস্যা এমনকি ভিটামিন বি এর অভাবে হতে পারে।
  • অনেকে আবার ঠোঁটে বিভিন্ন রকমের লিপস্টিক, লিপবাম বা লিপজেল শুট করে না ফলে ঠোঁটে চুলকানি হয়ে ঠোঁট ফাটতে পারে।
  • অনেকের আবার সাইট্রাস জাতীয় ফল খেলে ঠোঁট ফেটে যায়।

পরিত্রাণের উপায়

  • এইসব সমস্যা থেকে সমাধান পেতে ঠোঁট যেন সবসময় ভিজে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। কিছুক্ষণ পরপর লিপজেল বা ভ্যাসলিন জাতীয় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
  • বাইরে বের হওয়ার সময় স্কিনের পাশাপাশি ঠোঁটেও সূর্যের সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
  • শরীরে যাতে পানিশূন্যতা দেখা না দেয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
  • ঠোঁটে নারকেল তেল লাগাতে পারেন।
  • মধু ও গ্লিসারিন মিলে পেস্ট তৈরি করে ঠোঁটে লাগাতে পারেন, এতে করে ঠোঁট নরম থাকবে।
  • চিনি ভালো স্ক্রাবার হিসেবে কাজ করে তাই ঠোঁটের মরা চামড়া দূর করতে চিনির স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন।
  • এলোভেরা জেল লাগাতে পারেন।
  • এক টুকরো শসা কেটে ঠোটের উপর ১৫-২০ মিনিট রেখে দিতে পারেন এতে করে শসার রস ঠোঁটকে নরম রাখতে সাহায্য করে।
  • গ্রিন টি খুব ভালো ময়শ্চারাইজারের কাজ করে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট ঠোঁটের ওপর টি ব্যাগ চেপে ধরে রাখলে ঠোঁট নরম থাকে।
  • মিল্ক ক্রিম বা কাঁচা দুধের সর ঠোটে লাগিয়ে রাখলেও ঠোঁট ফাটা সেরে যায়। দুধের সর ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর হালকা গরম পানিতে তুলা ভিজিয়ে আলতো করে ঠোঁট মুছে নিন।
তবে নিয়মিত ঠোঁট ফাটতে থাকলে বা রক্ত বের হচ্ছে এরকম পরিস্থিতি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

শীতকালে কুয়াশা পড়ার কারণ

শীতের সকালের ঘাস লতাপাতার গায়ে বিন্দু বিন্দু শিশির কনা লেগে থাকে। যেগুলো আমাদের মনে অন্যরকম একটি অনুভূতি দেয়। শীত মানেই ঘন কুয়াশার সাথে প্রকৃতির সর্বত্র জমে থাকা মুক্তার মত শিশির কণা। সকলের ঘন কুয়াশা কেটে যখন সূর্যালোক শীর্ষবিন্দুর উপর এসে পড়ে তখন প্রতিটি শিশির কণা যেন সোনার মতো জ্বলজ্বল করে ওঠে।

 যাই হোক আজকে আমরা জানবো শীতকালে শিশির বা কুয়াশা পড়ার কারণ। চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে নেই। আমরা সকলেই জানি শীতকালে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। এ তাপমাত্রা ধীরে ধীরে ঘনীভূত হয়ে একসময় পানির কনাতে পরিণত হয়। কিন্তু বাতাসের এ পানি কণা ধরে রাখার একটা ক্ষমতা রয়েছে।

 বাতাস যদি গরম হয় তাহলে বাতাসের জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বাড়ে আর বাতাস যদি ঠান্ডা হয় তাহলে জলীয় বাষ্প ধারন ক্ষমতা কমে।যখন এ সকল ঘনীভূত জলীয়বাষ্পের কনা আকারে অনেক বড় হয়ে যায় তখন তা আর বাতাসে ভেসে থাকতে পারে না ফলে সেটা ধীরে ধীরে শিশির হয়ে ঝরতে থাকে। রাতে যখন সূর্যের তাপ থাকে না তখন পৃথিবী বাতাস থেকে তাপ শোষণ করে।

 এর ফলে বাতাসের তাপমাত্রা কমে যায়। ফলে বাতাসের জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। এর সাথে সাথে রাত যত বাড়তে থাকে জলীয়বাষ্পের ধারণ ক্ষমতা তত বেশি কমতে থাকে। এভাবে তাপমাত্রা কমতে কমতে এক সময় বাতাস আর জলীয়বাষ্প ধরে রাখতে পারে না। তখন জলীয় বাষ্পের ফোঁটা শিশিরবিন্দু হয়ে মাটিতে পড়ে। 

গাছের পাতার ওপর এক ধরনের সূক্ষ্ম রোম থাকে যা শিশির বিন্দুকে ছড়িয়ে যেতে বাধা দেয় এবং গোলাকার দেখাতে সাহায্য করে। আবার এমন নয় যে শুধু শীতকালে শিশির বিন্দু পড়ে। শিশির জমার ঘটনাটি বছরে অন্যান্য সময় দেখা যায়। তবে শীতকালে তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। 

বছরের অন্যান্য সময় গুলোতে তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকলেও শেষ রাতের দিকে তাপমাত্রা বেশি দেখা যায় তবে সকালে সূর্য ওঠার সাথে সাথে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে এই শিশুগুলো পুনরায় জলীয়বাষ্প হয়ে উড়ে যায়। কিন্তু শীতকালে সকালে অনেকক্ষণ পর্যন্ত তাপমাত্রা কম থাকার জন্য শিশির বিন্দুগুলো অনেকক্ষণ পর্যন্ত অক্ষুন্ন থাকে।

শেষকথা

প্রিয় পাঠক আশা করি আমার আজকের আর্টিকেল থেকে আপনি খুব সুস্পষ্ট একটি ধারনা পেয়েছেন। শিতকালে কেন কুয়াশা পড়ে এবং ঠোঁট ফাটে তা জানতে পেরেছেন। আজকে এই পর্যন্তই। দেখা হবে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকবেন এবং ভাল থাকবেন। এতক্ষণ আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url