শীতকাল থেকে গরমকালে দই তৈরি করা সহজ কেন জেনে নিন
শরতের পরে এবং হেমন্ত মাস শেষ হতে না হতেই শীতের আমেজ চলে আসে। তবে জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে খুব বেশি শীত পড়ে। শীতকাল থেকে গরমকালে দই তৈরি করা সহজ কেন জেনে নিন
প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমরা জানব শীতকাল থেকে গরমকালের দই তৈরি করা বেশি সহজ কেন? এছাড়াও আরো জানবো শীতকালে কাপড় তাড়াতাড়ি কেন শুকায়, শীতকাল নিয়ে কিছু বাক্য এবং শীতকালে ত্বকের যত্ন ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি।জানতে হলে আমার আর্টিকেলের সাথেই থাকুন।
ভূমিকা
শীতকাল মানেই চারিদিকে কুয়াশাচ্ছন্ন একটা পরিবেশ। বাংলাদেশ সহ ভারত এবং কিছু অঞ্চলে বছরের শেষ ডিসেম্বর মাস থেকে শীতের আবহাওয়া শুরু হয়। নভেম্বর মাস থেকে বার্তা চলে আসে আমাদের সকলের মাঝে। এই সময় তাপমাত্রা কম থাকে। রাত বড় এবং দিন ছোট হয়ে যায় ।
শীতকাল থেকে গরমকালে দই তৈরি করা সহজ কেন
বাঙ্গালীদের কমবেশি প্রায় সকলেরই দই খুব পছন্দের একটি খাবার। দই এর পুষ্টি গুলো বলে শেষ করার মত নয়। কিন্তু এই দই তৈরিতে ব্যাকটেরিয়া দরকার হয়ে থাকে।সাধারণত ল্যাকটোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া দই তৈরিতে সাহায্য করে। দুধের প্রাকৃতিক চিনি কে ব্যাকটেরিয়া এসিডে রূপান্তর করে যার ফলে দুধ ঘন হয়ে দই এ রূপান্তরিত হয়ে যায় এবং টেস্ট পরিবর্তন হয়ে যায়।
দই তৈরি হওয়ার আদর্শ তাপমাত্রা হচ্ছে 105 ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ১১৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা যখন উষ্ণ থাকে তখন ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি এবং কার্যকলাপের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়ে থাকে। অন্যদিকে শীতকালে আবহাওয়ার তাপমাত্রা ঠান্ডা থাকার জন্য ব্যাকটেরিয়া গুলো বৃদ্ধি পেতে এবং তাদের গাজন প্রক্রিয়া গুলো সম্পন্ন করতে একটু কঠিন হয়ে ওঠে। যার জন্য শীতকালে দই প্রস্তুত হতে একটু কষ্টদায়ক হয়ে যায়।
শীতকালে গাছের পাতা ঝরে যাওয়ার কারণ
শীতকাল শুরু হওয়ার পর পরে আমরা দেখতে পাই গাছের পাতাগুলো বিভিন্ন রং ধারণ করেছে এবং এক পর্যায়ে পাতাগুলো ঝরে পড়ে গেছে। এই মৌসুমকে সাধারণত বলা হয়ে থাকে "Fall" কারণ এই সময়ে একটু বাতাস পেলেই মুচমুচে শুকনো পাতাগুলো ঝরে পড়ে যায়। এই ঘটনাটি কেবল আমরা শীতকাল এলেই দেখতে পাই। অন্য কোন ঋতুতে দেখা যায় না।
এখন আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন যদি গাছের পাতা সালোকসংশ্লেষণ এর মাধ্যমে খাদ্য তৈরি করে থাকে তাহলে শীতকালে বাঁচে কিভাবে? আমরা সকলেই জানি শীতকালে গাছের পাতা ঝরে যাওয়ার একটি বড় কারণ হলো বাষ্পমোচন প্রক্রিয়া। গাছ তার মূল রোমের দ্বারা পানি চুষে ওপরে তুলে দেই।
কিন্তু শীতকালে শুষ্ক মৌসুমের কারণে সঠিকভাবে গাছের মূলরম পানি চুষতে পারে না। ফলে পাতার অভ্যন্তরে পানি ঘাটতি হয়। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অক্সিন নামক হরমোন ক্লোরোফিল উৎপন্ন করা বন্ধ করে দেয়। যা প্রাকৃতিক কাজের ন্যায় কাজ করে ফলে পাতা সব ঝরে যায়।
