সুপার ফুড তিসির ভালো ও মন্দ গুণাগুণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
সুপার ফুড তিসির ভালো ও মন্দ গুণাগুণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেরই ধারনা রয়েছে।অনেক আগে তিসির খুব চাহিদা ছিল। কিন্তু এখন তিসি নামে না চিনলেও সবাই ফ্লাক্স সিড নামে চিনে থাকে। প্রিয় পাঠক আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব সুপার ফুড তিসির ভালো ও মন্দ গুণাগুণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে।
আপনাদের মনে এখন অনেক ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে যে তিসিকে সুপার ফুড কেন বলা হয়? সাধারণত শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে পারে বলে এটিকে সুপারফুড বলা হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেই সুপার ফুড তিসির ভালো ও মন্দ গুণাগুণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে।
ভূমিকা
সুপার ফুড তিসির ভালো ও মন্দ গুণাগুণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি সবার ধারনা থাকলেও তিসির ব্যবহার হয়তো খুব কম মানুষই করে থাকে। তিসি এক ধরনের তেলের বিজ জাতীয় দানা। স্নেহ জাতীয় এই দানা দেখতে খুব ছোট হলেও এর পুষ্টিগুণ আগুন এবং উপকারিতা বলে আসলে শেষ করার মত নয়। এতে রয়েছে ওমেগা থ্রি ও সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড। এছাড়াও রয়েছে পটাশিয়াম, ভিটামিন বি, সুগার, ফাইবার সহ আরো বিভিন্ন রকম পুষ্টি উপাদান।
সুপার ফুড তিসির ভালো ও মন্দ গুণাগুণ এবং উপকারিতা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
এখনকার দিনে আমাদের কম বেশি সকলেরই ডায়াবেটিস রয়েছে। এই সমস্যাটা নিয়ে আমরা সবাই ভুগে থাকি। ইনসুলিনের ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে তিসির কোন বিকল্প নেই। তিসির ফাইবারগুলি লিগনান্ট দিয়ে তৈরি হয় যার রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
হার্ট ভালো রাখে
তিসির বিজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো এসিড সহ গ্লুটামাইন। এই দুটো উপাদানে আমাদের হার্ট ভালো রাখতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই হার্ট ভালো রাখতে চাইলে প্রতিদিন তিসি খাওয়ার অভ্যাস করা দরকার।
রক্তচাপ কমাতে
আমাদের ধমনীতে কোন রক্ত জমাট বেঁধে গেলে সেটা ঠিক করতে তিসি খুব গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে তিসি। পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্তচাপ সহ আমাদের রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
তিসি আমাদের শরীরে হজম ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। কেননা এর মধ্যে রয়েছে এক ধরনের ফাইবার। যার কারণে এই ফাইবার গুলো কষ্টকে নরম করে এবং অন্ত্রের টক্সিন গুলো বের করে আনতে সহায়তা করে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
এই বীজের মধ্যে এক ধরনের লিগন্যান্ট থাকায় এটি ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করে। এর মধ্যে থাকা উপাদান গুলো শরীরের টিউমার হতে দেয় না। এছাড়াও এই বীজ আমাদের শরীরে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
স্নায়ুতন্ত্রের জন্য উপকার
এই ব্রিজের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপাদান গুলো উপস্থিতির কারণে আমাদের শরীরে কোষের ক্ষতি করে এমন অক্সটেটিভ চাপ আসতে দেয় না। অতএব নিউরনের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে।
হাড় মজবুত হয়
তিসির বীজের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম চাহিদা পূরণ করে থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। কৃষি বিষের মধ্যে থাকা মিনারেল যেমন ক্যালসিয়াম আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা আমাদের শরীরের হাড়কে মজবুত করতে পারে।
শরীরের ব্যথা কমাতে
তিসির বীজের মধ্যে রয়েছে আলফা লিনোলেনিক নামক এক ধরনের উপাদান। যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম ব্যথা দূর করে। যেমন হাঁটুতে ব্যথা কোমরে ব্যথা বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা ইত্যাদি। বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে এই বীজ আমাদের শরীরে আর্থ্রাইটিসের ব্যথা দূর করে।
ওজন কমাতে তিসি
অনেকেই হয়তো জানেন না যে তিসি খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট বা ওজন কমে যায়। তিসির বীজের মধ্যে রয়েছে ডায়েটারি ফাইবার যা আমাদের শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেছে যে নিয়মিত প্রায় ৩০ গ্রামের মতো ফাইবার খেতে পারলে আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝরে যাবে।
এছাড়াও উচ্চ প্রোটিনযুক্ত ফাইবার খেতে পারলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের সমাধান হয় যেমন ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ। তাই আপনি যদি আপনার শরীরের ওজন কমাতে চান তাহলে প্রতিদিন তিসি খাওয়ার অভ্যাস করুন। তিসি খাওয়ার ফলে আপনি আপনার ওজন খুব সহজেই কমাতে পারবেন।
