দুধের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করতে ও ভেজাল মেশানো নাকি বুঝবেন যেভাবে
এক গ্লাস দুধকে পুষ্টির পাওয়ার হাউজে পরিণত করতে এর মধ্যে মেশাতে পারেন নির্দিষ্ট কিছু উপাদান। ফলে এটি অন্যান্য এক পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার যোগ করার ফলে আরো শক্তিশালী পানিয় হয়ে উঠবে আপনার শরীরের জন্য। দুধের মধ্যে কোন কোন উপাদানে মিশালে দুধের পুষ্টিগুণ বেড়ে যায় সেগুলো নিয়ে আজকের বিস্তারিত আলোচনা।
ভূমিকা
দুধের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করতে ও ভেজাল মেশানো নাকি বুঝবেন কিভাবে?দুধের পুষ্টিগুণের কথা বলতে গেলে আসলেই শেষ করা যাবেনা। ল্যাকটোজ নামক এক ধরনের উৎসেচক বা এনজাইম থাকে যা দুধ এবং দুগ্ধজাতীয় খাবারের মধ্যে ল্যাকটোজ নামক উপাদানকে ভেঙে এক অনু গ্যালাক্টজ এবং এক অনু গ্লুকোজ এ পরিণত করে থাকে।
ল্যাকটোজ মূলত একটি ডাইস্যাকারাইড বা দিআণবিক শর্করা কারণ এক একটি ল্যাকটোজ দুটি অনু দ্বারা গঠিত। দুধে ২ থেকে ৪ শতাংশ শর্করা হলো ল্যাক্টোজ।এছাড়াও দুধের মধ্যেই থাকে ভিটামিন এ,বি এবং ডি। গরুর দুধে রয়েছে শক্তিশালী ভিটামিন ডি। কিন্তু আজকাল দুধের মধ্যে প্রচুর ভেজাল মেশানো হচ্ছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এ ধরনের কাজ করে থাকে টাকার লোভে। তাই দুধ কেনার সময় আমাদের কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
দুধের পুষ্টিগুন বৃদ্ধি করতে কি মেশাবেন
কিছু কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো দুধের মধ্যে মেশানোর ফলে দুধে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি বেড়ে যায়। জেনে নিন এমন কিছু উপাদানের নাম যা প্রতিদিন দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারবেন।
দারুচিনি
প্রতিদিন এক গ্লাস দুধে এক চিমটি দারুচিনির গুঁড়ো যোগ করে দুধ খেতে পারেন। এতে করে দুধের স্বাদ যেমন করে বেড়ে যায় ঠিক তেমনি অনেক স্বাস্থ্যসুবিধাও আপনি লাভ করতে পারবেন। দারুচিনি আমাদের রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও অনেকে দুধের গন্ধের কারণে খেতে চায় না। দুধের মধ্যে যখন দারুচিনি যোগ করা হবে তখন দুধের গন্ধটা চলে যাবে। ফলে আপনি দুধ খেতে পারবেন কোন রকম গন্ধ ছাড়াই।
চিয়াসিড
আমরা অনেকেই জানি চিয়াসিডের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড এবং ফাইবার। এছাড়াও এরমধ্যে আরো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান রয়েছে। তাই দুধের মধ্যে এটি মিশ্রিত করে খাওয়া যায়। এতে করে যেমন শরীরের অতিরিক্ত শক্তি প্রদান করবে এবং একই সাথে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখবে।
মধু
মধুতেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ কিছু উপাদান। এজন্য মধু আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এজন্য দুধের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়া যায়। এতে করে দুধের পুষ্টিগুণ যেমন বাড়বে ঠিক তেমনি এর স্বাদও অনেকটা বেড়ে যাবে।
হলুদ
এক গ্লাস দুধে এক চিমটি হলুদ হতে পারে আপনার শরীরের জন্য উপকারী। আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। হলুদের মধ্যে থাকা সক্রিয় উপাদানগুলো কারকিউমেনের প্রভাবে দুধে একটি সোনালী ভাব নিয়ে আসে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী এই পানীয়টি।
বাদামের মাখন
দুধের মধ্যে বাদামের পেস্ট মিশিয়ে খেতে পারেন। আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী বাদাম। আর দুধের মধ্যে যখন বাদামের মিশ্রণ মেশানো হবে তখন সেটার পুষ্টিগুণ আরো বেশি বেড়ে যাবে। বাদমের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন,প্রোটিন। প্রতিদিন বাদাম খেতে পারলে আমাদের হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে। এতে করে দীর্ঘস্থায়ী শক্তি পাওয়া যায়।
আদাগুড়ো
