অফিসে ব্যস্ততার মধ্যেও কোন খাবারগুলো আপনার শরীর সুস্থ রাখবে বিস্তারিত জানুন
যাদের দিনের খুব বেশি সময় অফিসে কাটাতে হয় তাদের স্বাস্থ্যের জন্য খাবারের প্রতি নজর দেওয়া খুবই দরকার। কাজ করতে করতে ক্ষুধা পাওয়া, ক্লান্তি লাগা এসব স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রিয় পাঠক আজকে আমি আপনাদের জানাবো অফিসের ব্যস্ততার মাঝেও কোন খাবারগুলো আপনার শরীরকে সুস্থ রাখবে।
অনেকে অফিসে খিদে পেলে চট করে বাইরের কোন খাবার খেয়ে ফেলে। ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয় এবং আমরা অসুস্থ হয়ে যাই।
ভূমিকা
বর্তমান সময় প্রচন্ড ব্যস্ত থাকা মানুষের জীবনের যেন একটি নরমাল বিষয়। ঘর সংসার, কর্মক্ষেত্র সব মিলিয়ে যেন দম ফেলার মতো কোন সুযোগ নেই। কাজের ফাঁকে নিজের এবং নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া খুবই কঠিন একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেকের কাছে। তবে ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন নিজের শরীরের কথা চিন্তা করে কাজের ফাঁকেও নিজেকে গুছিয়ে রাখতে হবে সব সময়।
ব্যস্ততার মাঝেও যে খাবার গুলো আপনাকে সুস্থ রাখবে
অফিসে কাজের ফাঁকে নিজের ক্ষুধা মেটাতে বেছে নিতে পারেন কয়েকটি খাবার। কি সেই খাবারগুলো চলুন জেনে নেই।
বাদাম
অফিসে যাওয়ার পর অনেক সময় কাজের ফাঁকে আমাদের ক্ষুধা লেগে যায়। তখন শুকনা জাতীয় কিছু খেলে আমাদের অনেকটা এনার্জি চলে আসবে। তার মধ্যে একটি হল বাদাম।
ছোলা
ছোলা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। হজম শক্তি বাড়ানো ও ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ছোলা দারুন কার্যকর একটি উপাদান। শসা, পেঁয়াজ, টমেটো ইত্যাদির সাথে শসা মিশিয়ে কিছু লবণ মিশিয়ে খেতে পারেন।
ড্রাই ফ্রুটস
অফিসের ব্যাগ বা ড্রয়ারে রেখে দিতে পারেন বিভিন্ন রকম ড্রাই ফ্রুটস। কাঠ বাদাম, পেস্তা, আখরোট, কাজুবাদাম, কিসমিস। ক্ষুধা লাগলে কাজের ফাঁকে জাঙ্কফুড না খেয়ে এ ধরনের খাবার গুলো খেলে আপনার শরীরে অনেক এনার্জি দিবে।
ডার্ক চকলেট
৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কোকয়াসমৃদ্ধ চকলেট কে বলা হয় ডার্ক চকলেট। এতে থাকা ট্রিপটফেন নামক একটি উপাদান রয়েছে যা আমাদের বিষন্নতা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি মস্তিষ্কের ডোপামিন বাড়িয়ে দেই ফলে আমাদের শরীরে প্রশান্তি চলে আসে। তাই অফিসে কাজের ফাঁকে খাওয়ার মত কম চিনিযুক্ত ডার্ক চকলেট খেতে পারেন।
ক্যাফেইন
অফিসে বসে চা কফি পান করা যেন আমাদের রেগুলার রুটিন। তবে এটি কিছুক্ষণের জন্য আমাদের শরীরকে চাঙ্গা করে ঠিকই, কিন্তু অতিরিক্ত পরিমানে পান করা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ। তাই অতিরিক্ত চা কফি না খেয়ে গ্রিন টি খেতে পারেন।
ফলমূল
