ভুড়ি কমানোর জন্য কি খেতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

শরীরের বাহ্যিক গঠন নিয়ে আমাদের অনেকেই বেশ সচেতন। আবার শরীরের অনেক সময় মেদ বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে ভুরি বেড়ে যায়। প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আলোচনা করব ভুঁড়ি কমানোর জন্য কি খেতে হবে সেগুলো নিয়ে।
ভুড়ি কমানোর জন্য কি খেতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
পেটের মেদ কোন বাহ্যিক সমস্যা নয়। কেবলমাত্র দেখতেই খারাপ লাগছে বলে যে ভুড়ি কমাতে হবে এই ধারণা মন থেকে সর্বপ্রথম বাদ দিতে হবে।

ভূমিকা

শুধুমাত্র শরীরের একটি অংশ পেটের চর্বির দিকে মনোযোগ না দিয়ে শরীরে প্রত্যেকটি অংশের উপর আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। পেটের চর্বি কমানোর অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে পুরো শরীরের চর্বি কমানো। শরীরের ফ্যাট কমে গেলে আস্তে আস্তে পেটের চর্বিও কমতে থাকবে। ওজন অনুশীলনের মত ব্যায়াম করে নিজের মেটাবলিজম বাড়িয়ে তুলতে হবে।

ভুড়ি কমানোর জন্য কি খাওয়া জরুরি

নিয়মিত খাদ্যব্যাস ও সঠিক জীবন যাপনের মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরে বাড়তি মেদগুলো ঝরিয়ে ফেলতে পারি। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক পেটের ভুড়ি কমানোর জন্য কি ধরনের খাবার খেতে হবেঃ

বিনস খেলেই সমস্যার সমাধান

বিনস বলতে কিন্তু এখানে কিডনি বিনসের কথা বলা হয়েছে। এই খাবারটি এখন অনেক সহজলভ্য হয়ে গেছে। এমনকি উত্তর ভারতে এর প্রচলন অনেকটা বেশি। সেখানকার বাসিন্দারা বিনসের তরকারি খেয়ে থাকেন। তবে বাঙ্গালীদের মধ্যে এই খাবারের প্রচলন খুবই কম বা নেই বললেই চলে। তাই ভুড়ি কমানোর জন্য অবশ্যই বিনস খাবার তালিকায় রাখতে হবে।

টক দই

গরমকালে টক দই খেলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। শরীর ঠান্ডা থাকে। এবং তীব্র গরমের মধ্যে দইয়ের ঘোল খাওয়ার প্রচলন রয়েছে অনেক জায়গায়। মনে রাখবেন ভুড়ি কমাতে চাইলে আপনার হাতিয়ার হবে দই। তবে এক্ষেত্রে ফ্যাটলেস দুধের টক দই খেতে হবে না হলে কোন কাজ হবে না। গবেষণায় দেখা গেছে টক দই দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।

ব্রকলি

ব্রকলিট চলন এখনো আমাদের রাজ্যে তেমনভাবে নেই বললেই চলে। তবে বর্তমানে স্বাস্থ্য সচেতন শহুরে নাগরিকরা ডায়েটের চাটে ব্রগলি রেখে থাকেন। এতে রয়েছে ভিটামিন সি। পাশাপাশি এটি ফাইবারের একটি বড় উৎস। এই সবজি খেলে আমাদের পেট অনেকক্ষণ পর্যন্ত ভরা থাকে। যার ফলে খুব সহজে খিদে পায় না। আপনি চাইলে এই সবজি সালাদ এবং তরকারি রান্না করে খেতে পারেন।

ভিনেগার থেকেও উপকার হবে

আমাদের মধ্যে অনেকে আপেল সিডার ভিনেগারের নাম শুনেছেন হয়তোবা। এই ভিনেগার কিন্তু আমাদের শরীরের বহু সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে। আসলে ভিনেগারের মধ্যে থাকে অ্যাসিটিক অ্যাসিড যা আমাদের শরীরের ফ্যাট মেটাবলিজম শুরু করে দেয়। ফলে দ্রুত ফ্যাট ঝরতে সাহায্য করে। তবে ভিনেগার খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।

ভুড়ি কমাতে ওটস ও ডালিয়া

ভুড়ি কমাতে এই দুই শস্য দানার কোনো বিকল্প নেই। এই দুটি উপাদান ফাইবারে ভরপুর। আর ভুড়ি কমাতে ফাইবার শরীরের খুবই কাজে আসে। তাই ওটস এবং ডালিয়া খেতে পারেন। এই দুটি খাবারই আমাদের দীর্ঘক্ষন পেট ভর্তি করে রাখে। তাই খিদের জ্বালা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পাশাপাশি কোলেস্টেরল ও নিয়ন্ত্রণ করে।