আর গাছ তার অতিরিক্ত সঞ্চিত পুষ্টি দিয়ে বাকি দিনগুলো পার করে। আবার শীতকালে সূর্যের আলো এবং দিনের দৈর্ঘ্য কম থাকে। এসব কারণে গাছ তার পাতার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা ঠিকমতো করতে পারে না। তাই শুধু বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু দরকার সেটুকু সে বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে সঞ্চয় করে থাকে। এবং সেটি দিয়ে প্রকৃতপক্ষে সারা শীতকাল খাদ্য উৎপাদন করে থাকে।
শীতকাল সম্পর্কে কিছু বাক্য
ঋতুর দেশ বাংলাদেশের অন্যতম একটি ঋতু হলো শীতকাল। পৌষ ও মাঘ এ দুই মাস শীতকাল। শীতকালের কথা মনে পড়লেই মনে পড়ে যায় হরেক রকম সবজির কথা, বিভিন্ন পিঠার কথা। তবে এই শীতকাল ধনীদের কাছে উপভোগের ঋতু হলেও গরিবদের কাছে এই ঋতু খুব কষ্টের।
এছাড়াও যাদের বাড়িঘর নেই এবং শীতকালে গরম কাপড় কিনতে পারে না তাদের জন্য আসলেই এই ঋতু খুব কষ্টদায়ক। শীতকাল বাংলাদেশের অন্যতম একটি ঋতু হওয়ায় শীতকাল সম্পর্কে আমাদের অনেক কিছু জানা দরকার। আজকে আমরা জানবো শীতকাল সম্পর্কে কিছু বাক্য।
- শীতকালের দিনের আলো কম হয়ে যায় এবং তাপমাত্রা কম থাকে।
- রাত বড় এবং দিনের দৈর্ঘ্য ছোট হয়ে থাকে।
- ভরে প্রকৃতি কুয়াশার জন্য থাকে এবং সন্ধ্যার পর কুয়াশায় ঢেকে আসে।
- কমবেশি প্রায় সকল মানুষের তিন বেলা গরম খাবার খেতে পছন্দ করে এবং বিভিন্ন রকম পিঠা খেতে পছন্দ করে।
- মানুষ সহ অন্যান্য সকল প্রাণী এই ঋতুতে অন্য ঋতুর তুলনায় বেশি ঘুমিয়ে থাকে।
- গাছের পাতা ঝরে পড়ে।
- মানুষজন গরম কাপড় পরিধান করে।
- ছুটির আনন্দ এবং উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়ে থাকে।
- সকালের সূর্য আকাশকে গোলাপি কমলা এবং বেগুনি রঙে রঞ্জিত করে থাকে যা একটি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
- শীতকালে খেজুর রস পাওয়া যায়।
- অতিরিক্ত শীতের তাড়নায় এবং কুয়াশাচ্ছন্ন জন্য অনেক সময় মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহত হয়।
শীতকালে কাপড় তাড়াতাড়ি শুকায় কেন
শীতকালে তাপমাত্রা অনেক ঠান্ডা থাকা সত্ত্বেও কাপড় গরমকালের তুলনায় খুব দ্রুত শুকায়। শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা অনেক কম থাকে। আর এই বাতাসের আদ্রতা নির্ভর করে বাতাসে কতটুকু জলীয় বাষ্প আছে তার ওপর। আবার বাতাস কতটুকু ভেজা বা শুষ্ক তা বোঝা যায় আদ্রতা পরিমাপের ওপর।
এবং এ বাতাসের জলীয় বাষ্প যখন বেশি হয় তখন এর আদ্রতা ও বেশি হয়, আর যখন কম হয় তখন আদ্রতা কম হয়। বাতাসে জলীয় বাষ্প ধারণ করার একটি নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে যাকে বাতাসের সম্পৃক্ত অবস্থা বলা হয়ে থাকে। এবং বাতাস সম্পৃক্ত অবস্থায় পৌঁছে গেলে জলীয়বাষ্প আর শোষণ করতে পারেনা।
বাতাসের আদ্রতা সম্পৃক্ত অবস্থায় খুব কাছাকাছি এলে অন্য বস্তু থেকে জলীয় বাষ্প চুষে নেয়ার ক্ষমতা কমে যায় অর্থাৎ বাতাস বেশি ভেজা হলে জলীয়বাষ্প শোষণ করার ক্ষমতা তত কম হয়। অন্যদিকে বাতাসের আদ্রতা যত কম হয় জলীয় বাষ্পর শোষণ করার ক্ষমতা তত বেশি হয়।
আসলে শীতকালে বাতাসের আদ্রতা গরমকালের তুলনায় অনেক কম থাকে ফলে শীতের বাতাস শুষ্ক হয়। আর এজন্যই ভেজা কাপড় বা যে কোন ভেজা বস্তু শীতের বাতাস খুব সহজেই পানি শোষণ করে নিতে পারে। এজন্যই শীতকালে কাপড় তাড়াতাড়ি শুকায়।
শীতকালে ফর্সা হওয়ার উপায়