কাজের ফাঁকে খেতে পারেন বিভিন্ন রকম মৌসুমী ফল। আপেল এবং কলা জাতীয় ফল খাবারের উপযোগী করার জন্য কোন কিছু অগ্রিম প্রস্তুতি লাগে না। এছাড়াও এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য প্রচুর উপকারী। তাই এসব টাটকা ফলগুলি সব সময় হাতের কাছে রেখে দিবেন। যাতে কাজের ফাঁকে একটু ক্ষুধা লাগলে যেকোনো সময় খাওয়া যায়।
কালো ছোলা ভাজা
কালো ছোলা ভাজা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অন্যরকম একটি খাবার। কালো ছোলা পরিমাণ মতো নিয়ে কম আগুনে হালকা আচে ভেজে ফেলুন। তারপর এটি একটি কাঁচের জারে সংরক্ষণ করে ফেলুন। পরের দিন অফিসে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবেন এবং কাজের ফাঁকে ক্ষুধা লাগলে চটজলটি খেয়ে ফেলতে পারবেন। কালো ছোলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট ফাইবার এবং প্রোটিন।
চালভাজা
আপনি একসঙ্গে একটি পাত্রে মোটা এবং চিকন চাল একসাথে ভেজে নিতে পারেন। চাইলে এর মধ্যে হালকা মটরশুটি অ্যাড করে দিবেন। এগুলোকে মাঝারি আঁচে ততক্ষণ পর্যন্ত ভাজুন যতক্ষণ পর্যন্ত এগুলো কুচকে না যাই। তারপর এটি একটি জারে সংরক্ষণ করুন।
সিদ্ধ ডিম
সিদ্ধ ডিম হতে পারে অফিসে কাজের ফাঁকে খাওয়ার মত একটি চমৎকার খাবার। অফিসে যাওয়ার সময় বাড়িতে করে কয়েকটি সিদ্ধ ডিম নিয়ে যান। ক্ষুধা লাগলে একটি সিদ্ধ ডিম খেয়ে হালকা পানি খেয়ে নিন।
টক দই
হাতের কাছে টক দই রাখতে পারেন। ক্ষুধা লাগলে ফলের সঙ্গে মিশিয়ে খেয়ে নিন। এতে করে আপনার শরীরে অনেক শক্তি যোগাবে এবং আপনি এনার্জি পাবেন।
খাবারের তালিকা
অফিসে বিভিন্ন কাজে যাবে আমরা ঠিকঠাক মতো তিন বেলার খাওয়া দাওয়া করি না। হলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। হজমে সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যসহ বিভিন্ন জটিল অসুখেও একসময় পড়ে যায়। তাই আমাদের তিন তিন বেলা খাবারের রুটিন ঠিকঠাক মতো করতে হবে।
সকালের খাবার
সকালে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে রুটি সবজি ডিম অথবা দুধ জাতীয় খাবার যে কোন ফল খাবার তালিকায় রাখতে হবে। মনে রাখবেন সকালের নাস্তা একটু পুষ্টিকর হওয়ার জরুরী সকলের খাবার আপনার সারাদিনের কর্মদক্ষতা এবং মনোযোগ বৃদ্ধিতে প্রচুর প্রভাব ফেলে। তাই যতই তাড়াহুড়া হোক না কেন সকালের খাবারটা আমাদের খাওয়া উচিত।
মধ্য সকালের নাস্তা
সকাল ১১ টা থেকে বারোটার মধ্যে এক মুঠো বাদাম বা যে কোন ধরনের ফল তিনি ছাড়া এক কাপ কফি বা গ্রিন টি খাওয়া দরকার। ভুলেও এই সময়ের মধ্যে কখনোই সিঙ্গারা সমুচা পুরী এরকম জাঙ্ক ফুড জাতীয় খাবার খাওয়া যাবেনা। এতে করে আমাদের পেটে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
দুপুরের খাবার
বেলা একটা থেকে দুইটার মধ্যে এক প্লেট ভাত সাথে এক টুকরো মাছ বা এক দুই টুকরো মাংস শাকসবজি বা সালাদ এক বাটি ডাল বাসা থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। ঠিক সময় মত এই খাবারগুলো খেয়ে পানি খেয়ে নিন। কখনোই দুপুরের খাবার এড়িয়ে চলা যাবে না।
বিকালের নাস্তা
