আপনার বাচ্চার নিউমোনিয়া ঠেকাতে কিভাবে চলবেন বিস্তারিত দেখুন

নিউমোনিয়া হলো শ্বাসনালী এবং ফুসফুসের এক ধরনের সংক্রমণ। বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের কারণে এ ধরনের সংক্রমণ হতে পারে। আজকে আমি আপনাদের জানাবো আপনার বাচ্চা নিউমোনিয়া ঠেকাতে কিভাবে চলবে সে সম্পর্কে কিছু কথা।
আপনার বাচ্চার নিউমোনিয়া ঠেকাতে কিভাবে চলবেন বিস্তারিত দেখুন
এখনো প্রতি বছর বিশ্বে প্রায়ই কয়েক লাখ নবজাতক শিশু নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। বাংলাদেশের শিশু মৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ হলো নিউমোনিয়া। তাই আপনার বাচ্চাকে সবসময় সতর্ক রাখতে হবে।

ভূমিকা

আপনার বাচ্চার নিউমোনিয়া ঠেকাতে কিভাবে চলবেন জানতে হলে আমার পুরো পোস্টে আপনাকে পড়তে হবে।নিউমোনিয়া এমন একটি ঘাতক ব্যাধি যার কারণে সারাদেশে প্রতি বছর প্রায় পাঁচ বছরের কম বয়সী ১৩ শতাংশ শিশু মৃত্যুবরণ করে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আর কিছু এন্টিবায়োটিকের মাধ্যমে এ রোগ থেকে বাঁচা যায়। বাংলাদেশে এক বছরের কম বয়সী শিশুর এ ধরনের টিকা দেওয়া হয়নি।

আপনার বাচ্চার নিউমোনিয়া ঠেকাতে কিভাবে চলবেন

বাচ্চাদের নাকি অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের জীবাণু থাকে যেগুলো ফুসফুসের নেমে গিয়ে প্রদাহ তৈরি করতে পারে। তাই বাচ্চাকে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং হাতে কাশি আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে দূরে রাখতে হবে। পাশাপাশি যেসব শিশুর এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদেরকে প্রতিবছর ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এই ভ্যাকসিন প্রতি বছর দিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা যাবে।
এছাড়াও পাশাপাশি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করার জন্য জন্মের পরপরই আপনার শিশুকে শাল দুধ খাওয়াতে হবে। তাছাড়াও শিশুকে ৬ মাস পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। কৌটার দুধ একদমই খাওয়ানো যাবে না। 
হাঁচি-কাশি এলে টিস্যু দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে হবে এবং পরবর্তীতে টিস্যু ফেলে দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে এই নিয়ম কানুন গুলো বাচ্চাকে শিখাতে হবে।শিশুরা যেসব জিনিসপত্র নিয়ে খেলাধুলা করে সেগুলো সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ সবসময় উত্তম তাই নিউমোনিয়ার মত মারাত্মক রোগ থেকে বাঁচতে হলে পর্যাপ্ত সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।
এছাড়াও শিশুকে 6 মাস বয়সের পরে বাড়তে কিছু পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। খেয়াল রাখবেন যাতে আপনার শিশু শরীরে কখনো ভিটামিন এ এবং সি এর অভাব না হয়। এই জন্য শিশুকে নিয়মিত শাকসবজি জাতীয় খাবার খাওয়াবেন। সময়মতো শিশুকে রোগ প্রতিরোধে টিকা দিয়ে দিবেন। ধুলোবালি থেকে সবসময় শিশুকে দূরে রাখার চেষ্টা করবেন।

নিউমোনিয়া কি এবং কিভাবে হয়

ফুসফুসের ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের আক্রমণীয় হলো নিউমোনিয়া। এরকম ব্যক্তি হয়তো খুব কমই রয়েছেন যার নিউমোনিয়ার একবারও হয়নি। সবার জীবনে একবার হলেও নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। এই রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু আমাদের প্রবেশ করে ফুসফুসের অ্যালভিওলাতে প্রসারিত হয় যার কারণে ফুসফুসের বাতাস প্রবাহিত হওয়া থেকে ব্যাহত হয়।

