তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি ওজন কমাবে কোন পানি ও নিরাময় হবে রোগ
তৃষ্ণা মেটানোর জন্য আমরা পানি খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা এমন কিছু পানিয় রয়েছে যা খাওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরের ওজন কমাতে পারি এবং তার সাথে বিভিন্ন রোগ নিরাময় করতে পারি। প্রিয় পাঠক আজকে আলোচনার বিষয় হলো তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি ওজন কমাবে কোন পানি ও নিরাময় হবে রোগ সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে।
দৈনিক ৮ গ্লাস পানি পান করলে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে। নিয়ম করে ঠিকঠাক মতো পানি খেলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম রোগব্যাধি থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি।চলুন তাহলে জেনে নেই তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি ওজন কমাবে কোন পানি ও নিরাময় হবে রোগ সে সম্পর্কে।
ভূমিকা
তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি ওজন কমাবে কোন পানি ও নিরাময় হবে রোগ সেটা জানতে হলে আমার আর্টিকেলের সাথেই থাকুন। দেহে প্রায়৬০ শতাংশ রয়েছে পানি। তবে গরমের সময় পরিমাণের তুলনায় একটু বেশি পানির চাহিদা হয়ে থাকে শরীরে। তখন তুলনামূলক একটু বেশি পানি পান করে আমাদের শরীরের পানির ভারসাম্য সঠিক রাখতে হয়। কিন্তু শীতকালে তাপমাত্রা কম থাকার ফলে অনেক সময় পানি কম খাওয়া হয়। যার ফলে অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি ওজন কমাবে কোন পানি ও নিরাময় হবে রোগ
বিশ্বজুড়ে রয়েছে ডিটক্স ওয়াটার নামক এক পানির জনপ্রিয়তা। কমবেশি সবাই ডিটক্স ওয়াটার ফ্যাট ঝরানোর জন্য পান করে থাকে। কিন্তু কিভাবে ডিটক্স ওয়াটার আপনি তৈরি করবেন। এই বিষয় নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই কোন ধারণা নেই। গরমে তৃষ্ণা মেটাতে ডিটক্স ওয়াটার যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি আমাদের শরীরের ওজন কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ।
ডিটক্স ওয়াটার হল ফ্রুট ইনফিউজড ওয়াটার অর্থাৎ ফল মেশানো পানি। কিভাবে ডিটক্স ওয়াটার প্রস্তুত করা যায় আজকে সেটা নিয়ে আপনাদের বিস্তারিত ধারণা দেবো। চলুন তাহলে শুরু করা যাকঃ
কমলার ডিটক্স ওয়াটার
আমরা কম বেশি সকলে জানি কমলা তে রয়েছে ভিটামিন সি। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমাদের শরীরে ফ্যাট জমিয়ে রাখার বদলে তা ভেঙে শক্তিতে রূপান্তর করে। তাই ওজন কমাতে কমলার ডিটক্স ওয়াটার খুব গুরুত্বপূর্ণ। গরমে কমলালেবুর টুকরো কয়েক ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখার পরে সেটি পান করলে আপনার শরীরে মিলবে অনেক রকমের পুষ্টিগুণ।
শসার ডিটক্স ওয়াটার
ওজন কমাতে শসা দারুন কার্যকরী একটি উপাদান। দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন বি পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় পুষ্টি উপাদান থাকে শসার মধ্যে যা আমাদের ওজন কমাতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। শসাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে আমাদের ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। শসার ডিটক্স ওয়াটার বানানোর জন্য এক গ্লাস পানিতে কয়েক টুকরো শসা রেখে দিন এবং কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত রেখে দেওয়ার পরে তা পান করুন। আপনি চাইলে এর সাথে লেবু বা পুদিনা পাতাও এড করতে পারেন।
লেবুর ডিটক্স ওয়াটার
ওজন কমানোর জন্য লেবু একটি সেরা খাদ্য উপাদান। নিয়মিত খাবারের আগে লেবুর ডিটক্স ওয়াটার পান করতে পারলে আমাদের শরীরের ওজন খুব তাড়াতাড়ি কমে যাবে। এছাড়াও আমাদের শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমতে সাহায্য করে লেবু। এছাড়াও আমাদের বিপাক প্রক্রিয়া বাড়িয়ে তুলে। লেবুর ডিটক্স ওয়াটার বানানোর জন্য এক গ্লাস পানিতে কয়েক টুকরো লেবু দিয়ে কয়েক ঘন্টা রেখে দিন এবং তারপরে পান করুন।
আপেল এবং দারুচিনি ডিটক্স ওয়াটার