পেটের মেদ কমানোর আরও কিছু উপায়

আলু

আলু এমন একটি খাবার যাতে প্রচুর পরিমাণে মেদ বাড়াতে সাহায্য করে। মেদ কমানোর চেষ্টা করলে আলু খাদ্য তালিকা থেকে একদমই বাদ দিয়ে দিতে হবে। কোনভাবেই তেল খাওয়া যাবে না এবং বাজারের খোলা তেল এড়িয়ে চলতে হবে।

ডিম

বেশি পরিমাণ ডিম খেলে মেদ বেড়ে যায়। যেমন প্রতিদিন তিন থেকে চারটি ডিম খেলে আপনার মেদ কমবে না উল্টো বেড়ে যাবে। তবে আপনি প্রতিদিন একটি করে ডিম খেতে পারেন। তবে মেদ কমাতে চাইলে খাতা তালিকা থেকে পুরোপুরি ডিম বাদ দিতে হবে।

লেবু

সকালে এক কাপ কফি এবং চা খেলে কার না মন ভালো হয়! তবে মেদ কমাতে চাইলে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর হালকা গরম পানিতে লেবুর রস দিয়ে মিশিয়ে খেতে পারলে খুব উপকার পাবেন। কারণ লেবুতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা হজমের কাজে সাহায্য করে। তবে গরম পানির সাথে লেবু মিশিয়ে খেতে খুব খারাপ লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনি এক চামচ মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে করে স্বাদ একটু বেড়ে যাবে।

পানি

মেদ কমানোর চাবিকাঠি হল পানি খাওয়া। নিজেকে হায়রেট রাখার পাশাপাশি সব সময় অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আশঙ্কা কমায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেলে। খাওয়ার পূর্বে পানি পান করা অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে দেই এবং এভাবে পেটে মেদ জমার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।

জিরা পানি

সকালে ঘুম থেকে উঠার পর জিরা পানি পান করুন এতে আপনার হজমে সাহায্য করবে। পেটের ফোলা ভাব কমায় জিরা পানি এবং পেটের মেদ জমাতে যথেষ্ট পরিমাণ সাহায্য করে।

দুশ্চিন্তা

যেকোনো সময় অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা কমাতে হবে কেননা স্ট্রেস এবং কয়টি সল হরমোন নিঃসরণ বাড়িয়ে আমাদের খুদা অনেক বাড়িয়ে দিন যা আমাদের পেটে মেদ জমানোর সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ যেসব নারী-পুরুষ ওজন কমাতে চান তাদের সম্পূর্ণভাবে দুশ্চিন্তা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

শস্য জাতীয় খাবার

প্রতিদিন শষ্য জাতীয় খাবার আশ্রমৃত খাবার খাওয়া প্রয়োজন যেমন রুটি। সুস্থ জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি খুদা ভাব কমাতে সাহায্য করে এবং উচ্চ ক্যালরিবহুল খাবারের চাহিদা কমাতে সহায়তা করে।

ফল ও সবজি

ফল এবং শাকসবজিতে মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট এবং ফাইবার বেশি থাকার কারণে শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে। খাবারের আয় চর্বি কণা কে বেঁধে ফেলে এবং মলমূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেই। তাই প্রতিদিন অন্তত ৪/৫ ধরনের ফল এবং সবজি খাওয়া জরুরী।

গ্রিন টি

হালকা এ পানিও ক্যাবল সতেজকে তরতাজায় রাখে না সঙ্গে আমাদের শরীরের মেদ কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। গ্রিন টি তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে।

বাদাম এবং অলিভ অয়েল

খাবারের তালিকায় প্রোটিন থাকা যেমন জরুরী ঠিক তেমনি ফ্যাট জাতীয় খাবারের উপস্থিতিও দরকার। কি চমকে উঠলেন? কিন্তু এটাই সত্যি। বিজ্ঞানীদের মতে সব ধরনের ফ্যাট আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক নয়। শরীরে প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট ভিটামিন এবং মিনারেলসের মতো ফ্যাটেরো দরকার রয়েছে। 