 ফুসফুসে এই জীবাণুর সংক্রমণের কারণে শিশুদের ভুল বুঝার কোষগুলো নমনীয়তা হারিয়ে ফেলে। এবং অল্প কিছু অংশ থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে বিশাল অংশে ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে ভেতরে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন ঢুকতে পারে না এবং নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

নিউমোনিয়ার সাধারণ উপসর্গ

  • মাঝারি থেকে শুরু করে খুব বেশি রকমের জ্বর হওয়া।
  • কাশি হওয়া।
  • নিঃশ্বাস নিতে না পারা শ্বাসকষ্ট হওয়া।
  • অতিরিক্ত শ্বাসকষ্টের কারণে শিশুর খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া।
  • শারীরিক বিভিন্ন উপসর্গ
  • শিশুরা খুবই বিরক্ত হয়ে যাবে।
  • শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যাবে।
  • নাকের ছিদ্র বড় বড় করে নিঃশ্বাস তোলার চেষ্টা করবে।
  • শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা করতে থাকলে মাথা নাড়াচাড়া শুরু করবে এবং অস্থির হয়ে যাবে।
  • যখন অতিরিক্ত বেশি সমস্যা হবে তখন ঘর ঘর শব্দ হতে থাকবে।
  • অক্সিজেনের অভাবে শরীর নীল হয়ে যেতে পারে।

বুকের উপসর্গ

  • শিশু অতিরিক্ত ঘনঘন বিশ্বাস নিবে।
  • দুই মাস বয়সী শিশুরা মিনিটে প্রায় ৬০ বারের বেশি নিঃশ্বাস নিবে।
  • ২ থেকে ১২ মাস বয়সী শিশুরা মিনিটে প্রায় ৫০ বারের বেশি নিঃশ্বাস নিবে।
  • এক থেকে পাঁচ বছর বয়সে শিশু চল্লিশ বারের বেশি নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করবে।
  • নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় বুক ভেতর দিকে গর্ত হয়ে ঢুকে যাবে।
  • হৃদপিন্ডের গতি অতিরিক্ত বেড়ে যাবে।
উপরোক্ত লক্ষণ গুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন আপনার শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে। এরকম অবস্থায়
যত দ্রুত স্বভাব আপনার শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।

নিউমোনিয়া কিভাবে ছড়ায়

প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আমরা জানলাম আপনার বাচ্চা নিউমোনিয়া ঠেকাতে আপনাকে কিভাবে চলতে হবে সে সম্পর্কে এবং নিউমোনিয়া কি কিভাবে হয় সে সম্পর্কে কিছু তথ্য। এখন আমরা জানব নিউমোনিয়া কিভাবে ছড়ায় সে সম্পর্কেঃ 
  • বাচ্চাদের নাকের এসব জীবনে থাকে সেগুলো ফুসফুসে গিয়ে সংক্রমণ ছড়ায়।
  • নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির হাঁচি এবং কাজে সংস্পর্শে গেলে ছড়াতে পারে।
  • জন্মের পর পর রক্ত থেকেও নিউমোনিয়া ছড়াতে পারে।
নিউমোনিয়া ঠেকাতে সবথেকে কার্যকর উপায় হল শিশুকে নিউমোনিয়ার টিকা দেওয়ার। এর বাইরেও বাজারে কিছু ভ্যাকসিন রয়েছে সেগুলো দিয়ে নেওয়া। এর পাশাপাশি যেসব শিশুর এলার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদেরকে বছরে দুইবার ভ্যাকসিন দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি যেসব শিশু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম রয়েছে তাদের খাওয়া-দাওয়া ঠিকঠাক মতো খেয়াল রাখা জরুরী।

 এর জন্য সব সময় শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। মায়ের বুকের দুধ পান করানো থেকে শুরু করে প্রচুর শক্তির সমৃদ্ধ বাড়তি খাবার দেওয়ার জরুরী। তারপর অবশ্যই আপনার শিশুকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করবেন।