আপেল এবং দারুচিনির ওয়াটার আমাদের শরীরের ওজন কমাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এটি খুব আশ্চর্যজনক একটি ফ্যাট বার্নিং কম্বিনেশন। এক গ্লাস পানিতে কয়েক টুকরো আপেল এবং দারুচিনি দিয়ে কয়েক ঘণ্টা রেখে দিন। তারপর এটি প্রতিদিন নিয়ম করে পান করুন এতে করে আপনার ওজন কমে যাবে।
লেবু এবং চিয়া সিড মিশ্রিত পানি
বাড়তি ওজন জড়িয়ে ফেলার আরও একটি কার্যকরী উপাদান হলো লেবু এবং চিয়া সিড মিশ্রিত পানি। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা অল্প খেলেই আমাদের পেট ভরে যায়। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড যা আমাদের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এক গ্লাস চিয়া সিড সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে তার মধ্যে লেবু পানি মিশ্রিত করে জুস বানিয়ে সেটি পান করে নিন। এটি কয়েকদিন খাবার ফলে আপনার শরীরের ওজন অনেক কমে যাবে।এই পানিয় শুধু আমাদের শরীরের ওজন কমায় না,আমাদের শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে।
বিটরুটের জুস
খুব পুষ্টিকর এবং কম ক্যালরিযুক্ত এই ফল। বিটরুটে রয়েছে প্রচুর প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান। বিউটরের জুস খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও লিভার এবং লিভার বা যকৃতের স্বাভাবিক ক্রিয়া বজায় রাখে।
আপেল সাইডার ভিনেগার এবং হলুদের মিশ্রণ
আপের সাইডার ভিনেগার এবং হলুদের মিশ্রণ খেতে হয়তো খুব একটা ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু এই পানীয় খেলে আপনার শরীরে যে পরিমাণ উপকার হবে তা আপনার কল্পনার বাইরে। আপেল সাইডার ভিনেগার ও হলুদের মিশ্রণ শরীরের বিপাকক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং হজমে সাহায্য করে। অন্যদিকে হলুদে রয়েছে কারকিউমিন, যা আমাদের শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
ডাবের পানি কিভাবে শরীরের ওজন কমায়
আমরা অনেকেই তৃষ্ণা মেটাতে ডাবের পানি খেয়ে থাকি। এছাড়াও এই পানি আমাদের কাছে খুবই পছন্দের। আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে থাকে ডাবের পানি। যে কোন পরিশ্রম করার পর শরীরের শক্তি খুব কম সময়ে বাড়ানোর জন্য আমরা ডাবের পানি খেয়ে থাকি। এছাড়া ত্বক এবং চুলের যত্নে ডাবের পানির কোন বিকল্প নেই। আপনি যদি শরীরের ওজন কমানোর জন্য ডাবের পানি খেয়ে থাকেন তাহলে এটি আপনার জন্য খুবই কার্যকরী। চলুন জেনে নেই ডাবের পানি কিভাবে আপনার শরীরের ওজন কমায়।
ক্যালোরির চাহিদা কমায়
ডাবের পানিতে ক্যালরি কম থাকার কারণে এতে পটাশিয়াম ফাইবার এবং প্রোটিনসহ প্রাকৃতিক এনজাইম গুলো অনেক বেশি পরিমাণে থাকে। এজন্যই ডাবের পানিকে ওজন কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পানীয় ধরা হয়।
পুষ্টিগুণে ভরপুর
ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই খনিজ লবণ এবং একাধিক আরো পুষ্টি। যা শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
ফাইবারের পরিমাণ বেশি
ডাবের পানিতে রয়েছে সহজ পাত্র ফাইবার যা খুব সহজে হজম হয়ে যায়। খাবার হজম এর সঙ্গে বিপাক ক্রিয়ার অনেক অবদান রয়েছে তা আপনারা সবাই কমবেশি জানেন। যার কারণে ওজন কমাতে সাহায্য করে ডাবের পানি।
বিপাক হার উন্নত করে
ডাবের পানিতে রয়েছে পটাশিয়াম যা আমাদের বিপাক ক্রিয়া সহজ করে দেয়। বিপাক হার ভালো হলে মেদ ঝরাতে খুব সাহায্য করে। শুধু তাই নয় পাশাপাশি আমাদের শরীর অনেক সুস্থ থাকে।
খিদে পাওয়ার প্রবণতা কমায়
ডাবের পানিতে যে ফ্যাট রয়েছে তা আমাদের হার্টের জন্য খুবই কার্যকর একটি উপাদান। একইসঙ্গে আমাদের খিদা কমাতেও সাহায্য করে ডাবের পানি। ডাবের পানি খাওয়া নির্দিষ্ট কোন সময় নাই। আপনি যে কোন সময় এই পানি খেতে পারেন। তবে সকালে খালি পেটে ডাবের পানি খুব সাহায্য করতে পারে। এতে রয়েছে ল্যারিক অ্যাসিড যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং একই সাথে ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
ওজন কমানো যাবে এরকম আরো কিছু পানীয় নিয়ে টিপস
