ডিম পচা নাকি ভালো সেটা চিনবেন কোন উপায়ে বিস্তারিত তথ্য জানুন
ডিম পচা নাকি ভালো সেটা চিনবেন কোন উপায়ে সেটা অনেকেই হয়তোবা জানেন না।বাজার থেকে ডিম করার সময় পচা ডিম কিনে নিয়ে আসছেন! কিছু উপায় অবলম্বন করে আপনি চিন্তা সক্ষম হবেন যে ডিমটি ভালো নাকি পচা। প্রিয় পাঠক আজকের আলোচনার বিষয় ডিম পচা নাকি ভালো সেটা চিনবেন কোন উপায়ে।
ডিম দিয়ে আমরা বিভিন্ন রকম আয়োজন করে থাকি। কিন্তু সে ডিম যদি পচা বা নষ্ট হয়ে থাকে তাহলে আমাদের পুরা আয়োজনটাই বৃথা হয়ে যায়। তবে কিছু পরীক্ষা আছে যেগুলো করার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন যে ডিমটি ভালো নাকি পচা।চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
ভূমিকা
ডিম পচা নাকি ভালো সেটা চিনবেন কোন উপায়ে জানতে হলে আমার আর্টিকেলের সাথেই থাকুন। কমবেশি ডিম নিত্য প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। কখনো ব্রেকফাস্টে কখনো নুডুলস বা পাস্তা তৈরিতে অথবা ফ্রাইড রাইস তৈরিতে ডিম দরকার। আর অনেকেই ঘরের ডিম নিয়ে আসেন ডজন ধরে। অধিকাংশ বাড়ির মহিলাদের অভিযোগ থাকে যে বেশি করে ডিম কিনে নিয়ে আসলে তা নষ্ট হয়ে যায়।
এমনকি অনেকে খেতে বসে বুঝতে পারেন যে ডিমটি নষ্ট। তখন এক মহা বিপাকে পড়ে যেতে হয়। ফলে পুরো খাবার টাই মাটি হয়ে যায়। তাহলে দেখে নিন আপনার ঘরে এনে রাখার ডিমটি নষ্ট নাকি ভালো।
ডিম পচা নাকি ভালো সেটা চিনবেন কোন উপায়ে
নষ্ট ডিম চেনার কিছু উপায় রয়েছে। চলুন তাহলে কি সেই উপায় গুলো জেনে নি।
পানিতে পরীক্ষা করে
ডিম কিনে আনার পর কিছুক্ষন পানির মধ্যে ডুবিয়ে রাখুন। ডিম যদি নষ্ট হয় তাহলে অবশ্যই পানির উপরে ভেসে উঠবে। আর যদি ডিউটি ভালো হয়ে থাকে তাহলে পানিতে ডুবে থাকবে।
সিদ্ধ ডিম
সিদ্ধ হওয়ার পরে ডিমের সাদা অংশ যদি ঘোলাটে এবং দুর্গন্ধ যুক্ত হয় তবে সেটা অবশ্যই নষ্ট ডিম।
আলো
ডিম নষ্ট নাকি ভালো সেটা পরীক্ষা করার জন্য আলোর ওপরে ডিম ধরুন। ডিমের ভেতরে রিং এর মতো হয়ে উঠলে বুঝবেন সেই ডিমটি নষ্ট। বা পচন শুরু হয়েছে।
ডিমের কুসুম ছড়িয়ে গেলে
ডিমটিকে ফাটিয়ে একটি প্লেটের ওপর রাখুন। যদি দেখেন ডিমটির কুসুম এক জায়গায় রয়েছে তাহলে সে ডিমটি অনায়াসে ভালো। আর যদি দেখতে পান যে ডিম টির কুসুম চারদিকে ছড়িয়ে গেছে তখন সেটা বুঝতে হবে নষ্ট ডিম।
ডিম ঝাকানো
ডিম কিনে আনার পর আলতো করে ঝাঁকিয়ে দেখুন। ডিম যদি পচা হয় তাহলে এক ধরনের শব্দ আসবে। আর ডিম যদি ভালো হয়ে থাকে তাহলে কোনরকম শব্দ হবে না।
ডিমের সাদা অংশ
ডিম ফাটানোর পর যদি দেখেন যে ডিমের সাদা অংশ ঘন তাহলে বুঝবেন যে ডিমটি খুব টাটকা। আর যদি ডিমের সাদা অংশ হালকা পাতলা হয়ে থাকে তাহলে বুঝবেন যে ডিমটি অনেক পুরনো। এবং ডিমটি সাদা অংশ যদি সবুজ ছোপ ছোপ দেখতে পান তাহলে বুঝবেন যে ডিমটি পচা।
পচা ডিম পানিতে কেন ভাসে