 এর সাথে সাথে আপনার নিজেদেরও খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ছোট থেকেই সে যদি অভ্যাস করার চেষ্টা করবেন যে হাঁচি কাশি হলে নাক মুখের সামনে টিস্যু দিয়ে ধরতে হবে। এবং ব্যবহার করা টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। তারপরও আপনার বাসার জিনিসপত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা আবশ্যক। শিশুরা যে জিনিসপত্র বেশি নাড়াচাড়া করে বা তাদের খেলনা সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

 শিশুর আশেপাশে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আপনার বাসা বাড়ি নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে জীবাণুমুক্ত নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সকলে জানি প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ সবসময় উত্তম। তাই নিউমোনিয়ার মতো মারাত্মক ব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে সতর্কতার কোন বিকল্প নেই।

কোন শিশুদের নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি

কিছু কিছু শিশুদের নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। কোন ধরনের শিশুর ঝুঁকি বেশি রয়েছে চলুন জেনে নেই।
  • যারা চরম অপুষ্টিজনিত শিশু তাদের নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।
  • যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম বা নেই বললেই চলে।
  • জন্মগতভাবে ফুসফুসের বা হৃদরোগের কোন সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকলে।
  • সত্য জন্মগ্রহণ করা শিশু।
  • বায়ু দূষণের মধ্যে থাকা শিশু।
  • সংক্রামক রোগে আক্রান্ত শিশু যেমনঃহাম,হুপিং কাশি।
  • যাদের শরীরে ভিটামিন এ এর অভাব রয়েছে।

নিউমোনিয়ার চিকিৎসা

সব সর্দি কাশির মানে যে নিউমোনিয়া বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। সাধারণত সত্যি কাশি ভালো হওয়ার জন্য কোন এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু অনেক বাবা মা আছেন যারা শিশুর একটু সর্দি কাশি হলেই সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে নিয়েছে শিশুকে খাওয়ান।

 এটি শিশুদের জন্য খুব ক্ষতিকর। এবং পরবর্তী সময়ে জটিল কোন অসুখে এন্টিবায়োটিক খাওয়ানোর পরেও কোন কাজ হয় না। তাই শিশু সত্যি কাশি হলে বাড়িতে কিছু প্রাথমিক ব্যবস্থা করবেন। যেমনঃ
  • অতিরিক্ত জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল খাওয়াবেন।
  • হালকা কুসুম গরম পানি করে মুছে দিন।
  • যদি নাক বন্ধ হয়ে থাকে তাহলে বাজার থেকে ড্রপ কিনে নিয়ে এসে ড্রপ দিয়ে দিন।
  • সামান্য কাশি হয়ে থাকলে ওষুধের প্রয়োজন নেই বরং তুলসী পাতার রস মধু দিয়ে খাওয়াতে পারেন।
  • ঘরের জানালা দরজা সবসময় খুলে রাখুন যাতে ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে।
  • ছোট শিশুকে নিয়মিত মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
  • অনেকের ধারণা ফল খেলে শিশুর ঠান্ডা লেগে যাবে এটি সম্পূর্ণ ভুল।
  • নাক বন্ধ হয়ে থাকলে অনেক সময় তাদের বাবা-মা নেবুলাইজার ব্যবহার করে থাকে। সব সময় নেবুলাইজার পদ্ধতি ব্যবহার আসলে ঠিক না। তাই শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই নেবুলাইজার ব্যবহার করা যাবে।

শেষকথা

প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আমরা জানলাম আপনার বাচ্চার নিউমোনিয়া ঠেকাতে কিভাবে চলবেন সে সম্পরকে।আবার নিউমোনিয়া কিভাবে প্রতিরোধ করবেন সেটাও জানলাম। আশা করছি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।

যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করবেন।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। আমার আজকে এই পর্যন্তই। দেখা হবে পরের কোন পোস্টে। আর এতক্ষণ ধরে আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url