শীতকালে ত্বকের যত্ন আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই সময় ত্বক হয়ে পড়ে খুব বেশি স্পর্শকাতর, খসখসে এবং টানটান। অনেক সময় শীতের দাপটে আমাদের ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য শীতকালে প্রয়োজন ত্বকের বিশেষ যত্ন। কিছু ঘরোয়া টিপস ফলো করে চটজলদি আপনি আপনার ত্বকের সবরকম সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারেন। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক কিভাবে ঘরে বসেই সমস্যাগুলো সমাধান করবেনঃ
- অনেকেই মনে করেন শীতকালে সানস্ক্রিম লাগানোর কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। শীতের সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করে। তাই বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিম ব্যবহার করুন।
- শীতকালে আমাদের ত্বক ময়েশ্চারাইজড রাখা খুবই জরুরী। ফলে ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে। অলিভ অয়েল, কোকোনাট অয়েল বা শসা এবং টক দই দিয়ে আপনার ত্বক মশ্চারাইজ করতে পারেন।
- সাধারণত শীতকালে আমরা অনেকেই গরম পানি খেয়ে থাকে। শরীরে পানির ঘাটতির জন্য অনেক সময় ত্বক শুষ্ক এবং রুক্ষ হয়ে যায়। তাই খেয়াল রাখতে হবে যেন শরীরে পানির ঘাটতি না হয়।
- শীতকালে গরম পানিতে আমাদের মাংসপেশী স্বস্তি পায়। মুখের যত্নে আপনি হালকা কুসুম গরম পানি মুখে ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বকের রুক্ষতা কমে যাবে।
- প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখে মশ্চারাইজার লাগিয়ে ঘুমান। এর ফলে আপনার ত্বক নরম ও কোমল হবে।
- অমাণ ভিটামিন সি খাবেন।
- শীতকালে আপনার ফেসওয়াস বদলে ফেলুন। ক্ষারযুক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহারে স্কিন কালো হয়ে যায়। তাই ফেসওয়াশ ব্যবহার না করে অলিভ অয়েল বা গ্লিসারিন যুক্ত ফেসওয়াস ব্যবহার করুন। এতে করে ত্বকের উজ্জ্বলতা খুব সহজেই বেড়ে যাবে।
এছাড়াও ফর্সা ও উজ্জ্বল ত্বক পেতে আপনি কিছু খাবার খেতে পারেন যেমন
- মিষ্টি আলু
- বাদাম
- সামুদ্রিক মাছ
- কমলা ও লেবুর রস ইত্যাদি।
বাদামে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন আপনার ত্বকের সজীব ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এবং ত্বককে রাখে মসৃণ ও প্রাণবন্ত। এছাড়াও ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর আলোর প্রভাব থেকে মুক্ত করে বাদাম। ফলে ত্বক উজ্জ্বল দেখায়। কমলা ও লেবুর রসে রয়েছে ভিটামিন সি।
এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এন্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষগুলোকে সজীব রাখে। সামুদ্রিক মাছের রয়েছে অধিক পরিমাণে বায়োটিন যা ত্বকের জন্য অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
সামুদ্রিক তেল যুক্ত মাছ নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করলে কিছু দিনের মধ্যেই দেখবেন আপনার ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল হয়েছে। এবং তার সাথে মুখের ব্রণ অনেক কমে গেছে।
উপসংহার
শীতকাল আমাদের জন্য খুবই আনন্দের একটি ঋতু। তাই শীতকাল সম্পর্কে আমাদের অনেক কিছু জানা দরকার যা আমরা আজকের এই আর্টিকেলে জানতে পারলাম। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।
শীতকাল বিষয়ে আপনার যদি আরো কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাকে জানাবেন। আজকে এ পর্যন্তই ।সকলে ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন । আর এতক্ষণ আমার সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url