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনাদের মনে অনেকেরই প্রশ্ন আসতে পারে যে, পচা ডিম কেন পানিতে ভাসে? আর ভালো ডিম কেন পানিতে ভাসে না। চলুন তাহলে জেনে নিই কেন পচা ডিম পানিতে ভাসে। আসলে ভালো ডিমের ভেতরে কোনরকম গ্যাস থাকে না। আর পচা ডিমের ভেতরে থাকে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস। আর ভালো ডিমের ঘনত্ব পচা ডিমের ঘনত্ব তুলনায় অনেক বেশি।
তাই ভালো ডিম পানিতে ছেড়ে দিলে সে যতটুকু পানি অপসারণ করে তার ওপর ভর করে ডিমটি ডুবে যায়। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে ভালো ডিম পানিতে ভাসেনা। অন্যদিকে পচা ডিমের মধ্যে রয়েছে হাইড্রোজেন সালফেট গ্যাস যার কারণে ডিমের ওপর ঊর্ধ্বমুখী একটা চাপ প্রয়োগ হয়ে থাকে।
তার সাথে ডিমের ঘনত্ব অনেক কমে যায়। এতটাই কমে যায় যে পানির গড় ঘনত্বের চেয়ে সে ঘনত্ব অনেক কম। তাই পচা ডিম পানিতে ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথে সেটা পানির উপর ভেসে ওঠে।
লবণ পানিতে কেন ডিম ভাসে
আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন যে পচা ডিম তো পানিতে ভাসেই, এমনকি তার সাথে ভালো ডিম ও লবণ পানিতে ভেসে ওঠে। কিন্তু এমনটা কেন হয় সেটা আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না। প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জানবো লবণ পানিতে ভালো ডিম কেন ভাসে! আজতো একটা ডিম একটা কোষ। তাই ভালো ডিমের ঘনত্ব পানির থেকে বেশি থাকে ও তাতে পানি অভিস্রবণ ঘটেনা বলে তা পানির মধ্যে ডুবে থাকে।
সাধারণত আমরা জানি পানির তুলনায় লবণ পানির গড় ঘনত্ব অনেক বেশি থাকে।যার ফলে পানির প্লবতা অনেক বেশি হয় এবং এইজন্যই সমুদ্রে পানিতে সাঁতার কাটা অনেক সহজ হয়। আর ডিমের ক্ষেত্রেও সেই একই রকম কথা। বেশি হওয়ার কারণে ডিম ভেসে থাকতে পারে। পরীক্ষা স্বরূপ আপনি একটি গ্লাসে অর্ধেক জল নিয়ে তার মধ্যে ১০ চামচ লবণ দিয়ে ভালোভাবে নাড়ানি দিয়ে নেড়ে তার মধ্যে ডিম ছেড়ে দিয়ে দেখুন ডিমটি অবশ্যই ভেসে উঠবে।
ডিমের পুষ্টিগুণ
ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ বি ডি ই এবং কে। তার সাথে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড। প্রত্যেকটি ডিমের মধ্যে রয়েছে পাঁচ গ্রাম প্রোটিন এবং রয়েছে ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম ফসফরাস এবং ফোলেট। এজন্যই ডিমকে খুবই পুষ্টিকর খাবার হিসেবে গণ্য করা হয়। এছাড়াও ডিমের কুসুমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট বা স্নেহ এবং প্রোটিন ও কোলেস্টেরল।
প্রতিদিন কয়টি ডিম খাবেন
আমাদের খাবার তালিকায় অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ হল ডিম। ডিম আমাদের কম বেশি ছোট-বড় সকলেরই প্রিয় একটি খাবার। সম্পর্কেও আমাদের সবারই জানা রয়েছে। আবার সহজলভ্য হওয়ার কারণে আমরা প্রায় দিনের খাবার তালিকায় ডিম রেখে থাকি। অনেকে আবার সহজলভ্য হওয়ার কারণে অনেক বেশি ডিম খেয়ে ফেলেন।
আবার অনেকেই ডায়েটের অংশ হিসেবে খাবার তালিকায় ডিম রাখেন। আবার কেউ বিভিন্ন রোগের কথা ভেবে ডিম খেতেই চান না। অতিরিক্ত কোন কিছুই তেমন ভালো নয় তেমনি একদমই বাদ দেওয়া মানে কোন সমাধান নয়। ডিমের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ অংশ হলো সাদা এবং এক-তৃতীয়াংশ অংশ হচ্ছে হলুদ।