দুধের মধ্যে শুকনো আদার গুঁড়ো মিশিয়ে পান করতে পারেন।এর মধ্যে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান। এই উপাদানটি এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানে ভরপুর। সর্দি কাশিতে ভুগলে বা গলাব্যথা হলে আদা গুঁড়ো এক গ্লাস দুধের মধ্যে মিশিয়ে সেটি পান করতে পারেন। এতে করে আপনার গলা ব্যথা এবং সর্দি কাশি দূর হয়ে যাবে।
জাফরান
অনেকে দুধের গন্ধ সহ্য করতে পারে না এজন্য দুধ খেতে পছন্দ করে না। সে ক্ষেত্রে দুধে অল্প পরিমাণে কয়েকটা জাফরান যোগ করলে দুধের রং পরিবর্তন হবে এবং গন্ধ দূর হয়ে যাবে। নিয়মিত জাফরান মিশিয়ে দুধ খেলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
আমন্ড দুধ
দুধের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করতে এর মধ্যে মিশাতে পারেন আমন্ডের গুড়া। আমন্ডের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ই যা আমাদের ত্বকের বিভিন্ন উপকার করে থাকে। দুধ খেতে পারলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
দুধকে বলা হয় সুপার ফুড। ছোট থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক সবার জন্যই দুধ খুব স্বাস্থ্যকর একটি পানীয়। অর্থাৎ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পান করা উচিত বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
দুধে ভেজাল মেশানো কি না বুঝবেন যেভাবে
আজকাল দুধে বিভিন্ন রকম ভেজাল মেশানো হয়ে থাকে। যার কারণে দুধ খাওয়ার ফলে পুষ্টিগুন আমাদের শরীরে ঠিকঠাক মতো পাইনা এবং তার সাথে বিভিন্ন রকম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আমাদের শরীর। চলুন তাহলে জেনে নেই কিভাবে ভেজাল মেশানোর দুধ শনাক্ত করতে হয়ঃ
- অল্প একটু দুধ মাটিতে ঢালুন। যদি দেখেন গড়িয়ে পড়ে মাটিতে সাদা দাগ হয়ে গেছে তাহলে বুঝবেন এই দুধ খাটি। আর দুটি কোন দাগ না পড়ে তাহলে বুঝতে পারবেন দুধের মধ্যে ভেজাল মেশানো হয়েছে।
- দুধ গরম করতে গেলে যদি হলুদ ভাব হয়ে যায় তাহলে বুঝবেন এই দুধ খাঁটি নয়। এতে মেশানো রয়েছে ভেজাল।
- একটি বোতলে বা গ্লাসের পাঁচ থেকে দশ মিলিমিটার দুধ নিয়ে এবং সমপরিমাণে পানি নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়ান। যদি হালকা ফেনা হয় তাহলে বুঝবেন দুধের কোন ভেজাল নেই। আর যদি অতিরিক্ত ফেনা হয় তাহলে বুঝবেন দুধের মধ্যে ডিটারজেন্ট মেশানো হয়েছে।
- একটি কাছে গ্লাসে এক চা চামচ দুধ নিন। তারপর সেখানে হাফ চামচ সয়াবিন তেল যোগ করুন। ৫ মিনিট রেখে দিন। তারপর এতে লাল লিটমাস পেপার ডুবে দেখুন। তারপর ৩০ সেকেন্ড পর পেপারটি তুলে নিন। যদি লাল আকার ধারণ করে তাহলে বুঝবেন দুধের মধ্যে ইউবিয়া মেশানো হয়েছে এবং দুধটি ভেজাল।
- দুধের ফরমালিন মেশানো হয়েছে কিনা সেটা জানতে দুধের মধ্যে সালফিউরিক এসিড যুক্ত করুন। তারপর যদি নীল বা বেগুনি রঙের আভা দেখা যায় তাহলে বুঝতে পারবেন দুধের মধ্যে ফরমালিন মেশানো হয়েছে।
- উচ্চমাত্রার ভেজাল মিশিয়ে তৈরি করা হয় কৃত্রিম দুধ। যা সিন্থেটিক নামে পরিচিত । এই দুধের স্বাদ তেতো। তাই খুব সহজেই ভেজাল মেশানো দুধ শনাক্ত করা যাবে।
- কৃত্রিম দুধ হলে হাতের আঙুলে নিয়ে একটু ঘষলেই সাবানের ফেনার মত অনুভূতি হবে। এছাড়াও দুধ গরম করার পরে হলদে ভাব ধারণ করবে।
- এক ধরনের যন্ত্র দিয়ে দুধে পানি মেশানো আছে কিনা বা দুধে কোন ভেজাল মেশানো আছে নাকি সেগুলো শনাক্ত করা যায়। দুধ থেকে মাখন তুলে নিলে বা দুধে পানি মেশালে দুধে আপেক্ষিক ঘনত্বের পরিবর্তন হয়। ল্যাক্টোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে খুব সহজে এটি সনাক্ত করা যায়।
- একটি টেস্ট টিউবে তিন মিলিলিটার দুধ নেন। তারপর এর মধ্যে দশ ফোটা হাইড্রোলিক এসিড এবং এক চামচ চিনি যুক্ত করুন। কিছুক্ষণ রাখার পর যদি দেখেন মিশ্রণটি লাল রঙের হয়ে গেছে তাহলে বুঝবেন অবশ্যই দুধের মধ্যে ডালটা মেশানো হয়েছে।