- ডালিম আয়রন সমৃদ্ধ একটি ফল। যা আমাদের শরীরের হিমোগ্লোবিন বাড়াতে খুবই কার্যকর। এছাড়াও এই লাল ফলে রয়েছে ফলে ভিটামিন কি এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই আমাদের শরীরে চর্বি পোড়াতেও সাহায্য করে।
- তরমুজে থাকে৭০ শতাংশ পানি। অ্যামিনো এসিড আরজিনিন সমৃদ্ধ এই তরমুজ আমাদের শরীরে চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও পেশির ব্যথা সারাতে দারুন কার্যকর তরমুজ।
- করলার নাম শুনলে অনেকেই ভয় পেয়ে যান। কিন্তু করলা আমাদের শরীরে কি পরিমান উপকারী সে সম্পর্কে আপনাদের কোন ধারণাও নেই। অনেকেই হয়তো জানে না করলার মধ্যে ভিটামিন ভিটামিন সি রয়েছে।
- করলার রস আমাদের শরীরের ওজন কমানোর পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য করলার রস ভীষণ উপকারী। করলার মধ্যে রয়েছে আয়রন ম্যাগনেসিয়াম ভিটামিন এবং পটাশিয়াম। যা আমাদের শরীরে বিপাকক্রিয়াকে সহজ করে তোলে এবং রক্ত পরিষ্কার করে আর অল্প সময়ের মধ্যেই শরীরে প্রচুর পরিমাণে চর্বি পোড়ায়।
দারুচিনির চা
দারুচিনির গন্ধ অনেকেই সহ্য করতে পারেন না। আবার অনেকেই দারুচিনি ছাড়া চা ই খেতে পছন্দ করেন না। তবে দারুচিনি আমাদের শরীরের জন্য বেশ স্বাস্থ্যকর একটি উপাদান। দারুচিনি আমাদের শরীরে রক্তের শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করে। দারুচিনির স্বাদ চিনির প্রতি আসক্তি কমিয়ে দেই।
দারুচিনির চা তৈরি করতে প্রথমে কয়েকটি দারুচিনি দিয়ে পানি গরম করে নিন তারপর চা পাতি দিয়ে সুন্দর করে একটি চা বানিয়ে ফেলুন। এই চা আমাদের শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
সুস্থ থাকতে বেশি বেশি পানি পান
শুনতে অবাক হলে এটি সত্য যে পানি পান আমাদের দেহের অনেক রোগ ব্যাধি ধরে রাখে এবং ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গ্রীষ্মকালীন তাপদাহে আর্দ্র থাকতেও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার জরুরী আমাদের প্রত্যেকের। তবে যারা ওজন কমানোর যাত্রায় আছেন তাদের পর্যাপ্ত পানি পান করার বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ।
বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে, ভাজাপোড়া এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দেওয়া, শারীরিক কষ্টতে মনোযোগী হওয়া এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর বিষয় অভ্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে আমাদের শরীরে ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে কোমল পানীয় এবং অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত।
তৃষ্ণা মেটানোর জন্য শুধু পানি পান করলে দেহে অতিরিক্ত ক্যালোরি যুক্ত হয় না এবং আমাদের শরীরে বিপাকিও কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়। অন্য এক গবেষণায় জানা যায়, প্রতিদিন আধা লিটার পানি পানের মাধ্যমে শরীরে জমে থাকা শক্তি খরচে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। অর্থাৎ যারা দিনে তিন লিটার পানি পান করে না তাদের তুলনায় যারা দিনে তিনটে পানি পান করে তাদের বেশি ক্যালরি খরচ করার সামর্থ্য থাকে।
বিশ্রামে থাকার সময় পানি শুধু আমাদের ক্যালোরি পোড়াতে নয় বরং আমাদের শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে মনে রাখতে হবে, আপনি প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলেন কিন্তু সঠিক নিয়মে খাবার খেলেন না বা নিয়মিত ব্যায়াম করলেন না, ভালো ঘুম দিলেন না, তাহলে আপনার শরীরের রোগ নিরাময় হবে না এবং আপনার ওজন কমবে না।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আমরা বিভিন্ন পানীয় নিয়ে অনেক কথা আলোচনা করলাম। জানলাম তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি ওজন কমাবে কোন পানি ও নিরাময় হবে রোগ সেগুলো নিয়ে বিভিন্ন কথা।আশা করছি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করবেন।
সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। আমার আজকে এই পর্যন্তই। দেখা হবে পরের কোন পোস্টে। আর এতক্ষণ ধরে আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url