কেউ কেউ বেশি ডিম খেয়ে ফেলে এবং তখন তার অজান্তেই শরীরের বিভিন্ন রকম রোগ ব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে। যেমন বেশি ডিম খেলে বিশেষ করে ডিমের কুসুম খেলে রক্তের কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে। রক্তের কোলেস্টেরল যখন বেড়ে যায় তখন আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের বড় বড় ওষুধ যেমন হার্টের অসুখ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ।
আবার ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট যা আমাদের শরীরের জন্য ভালো নয়। এজন্য হার্টের রোগীদের বা হাই কোলেস্টেরল রয়েছে এরকম রোগীদের ডিম খাওয়ার ব্যাপারে এবং ডিমের কুসুম খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এমন কি ডায়াবেটিস রোগী ও কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।
আবার অনেকেই মনে করেন ডিমের সাদা অংশে যেহেতু খুব ভালো প্রোটিন বা এলবুমিন রয়েছে তাহলে বেশি করে খেলে কোন ধরনের সমস্যা হবে না। মাংসপেশি বাড়ানোর জন্য একদিনে অনেকেই বেশ কয়েকটি ডিম খেয়ে থাকেন। এলবুমিন আমাদের শরীরের জন্য ভালো কিন্তু অতিরিক্ত এলবুমিন গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে বায়োটিন নামক এক ধরনের ভিটামিনের শূন্যতা দেখা যেতে পারে।
ডিমে অনেক এলার্জি থাকে সেক্ষেত্রে কেউ প্রয়োজনের অতিরিক্ত ডিম খেয়ে ফেললে তার এলার্জি জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার আমাদের মধ্যে অনেকেরই পেটে গ্যাস বা এসিড হওয়ার সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে একটু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কেন অতিরিক্ত ডিম খেয়ে ফেললে পেটে গ্যাস বা অস্বস্তি হতে পারে।
ডিম অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং পুষ্টিকর একটি খাবার যা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। কিন্তু একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ দিনে একটি করে ডিম খেতে পারবে। এ কারণে প্রতিদিন একটি ডিম ছাড়া খাওয়া উচিত নয় বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া না খাওয়ায় উত্তম।
কাঁচা ডিম খাওয়া কি স্বাস্থ্যসম্মত
কাঁচা ডিম খাওয়ার সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের ধারণা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত হয়ে আসছে। সিদ্ধ ডিম কিংবা ভাজা ডিমের চেয়ে কাঁচা ডিম খাওয়া বেশি স্বাস্থ্যকর বলে অনেকেই মনে করে। আবার তেমন কি এটাও অনেকে মনে করে যে কাঁচা ডিম খেলে শক্তি বাড়ে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণই আমাদের ভুল ধারণা। ভুল ধারণার বসে কাঁচা ডিম খেয়ে ফেললে তা উল্টো আমাদের শরীরে স্বাস্থ্যহানির অনেক কারণ হতে পারে।