- একটু দুধ নিয়ে তার মধ্যে দুই চামচ লবণ ভালোভাবে মিশিয়ে নেই। যদি দেখেন লবণের সংস্পর্শে দুধ নীল রং হয়ে গেছে তাহলে বুঝবেন এই দুধের মধ্যে কার্বোহাইড্রেট মেশানো হয়েছে।
- কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা মাঝেমধ্যে দুধের মধ্যে আটা বা ময়দা দিয়ে দুধ ঘন করে থাকে। এরকম ভেজাল মেশানো আছে কিনা তা বোঝার জন্য এক কাপে দুধ নেন। তারপর এর মধ্যে দুই ফোটা আয়োডিন যোগ করুন। যদি দুধের রং হালকা নীল রঙে হয় তাহলে বুঝবেন এতে ভেজাল হিসেবে আটা বা ময়দা মেশানো হয়েছে।
তাই দুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই দুধটি পরীক্ষা করে নিবেন যে এর মধ্যে ভেজাল মেশানো আছে কিনা। কারণ ভেজাল মেশানো দুধ খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে আরো বিভিন্ন রকম ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। শরীরের বিভিন্ন পুষ্টিগুন বৃদ্ধি করতে যেয়ে আবার আমরা বিভিন্ন রকম অসুখে ভুগতে পারি।
দুধ খাওয়ার উপকারিতা
দুধ আমাদের শরীরের বিভিন্ন পুষ্টি এবং প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস। দুধের উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না এই ধরনের মানুষ নেই বললেই চলে। এটি আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পানীয়। দুধের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন ভিটামিন এ,ডি এবং বি ১২। এছাড়াও রয়েছে ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম এবং ফসফরাস।
যা আমাদের শরীরের পেশীকে মজবুত রাখে এবং হাড়কে শক্ত রাখতে সাহায্য করে। দুধ পান করা শরীরের জন্য ভালো তবে তা সঠিক পুষ্টি অনুযায়ী নিয়ম মেনে পান করতে হবে। তাহলে আমাদের শরীরের উপকার মিলবে। শিশুদের মতো অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরও দুধ অপছন্দ। দুধের গন্ধ সহ্য করতে পারেন না। আসুন জেনে দুধ খাওয়ার কি কি উপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কেঃ
প্রোটিনের উৎস
দুধ প্রোটিনের একটি উৎস যার এক কাপ দুধে আট গ্রাম প্রোটিন থাকে। যা আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করে তোলে। এক গ্লাস দুধকে একটি সম্পূর্ণ প্রোটিন হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। যার অর্থ এটি আপনার শরীরে সর্বোত্তম স্তরে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। গরুর দুধে পাওয়া প্রোটিনের বেশিরভাগ কোসেইন তৈরি করে যা আমাদের শরীরের মোট প্রোটিনের ৭০ থেকে ৮০% চাহিদা পূরণ করে থাকে।
হাড়ের জন্য উপকারী
নিয়মিত দুধ পান করলে আপনাদের হার মজবুত থাকবে।দুধ ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম,প্রোটিন এবং ভিটামিনসহ পুষ্টির শক্তিশালী উৎস। আর এই পুষ্টি উপাদান গুলো আমাদের শরীরের হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় জানা গেছে,দুধ এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার আমাদের শরীরের অস্টিওপোরেসিস প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়াও দুধে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে।
ওজন কমাতে
গবেষণায় দেখা গেছে দুধ খাওয়ার সাথে আমাদের স্থূলতার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মূলত দুধে বিভিন্ন উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের ওজন কমাতে এবং অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। অন্যদিকে দুধের মধ্যে রয়েছে সংযোজিত লিনোলিক অ্যাসিড যা চর্বি কমাইতে সাহায্য করে এবং চর্বি উৎপাদনে বাধা দিয়ে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে বা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে
রাতে নিয়মিত লো ফ্যাট যুক্ত দুধ প্রতিদিন পান করলে আমাদের শরীরের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। দুধে থাকা প্রোটিন বিভিন্ন খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে দেই এবং ভালো কোলেস্টেরলকে বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের হার্ট সুস্থ থাকে।