মধ্যে কিছু ঔষধীয় গুণ রয়েছে যার কারণে আমাদের শরীরের ওজন খুব সহজেই কমে যায়। এছাড়াও এই বী জ গুঁড়ো করে দই বা চিড়ার সাথে খেতে পারলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও আমের চাটনি বা ওটমিলে পিসির ব্যবহার করা যেতে পারে।
চুলের যত্নে তিসি
কমবেশি আমরা সবাই চুল বা ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক কিছু উপাদান ব্যবহার করে থাকি। বিশেষ করে যখন চুলের কথা আসে তখন আমরা সব প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে থাকি। চুলকে প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর করতে সাহায্য করে তিসির বীজ। তিসির বীজ আমাদের চুলের গোড়া থেকে মজবুত করতে সাহায্য করে এবং চুলকে করে মসৃণ।
এজন্য চুলের জেল হিসেবে বা তিসির হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে পারি। চুলের মাস্ক হিসেবে তিসির ব্যবহার করা যেতে পারে। তিসির বিজে রয়েছে ভিটামিন ই। যার কারণে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত চুলকে সুন্দর করে তুলতে সহায়তা করে। খুব কম সময়ে তাড়াতাড়ি চুল বড় করতে চাইলে তিসির কোন বিকল্প নেই।
তেলের সাথে তিসির বীজ ভালোভাবে গরম করে সেটি সুন্দরভাবে মাথার চুলে লাগান। এতে করে চুল পড়া কমে যাবে।
ত্বকের যত্নে তিসি
ত্বকের যত্নে তিসি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।বলা যায় ত্বকের জন্য তিসি একটি জাদুকরী উপাদান।ত্বকের বলিরেখাসহ চামড়া কুঁচকে যাওয়ার মতো বিভিন্ন সমস্যা দুর করে।তিসির মধ্যে থাকা আলফা লাইনোলেনিক নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে যা আমাদের ত্বককে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
ত্বকের ডেডসেল গুলো ভেতর থেকে পরিষ্কার করে তিসির বীজ। ত্বকের ফোলাভাব সহ, লালচে দাগ ইত্যাদি সাহায্য করে।আবার আমাদের অনেকেরই চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল আছে,ডার্ক সার্কেল দুর করতে সাহায্য করে তিসি। তিসির তেল আমাদের ত্বকের ব্রণের সমস্যা দূর করে।এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড যা আমাদের চেহারার তারুণ্যতা ধরে রাখে।
তিসির জেল বানিয়ে তার মধ্যে চালের গুঁড়া,মধু, অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। এছাড়াও ত্বকের মশ্চারাইজার হিসাবে তিসির ব্যবহার করা যেতে পারে।ত্বক সুস্থ ও উজ্জল রাখতে সাহায্য করে থাকে তিসি।
তিসি কিভাবে খাবেন, কতটুকু খাবেন
তিসি প্রথমে সুন্দরভাবে ভেজে নিতে হবে।তারপর সেটি একটি কাঁচের জারে ভালোভাবে সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন।তারপর সেটি সকালের নাস্তায় খেতে পারবেন।দইয়ের সাথে খেতে পারবেন।সালাদের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।কিন্তু তিসি তেল জাতীয় হওয়ার কারণে বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায়না।
তাই কম পরিমাণে ভেজে সংরক্ষণ করতে হবে।প্রতিদিন একটি মানুষ সর্বোচ্চ ৩০ গ্রাম তিসি খেতে পারবে।তবে অতিরিক্ত তিসি খেয়ে ফেললে পেটে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।যেমন:পেটে গ্যাস,পেট ব্যাথা,পেট ফোলা ইত্যাদি।তাই উচ্চমাত্রায় তিসি খাওয়া যাবেনা কখনোই।এই বিষয়টা সবসময় খেয়াল রাখতে হবে আমাদের।
গর্ভবতী মায়েদের এবং একদম ছোট বাচ্চাদের তিসি বীজ খাওয়া একদমই ঠিক নয়। কেননা এই বীজের মধ্যে রয়েছে এন্টি মাইক্রোবাস উপাদান যা গর্ভবতী মায়েদের এবং ছোট বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকর। আবার আপনি যদি কোন রোগের কারণে নিয়মিত ওষুধ খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য একদমই ক্ষতিকর।
অন্যান্য ওষুধের সাথে এই বিজ প্রতিক্রিয়া করে এবং আপনার শরীরে বিভিন্ন রকম ক্ষতির কারণে দাঁড়াতে পারে। তিসির বীজ অনেক বেশি পরিমাণে গ্রহণ করে ফেললে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম চুলকানি বা ছোট ছোট রেস বের হতে পারে। বিশেষ করে যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের খাওয়া একদমই উচিত নয়।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আমরা জানলাম সুপার ফুড তিসির ভালো ও মন্দ গুণাগুণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।যদি আমার আর্টিকেল আপনার কাজে এসে থাকে বা ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।আর যদি কিছু জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই আমাকে কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
আজকে এই পর্যন্তই। দেখা হবে পরের কোন আর্টিকেল নিয়ে। সেই পর্যন্ত সকালে ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। আর এতক্ষণ আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url