বিশেষ করে কিছু ভিটামিন শোষণের জন্য খুব দরকার। যদি ভিটামিন এদিকে এবং ই এর অভাব দেখা দেয়, তবে বুঝতে হবে তার শরীরে প্রয়োজনমতো ফ্যাট সরবরাহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বাদাম এবং দানাদার জাতীয় খাদ্য থেকে যেসব ফ্যাট পাওয়া যায় তাকে সাধারণত মনোসেচুরেটেড ফ্যাট বলা হয়ে থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মসলা

রান্নায় যেসব মসলা ব্যবহার করা হয় যেমন পেঁয়াজ রসুন দারুচিনি আদা ইত্যাদি এগুলোর কিছু এদের সব গুনাগুনের জন্য শরীরের বেশ কিছু উপকার করে থাকে। তার পাশাপাশি এসব খাবার আমাদের খাবারকে আরও বেশি সুস্বাদু করে তুলে। আদা দারুচিনি এবং হলুদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পরোক্ষভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

মরিচ

কাঁচামরিচের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যাপসিন নামক উপাদান যা শরীরকে সুঠাম করতে কার্যকর। রান্না করা বা যে কোন কাঁচা মরিচের ঝাল মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেই এবং নিজে থেকে আমাদের শরীরে ক্যালরি বার্ন করে। তাই একটু বেশি ঝাল যুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা দরকার।

সাগুদানা

যদি আপনি একেবারে নিরামিষভোজী একজন মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে ওমেগা থ্রি নিয়ে একদমই ভাববেন না। কেননা সাগুদানায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি যা আমাদের শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার।

মাছের তেল

মাছের তেলে রয়েছে ওমেগা থ্রি যা আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও মাছের তেল আমাদের শরীরের হাড় গঠনে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এবং আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। মাছের তেল আমাদের শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।

চিনি খাওয়া বন্ধ

আমরা কমবেশি অনেকেই জানি চিনি আমাদের শরীরের জন্য খুব একটা ভালো উপাদান নয়। কিন্তু এটি আমাদের তলপেটের মে দ কমাতে পারে। সাধারণত আমাদের তলপেটে দুই ধরনের ফ্যাট থেকে থাকে অভ্যন্তরীণ ফ্যাট এবং নিম্নস্থ ফ্যাট। 

এই দুই ফ্যাট কমানোর জন্য বাড়তি চিনি এবং অ্যালকোহল গ্রহণ একদম বন্ধ করে দিতে হবে। কেননা বাড়তি চিনি খেলে আমাদের শরীর সুগারের মাত্রা কমানোর জন্য ইনসুলিনের মাত্রা অনেক বাড়িয়ে দেই। এই সুগার তখন গ্লাইকোজেন হিসেবে যকৃত জমা হয় এবং অবশেষে তা ফেটে পরিণত হয়।

চিয়া সিডস

হঠাৎ করেই ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ৮৬ডস বাজারে হট কেকের মতো বিক্রি হয়। এর মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। তাই একবার চিয়া সিডস খেলে দীর্ঘক্ষণ কোন খিদা থাকে না। ফলে ওজন কমতে খুব দ্রুত কাজ করে এটি।

মাশরুম

মাশরুম রক্তের চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া এই খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। তাই এটি শরীরে বাড়তি চর্বি জমা রোধ করতে পারে। মাছ মাংসের পরিবর্তে মাশরুম খেলেও সেই প্রোটিনের অভাব পূরণ হবে।

ভুড়ি কমানোর জন্য কি কি খাওয়া ত্যাগ করবেন

প্রথমত সমস্ত রকম জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যাস বন্ধ করতে হবে। এসব খাবার খুব লোভনীয় হলেও শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর।
  • অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার যেমন বিরিয়ানি পোলাও কাচ্চি এসব খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • অ্যালকোহল খাওয়ার অভ্যাস থাকলে এখন এবং আজকে থেকে পরিহার করতে হবে।
  • সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন প্রায় ৪৫ মিনিট হাটার চেষ্টা করতে হবে।
  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • পরিমিত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আমরা জানলাম আমাদের শরীরের মেদ এবং পেটের ভুড়ি কমানোর জন্য কি কি খেতে হবে সে সম্পর্কে। আশা করি আজকের পোস্টটি পড়ে আপনারা খুব উপকৃত হয়েছেন। তাহলে আর দেরি কেন বন্ধুদের সাথে অবশ্যই এই পোস্টটি শেয়ার করবেন।
 আজকে এই পর্যন্তই। সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন আর এতক্ষণ আমার পোষ্টের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে। দেখা হবে পরের কোন আর্টিকেলের সাথে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url