স্বাস্থ্যকর ত্বক
দুধে থাকা ভিটামিন বি১২ আমাদের ত্বকে স্বাস্থ্যকর এবং নরম তরতাজা রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ত্বক সুন্দর রাখতে চাইলে প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ খেতে হবে।
দাঁতের সমস্যা সমাধানে
দুধের মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁতের বিভিন্ন সমস্যাকে দূর করে দেয়। প্রতিদিন একগ্লাস করে দুধ পান করলে দাঁতের ক্ষয়ে যাওয়া এবং দাঁতের পোকা হলুদ ছাপ পড়া দাঁতের ক্ষয়ের মত সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে।
মানসিক চাপ কমাতে
দূরে থাকা ভিটামিন এবং মিনারেলস আমাদের ফিটনেস বাড়ায় এবং তার সাথে মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। কুসুম গরম দুধ পান করার ফলে আমাদের ঘুমের উদ্যোগ হয় যার ফলে মস্তিষ্ক শিথিল থাকে এবং মানসিক চাপমুক্ত থাকতে পারি আমরা। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ পান করলে এই উপকার মিলবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকলে এবং আপনার যদি এলার্জি সমস্যা না থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ খেয়ে ঘুমাতে যাবেন। এতে করে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে সেটি দূর হয়ে যাবে।
মাংসপেশীর গঠন
দুধের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা মাংসপেশির গঠনে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম করার পরে এক গ্লাস গরম দুধ পান করলে মিলবে বিভিন্ন উপকারিতা। এছাড়াও আপনার শিশুর শারীরিক গঠন উন্নত করতে প্রতিদিন একগ্লাস দুধ খাবার তালিকায় রাখতে হবে।
এসিডিটির সমস্যা
এসিডিটির সমস্যা হয় না এরকম খুব কম মানুষই আছে। প্রতিদিন আমার আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবার খাই এবং আমাদের সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ সমাধান হতে পারে প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ খাওয়া। কেননা দুধ পাকস্থলীকে ঠান্ডা রাখে এবং আমাদের বুকের জ্বালা দূর করে।
গরু দুধের সঙ্গে ভুলেও যেসব খাবার খাবেন না
দুধ একটি সুষম খাবার এতে থাকা ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকার করে থাকে। এছাড়াও দুধ আমাদের দাঁত এবং হাড় গঠনে সাহায্য করে। দুধের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রকমের পুষ্টিগুন এছাড়া আমাদের পিরিয়ডের সময় ব্যথা ও দূর করতে সাহায্য করে দুধ।নিঃসন্দেহে দুধ একটি উপকারী খাবার কিন্তু দুধ খাওয়ার পরে কিছু খাবার খাওয়া থেকে আপনার বিরত থাকতে হবে।
কারণ কিছু কিছু খাবার রয়েছে যা দুধের সাথে বিক্রিয়া করে বিভিন্ন রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে শরীরে। তাই দুধ খাওয়ার পরে কোন কোন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে সেই সম্পর্কে আমাদের ভালো ধারণা থাকা উচিত। কিন্তু দেখা যায় অনেকেরই কোন ধারণা থাকেনা এই বিষয়ে। তাই অনেক সময় ভুল খাবার খাওয়ার পরে গা গোলানো, শরীর ব্যথা, বমি বমি ভাব,পাতলা পায়খানা ইত্যাদি সমস্যা গুলো দেখা দেয়।
দুধের সাথে আমরা বিভিন্ন রকম উপাদান মিশ্রিত করে খেয়ে ফেলি যেমন চকলেট,ফল ইত্যাদি। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে দুধ খাওয়ার পরে আর কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়। এবং দুধ খাওয়ার আগেও কিছু খাবার খাওয়া একদমই ঠিক হয়। যেমন কলা, টক জাতীয় ফল ইত্যাদি। আমরা সকলেই জানি কলা খুবই পুষ্টি গুণে ভরপুর একটি ফল।