বিকালে চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে বিভিন্ন রকম ফলমূল খেতে পারেন। যেমন পেয়ারা আপেল অথবা কলা ইত্যাদি। এছাড়াও এই সময়ের মধ্যে হালকা বিস্কুট খেতে পারেন।
রাতের খাবার
রাতের আটটা থেকে নয়টার মধ্যেই রাতের খাবার খেয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। রাতের খাবার রাখতে পারেন পাতলা দুইটা রুটি, দুই তিন টুকরা মাংস সবজি সালাদ। তবে ঘুমানোর আগে এক কাপ টক দই বা কম চর্বিযুক্ত দুধ খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
ডেস্কে বসে খাবেন না
অনেকেই বিভিন্ন রকম কাজের চাপে কিংবা বিভিন্ন কারনে ডেস্ক ছেড়ে উঠে যেতে চান না। এমনকি নিজেদের খাবারটাও সেখানেই বসে খেয়ে ফেলেন। এমনটা মোটেও করবেন না। খাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে নিজেদের খাবার খেয়ে নিন। এছাড়া প্রতি ঘন্টা পর পর অন্তত দুই থেকে তিন মিনিট হাঁটার চেষ্টা করবেন। খেয়ে উঠে সঙ্গে সঙ্গে কাজ করতে বসবেন না।
বরং কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন। খাওয়া শেষ করে অতিরিক্ত পানি খাওয়া যাবেনা। বরং কিছুক্ষণ পরে কয়েক গ্লাস পানি খেয়ে নিন এবং হাটাহাটি করে তারপর আবার কাজ করতে শুরু করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করবেন এতে করে আমাদের হজম ভালো হবে।
জাঙ্ক ফুড এবং কোল্ড ড্রিংকস এড়িয়ে চলুন
আমাদের মধ্যে অনেকেই অফিসে কাজের ফাঁকে বিভিন্ন রকম ভাজাপোড়া এবং কোলড্রিংস খেয়ে থাকেন। যদি আমরা সুস্বাস্থ্য পেতে চাই তাহলে কখনোই এ ধরনের খাবার খাওয়া যাবে না। সুস্বাস্থ্যের জন্য চাই পুষ্টিকর খাবার। আবার অনেকেই সকালে না খেয়ে খালি পেটে চলে যান।
অফিসে বসে মশলা দেয় বিভিন্ন রকম জাঙ্ক ফুড খেয়ে থাকেন। এগুলো আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।এতে করে সারাদিন বসে থাকার পরে শরীরের ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যায়।
অফিস শেষ করে হাঁটুন
সম্ভব হলে অফিসে ছুটির পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করুন। কিংবা যাদের বাসা খুব কাছেই তারা সবসময় অফিস থেকে হেঁটে যাওয়া আসা করার চেষ্টা করবেন। কবে ফিরে যাওয়া আসার সময় হাটাহাটি করলে আপনার শরীর সুস্থ এবং কর্মক্ষম থাকবে। ফলে শরীরের ওজন বাড়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না।
বাসায় বানানো খাবার অফিসে নিয়ে যাবেন
আমরা অনেকেই বাসায় খাবার বানানোর আলসেমির কারণে বাইরের বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকে। বাইরে সব খাবার কিন্তু স্বাস্থ্যকর হয় না। তাই নিজের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য পাশাপাশি অযথা খরচ কমানোর জন্য আপনি বাসা থেকে খাবার নিয়ে যেতে পারেন।
শেষ কথা
আশা করছি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করবেন। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। আমার আজকে এই পর্যন্তই। দেখা হবে পরের কোন পোস্টে। আর এতক্ষণ ধরে আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url