প্রথমত কাঁচা ডিম রান্না করা ডিমের মতো সহজে হজম হয় না। আমরা সকলেই জানি ডিমের কাঁচা অবস্থায় সাদা অংশটিতে থাকে অ্যালবুমিন নামক এক ধরনের প্রোটিন। কাঁচা অবস্থায় ডিমের সাদা অংশের মধ্যে পরিপাক বিরোধী ক্ষমতা থাকে বেশি, যা পানিতে দিয়ে সিদ্ধ করলে বা আগুনের উত্তাপে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ভাজা ডিম বা সিদ্ধ করা ডিম খুব সহজেই হজম হয়ে যায় কাঁচা ডিমের তুলনায়। এছাড়াও কাচা ডিম নিয়ে আরো অনেক কথা রয়েছে।
কাঁচা ডিমের মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার বাসস্থান থাকে। এরকম একটি ব্যাকটেরিয়ার নাম হল সালমোনেলা। যার ডিমের খোল সে অবস্থিত অতি ক্ষুদ্র ছিদ্র দিয়ে ডিমের ভেতরে ঢুকে পড়ার মতো ক্ষমতা রাখে। একটি হাস বা মুরগি যখন ডিম প্রসব করে তখন মুরগি বিষ্ঠার মধ্যে বা হাঁসের বিষ্ঠার মধ্যে পড়ে থাকা সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করার সুযোগ পায়।
এই ব্যাকটেরিয়া যুক্ত ডিম আমরা যদি গ্রহণ করি তাহলে আমাদের পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। পেটের ব্যথা থেকে শুরু করে বমি এবং টাইফয়েড পর্যন্ত হতে পারে। অথচ ডিম যখন ভালোভাবে রান্না করা হয় তখন এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া হলো ধ্বংস হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অনেকে হালকাভাবে গরম করে অমলেট করে খেতে পছন্দ করে।
কিন্তু অমলেট এর মধ্যেও ডিমের মধ্যে থাকা সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস নাও হতে পারে।অন্যদিকে কাঁচা ডিম খেলে শরীরে বায়োটিন নামক ভিটামিন বি গ্রুপের এক ধরনের ভিটামিন থেকে বঞ্চিত হয়। এবং আমাদের শরীরে যখন বায়োটিনের অভাব হয় তখন আমাদের শরীরে কিছু উপসর্গ দেখা যায় যেমনঃ ত্বকের প্রদাহ, অতিরিক্ত চুল পড়ে যাওয়া, ওজন কমে যাওয়া,ত্বকের রুক্ষতা এবং জিব্বার রুক্ষতা।
এইজন্য বাজার থেকে ডিম কিনে আনার পর পর ধুয়ে রাখা উচিত। প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আমরা জানলাম ডিম পচা নাকি ভালো সেটা চিনবেন কোন উপায়ে সে সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য এবং আরও জানলাম তাছাড়া ডিম খেলে আমাদের শরীরের কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সে সম্পর্কে। আশা করি গুরুত্ব আলোচনা থেকে আপনি সুস্পষ্ট একটি ধারণা পেয়েছেন।
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আমরা ডিম নিয়ে অনেক কথা আলোচনা করলাম। জানলাম ডিম পচা নাকি ভালো সেটা চিনবেন কোন উপায়ে সে সম্পর্কে এবং ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। আশা করি আপনারা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
আশা করছি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করবেন। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। আমার আজকে এই পর্যন্তই। দেখা হবে পরের কোন পোস্টে। আর এতক্ষণ ধরে আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url