কিন্তু অনেকে দেখা যায় আবার দুধের সঙ্গে কলা মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে খান। আবার এর মধ্যে মেশানো হয় চেরি ফল। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে এই দুধের সাথে কলা বা চেরি মিশিয়ে খাওয়া উচিত নয়। উপকারের পরিবর্তে আমাদের বিভিন্ন রকম ক্ষতির আশঙ্কা থেকে থাকে। টক জাতীয় ফল ভিটামিন সি এর উৎস হল পেয়ারা, লেবু, কমলা, গ্রিন টি, ইত্যাদি।
এগুলো কখনো দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যাবেনা বা দুধ খাওয়ার আগে বা পরে এ ধরনের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও দুধ খাওয়ার পর পরই অনেকের ডিম,মাছ,মাংস বা ভারী কোন খাবার খেয়ে থাকেন।এ ধরনের খাবার একদমই খাওয়া যাবে না। এ ধরনের খাবার খাওয়ার পরে দুধ খেলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক আলসারের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সব সময় চেষ্টা করতে হবে এ ধরনের খাবার দুধ খাওয়ার ঘন্টাখানেক আগে খাওয়ার।
উদ্ভিজ্জ দুধের উৎস
যদি আপনের ল্যাকটোজ হজম করতে অসুবিধা হয় তাহলে দুধ খাওয়ার ফলে আপনার এসিডিটি সমস্যা সহ বিভিন্ন রকম সমস্যা ভোগ করতে হতে পারে। আবার অনেকে এলার্জির সমস্যা হতে পারে। তাই এ ধরনের সমস্যা সমাধান করতে দুধের বিকল্প হিসেবে কিছু উদ্ভিদের উৎস রয়েছে যা আপনার শরীরকে পুষ্টি দিবে। কিভাবে খুব সহজেই ঘরে বসে এই দুধ তৈরি করা যায় সে সম্পর্কে নিজে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
সয়া দুধ
প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস হিসেবে কাজ করে সয়া দুধ।এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম।এবং সয়া দুধে ফ্যাটের পরিমাণ খুব কম বা নেই বললেই চলে এবং এটি কোলেস্টেরল মুক্ত। পাশাপাশি কালসিয়ামসহ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও।
আমন্ড দুধ
আমন্ড বলতে আমরা সাধারণত কাজুবাদাম কে বুঝে থাকি।ক্যালসিয়ামের চাহিদা ৩০% মেটাতে সক্ষম আমন্ডের দুধ।এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে ওমেগা থ্রি এবং ওমেগা সিক্স ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই,আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম। এতে ক্যালোর পরিমাণ অনেক কম থাকায় আমাদের শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং আমাদের ত্বকের বয়স বৃদ্ধি জড়িত সমস্যা সমাধানের সাহায্য করে।
নারকেলের দুধ
যদি আপনি নারকেল খেতে পছন্দ করে থাকেন তাহলে নারকেলের দুধ আপনার জন্য হতে পারে খুবই সুস্বাদু একটি পানীয়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে ব্যাপক পরিমাণে। এছাড়াও এটি পটাশিয়ামের ভালো একটি উৎস।স এই দুধ আপনি তরকারি এবং সুপ রান্না করতে ব্যবহার করতে পারেন।
কাঠবাদামের দুধ
কাঠবাদামের দুধে সাধারন৩০ ভাগ ক্যালোরি এবং ৪৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে। তবে কাঁচা কাঠ বাদামও প্রচুর পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। এক মুঠো পরিমান কাঁচা কাঠবাদাম চিবিয়ে খেতে পারলে কাঠবাদামের দুধ খাওয়ার আর প্রয়োজন পড়ে না।তবে যাদের খাবারের এলার্জি রয়েছে তারা আমন্ড দুধ পছন্দ না করলে কাঠবাদামের দুধ বা কাঠবাদাম তাদের জন্য একটি ভালো একটি বিকল্প উৎস হতে পারে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানলাম দুধের পুষ্টিগুর বৃদ্ধি করতে তার মধ্যে কি কি উপাদান যোগ করা যায় এবং দুধের মধ্যে ভেজাল আছে নাকি সেটা বুঝতে যেসব পরীক্ষা করা যায় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।আশা করি আজকের পোস্টটি আপনাদের খুব ভালো লেগেছে এবং আপনারা খুবই উপকৃত হয়েছেন।
আজকের পোস্টটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আরো কিছু জানার থাকলে অবশ্যই আমাকে কমেন্ট করে জানাবেন। সে পর্যন্ত সকলে সুস্থ থাকবেন এবং ভালো থাকবেন। আজকে এই পর্যন্তই। এতক্ষন আবার পোস্টের সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ। দেখা হবে পরের কোন পোস্টে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url