কোলেস্টেরল বাড়লেই খাওয়া বন্ধ?তাহলে জেনে নিন কি কি খাওয়া বন্ধ?
গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের মধ্যে প্রতি 5 জনের ক্ষেত্রে একজনের মধ্যে শরীরে কোলেস্টেরলের আধিক্য দেখা যায়। প্রিয় পাঠক আজকে আমি আপনাদের জানাবো কোলেস্টেরল বাড়লে কি কি খাবেন এবং কিভাবে খাবেন।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে কিছু খাদ্যের বিষয়ে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট। চলুন তাহলে জেনে নেই।
ভূমিকা
আপনি কি কোলেস্টেরল পরীক্ষা করিয়েছেন? পরীক্ষার পর কি কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেক বেশি ধরা পড়েছে? যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে আপনি জেনে খুশি হবেন যে খাবারের মাধ্যমেও কোলেস্টেরল কমানো যায়। সেসব জানার আগে জেনে নেই কোলেস্টেরল আসলে কি।
কোলেস্টেরল কি
কোলেস্টেরল হলো এক ধরনের চর্বি। যা দেখতে অনেকটা মোমের মত। কোলেস্টেরল আমাদের দেহে কোষের দেয়ালে অবস্থিত। যখন আমরা চর্বি জাতীয় কিছু খাই তখন আমাদের যকৃত এই কোলেস্টেরলটি তৈরি হয় এবং রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে আমাদের দেহের সমস্ত রক্তনালীতে ছড়িয়ে পড়ে।
কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করে থাকে। যেমন হরমোন তৈরিতে, চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন গুলোর পরিপাকে এবং ভিটামিন ডি তৈরিতে।
কোলেস্টেরলের ধরন
কোলেস্টেরলকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ
- এল ডি এল বা লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন।
- এইচ ডি এল বা হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন।
এইচ ডি এল বা হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন অর্থাৎ বেশি ঘনত্ব যুক্ত প্রোটিন শরীরের জন্য উপকারী। এই কোলেস্টেরলটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আমাদের রক্তের তরলতা বজায় রাখতে পিত্তরস তৈরি করতে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি এবং নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অন্যদিকে এল ডি এল বা লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন হল কম ঘনত্ব যুক্ত লিপোপ্রোটিন বা খারাপ কোলেস্টেরল। এটি রক্তনালীতে জমে গিয়ে রক্তনালিকে সংকুচিত করে ফেলে, ফলে রক্ত প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়। বাধার সৃষ্টি হওয়ার কারণে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
কোলেস্টেরল বাড়ার লক্ষণ
যখন আমাদের শরীরে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বেড়ে যায় তখন শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় তবে অতিরিক্ত ঘাম, ক্লান্তিবোধ, দুর্বলতা, ক্ষুধা হ্রাসের মতো উপসর্গ দেখা যায় বেশি। এছাড়াও আরো কিছু উপসর্গ রয়েছে যেমন চোখের ওপরে ও নিচে হলুদ চর্বি জমা হতে পারে। এ ছাড়াও যদি কারো হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হওয়ার পর্যায়ে চলে যায় তখন প্রেসার বেড়ে যায় । বুকের বাম পাশে প্রচন্ড ব্যথা হয় অথবা বুকে ব্যথার লক্ষণও দেখা দিতে পারে।
রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে যে ধরনের খাবার খাবেন
জলপাইয়ের তেল বা জলপাইয়ের তৈরি খাদ্য
অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন ই। গবেষণায় দেখা গেছে ফ্যাটি এসিড দেহের খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে দেয় এবং ভালো কোলেস্টেরল কে বাড়াতে সাহায্য করে। তাই যদি কেউ কোলেস্টেরল কমাতে চাই তাহলে জলপাইয়ের তিল অথবা জলপাইয়ের তৈরি খাবার অবশ্যই খেতে হবে।
সবজি
সবজি দেহের কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেক কমায়। তাই বেশি বেশি করে সবজি খাবার অভ্যাস করতে হবে।
ননি ছাড়া দই এবং দুগ্ধজাত খাদ্য
যদি আপনি রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে চান তাহলে অবশ্যই ননীযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার বাদ দিতে হবে। তার মানে এই নয় যে আপনি দুধের তৈরি খাবার একদমই খাবেন না। দুগ্ধ জাতীয় খাবারে থাকে ক্যালসিয়াম ও মিনারেল।
এ ধরনের প্রয়োজনীয় উপাদান থেকে আমাদের শরীর বঞ্চিত হয়ে যাবে। এগুলো মানব শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। দুধের তৈরি খাবার অস্টিওপরেসিস প্রতিরোধে দারুন কার্যকর ভূমিকা রাখে।
এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল ও সবজি
সব ধরনের সবজি ও ফল আপনার কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। যেসব সবজিতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং বিটা ক্যারোটিন সেগুলো আরো বেশি পরিমাণে খেতে হবে।
ভিটামিন সি
ভিটামিন সি সব ধরনের সাইট্রাস ফলে রয়েছে। ভিটামিন সি এর উৎস হল কমলা, লেবু, পেয়ারা ইত্যাদি। আবার সব ধরনের বেরি জাতীয় ফল যেমনঃ স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি ইত্যাদি খেতে হবে। এছাড়াও পাতাকপিতে রয়েছে ভিটামিন সি।
বিটা ক্যারোটিন
গাড় হলুদ ফলে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। সবজির মধ্যে রয়েছে কুমড়া, মিষ্টি আলু, গাজর, ইত্যাদি। অন্য দিকে ফলের মধ্যে রয়েছে আম কাঁঠাল পেয়ারা পেয়ারা ইত্যাদি। যদি আপনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং আপনার শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তবে অবশ্যই নিয়মিত এ খাবার গুলো খেতে হবে।
মসলা
সুস্বাস্থ্যের জন্য রসুন এবং পেঁয়াজের কোন বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে রসুন খাওয়ার ইতিহাস বহু বছরের পুরনো।গবেষকরা বলেছেন রসুন, পেঁয়াজ এবং পেঁয়াজ জাতীয় বিভিন্ন খাবার শরীরের বাজে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং হৃদপিণ্ডকে ভালো রাখে।
মাছ
গবেষণায় দেখা গেছে যারা সপ্তাহে তিন দিন এবং তার বেশি সময় মাছ খায় তাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেক কম থাকে। যারা উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগে ভুগছেন তাদের জন্য মাছ খুবই উপকারী খাদ্য।
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড জাতীয় খাদ্য
আমরা অনেকেই জানি ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড শরীরে কোলেস্টেরল কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে দুর্ভাগ্যবশত অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে এই খাবার খেতে পারি না। সিম জাতীয় খাদ্য, ওয়ালনাট,জলপাই ইত্যাদির মধ্যে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড। আবার বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ব্যবহার করা হয়।
ভুট্টার তৈরি খাবার
সকালের নাস্তায় ভুট্টা বা জবের তৈরি ওটমিল বা কনফ্লেক্স হতে পারে একটি আদর্শ খাবার। এতে করে দিনের শুরুতেই এক থেকে দুই গ্রাম ক্যালরি খাওয়া যাবে যা আপনার অন্ত্রে কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দিবে।
বাদাম
প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম আপনার রক্তের ক্ষতিকর চর্বি অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও বাদাম খেলে আপনি ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পাবেন যা আপনার শরীরের শক্তি যোগাবে সারাদিন।
সামুদ্রিক মাছ
সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার চেষ্টা করবেন। সামুদ্রিক মাছের রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যা রক্তে ক্ষতিকর ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে।
রক্তে কোলেস্টেরল বাড়লে কি কি খাবেন না
- তেলে ভাজা কোনরকম জিনিস খাওয়া যাবেনা।
- ফাস্ট ফুড খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
- ধূমপান এবং অ্যালকোহল বাদ দিতে হবে।
- মেয়োনিজ জাতীয় খাদ্য একদমই বাদ।
- প্যাকেজড জাতীয় খাদ্য এড়িয়ে যাওয়া ভালো।
- তেল চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।
- ডিমের কুসুম একেবারেই খাওয়া যাবে না বিষয়টা এরকম না। তবে অল্প পরিমাণে খেতে পারেন।
শেষ কথা
স্বাভাবিকভাবে শরীর সুস্থ রাখতে কোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, ভুল ডায়েট, শরীরের মুভমেন্ট না থাকলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে পারে। যা থেকে কখনো হাই প্রেসার ও হার্ট অ্যাটাকের মত বড় ধরনের কোন সমস্যা হতে পারে। তাই আমাদের এইসব বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে।
প্রিয় পাঠক আশা করি আজকের আর্টিকেলটি থেকে আপনারা অনেক উপকৃত হয়েছেন। আজকে এ পর্যন্তই সকলে সুস্থ থাকবেন এবং ভালো থাকবেন। নিজের শরীরের যত্ন নিবেন। আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url