নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য কতটা উপকারী ও দরকারি জানুন বিস্তারিত

ঘুম আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।সুস্থ সবল থাকার জন্য নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য কতটা উপকারী এবং দরকারি সেটা আমরা অনেকেই হয়তোবা জানিনা। অনিদ্রা বা কম ঘুম হলে আমাদের স্বাস্থ্যের কতখানি ক্ষতি হয় তা আমরা আসলে বুঝতে পারি না।
নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য কতটা উপকারী ও দরকারি জানুন বিস্তারিত
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হওয়ার যেমন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর আবার অতিরিক্ত ঘুমানো আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। শুধু শরীর নয় আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের দরকার। চিকিৎসকদের মধ্যে শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরী।

ভূমিকা

নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য কতটা উপকারী সেটা আমরা তখনই বুঝতে পারি যখন আমাদের অনিদ্রা জনিত সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত স্বাস্থ্যকর ঘুম বলতে রাতের একটি নির্দিষ্ট সময়কে বলা হয়ে থাকে। রাত নয়টা থেকে রাত তিনটা পর্যন্ত বা ভোর তিনটা পর্যন্ত ঘুম কে ডেল্টা স্লিপ বলা হয়ে থাকে। এই সময়টা ঘুমানোর জন্য একদম পারফেক্ট একটি সময়।

নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য কতটা উপকারী

রোগ ব্যাধি নিয়ে মানুষের উপর যত রকমের গবেষণা চালানো হয়েছে তার মধ্যে সবথেকে স্পষ্ট একটি বিষয় হলো যে মানুষ যতক্ষণ ঘুমাবে তার আয়ু তত বেশি কমে যাবে। কাজেই শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম দরকার।
 তার শরীরের ভেতরে মস্তিষ্ক সহ যত রকমের তন্ত্র রয়েছে সব কিছুই কাজ করে যখন আপনি ঘুমের মধ্যে থাকেন। আর তখনই এদের কাজের ব্যাঘাত ঘটে যখন আপনার ঠিকঠাক মত ঘুম হয় না। চলুন তাহলে জেনে নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীরের কি কি উপকার করেঃ
  • ঘুম আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করে। আর যখন ঘুম কম হয় বা ঘুমের অভাবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ করা কমতে থাকে। তাই ঘুমের অভাব হলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম অসুবিধের সবক্রমণের ক্ষমতা বেড়ে যায়। অনেকের কয়েক রাত ঠিকঠাক মতো ঘুম না হলে সর্দি-কাশি সমস্যা হয়েছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ঘুম না হলে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিবে।
  • ঘুম ভালো হলে আমাদের বিপাক হার সঠিকভাবে হয়। আর ঘুম ঠিকঠাক মত না হলে তার দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেকেই মনে করেন কম ঘুমিয়ে অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে শরীরের ওজন কমে যাবে। কিন্তু সেই ধারণা একদমই ভুল। বিপাক হার ভালো না হলে কখনোই আমাদের শরীরের ওজন কমবে না। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ঠিকঠাকমতো ঘুমানো দরকার।
  • সঠিকভাবে ঘুম হলে শরীরের সব অঙ্গ নতুন করে কাজের শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। তাই ঘুম যত ভালো হবে আমাদের ত্বক তত বেশি সুন্দর হবে। ঘুমের সময় ত্বকের কোষ যত্ন পায়। আর সেজন্যই আমাদের ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে পারে। তাই আমাদের ত্বক সুন্দর রাখতে নিয়মিত ঘুমের দরকার।
  • ঘুম আমাদের হজম এবং রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ঘুম ঠিকঠাক মত না হলে আমাদের পেটে হজমের সমস্যা বেড়ে যায় এবং বেড়ে যায় রক্তচাপ। তাই ঘুমের মধ্যেই হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের মত বড় ধরনের ক্ষতি। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ দরকারি।
  • ঘুম আমাদের শরীরের বেশ কিছু হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তার মধ্যে একটি হলো হজম। পর্যাপ্ত এবং নিয়মিত ঘুম না হলে হজমের উপর প্রভাব পড়ে। তখন খাবারে অরুচি চলে আসে এবং খিদা থাকে না।
  • রাতে ঘুম ঠিকঠাক না হলে সকালে নিয়মিত ব্যায়াম করার ইচ্ছা থাকে না। ফলে আমাদের শরীর দিন দিন অবনতির দিকে চলে যায় এবং আমরা অসুস্থ হয়ে যায়।
  • নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীরের কতটা উপকার করে তার মধ্যে প্রধান হল আমাদের সঠিক কর্মকর্তা এবং মস্তিষ্কের কার্যকরীতাকে বাড়ায়। জ্ঞান, একাগ্রতা, উৎপাদনশীলতা এবং কর্ম ক্ষমতা সবই নির্ভর করে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উপর। আর এই মস্তিষ্ক নির্ভর করে আমাদের ঘুমের উপর। গবেষণায় দেখা গেছে ঘুমের ঘাটতি হলে মস্তিষ্কের কার্যকরীতার কিছু দিকে অ্যালকোহলের নেশার মত প্রভাব ফেলে। এছাড়াও আর একটি গবেষণায় যাবা যায় যে, ভালো ঘুম আমাদের স্মৃতিশক্তি কি উন্নত করতে সাহায্য করে।
  • রাতে ভাল ঘুম হলে তা আপনার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে। কারণ রাতে যখন ঠিকঠাক মতো ঘুম হবে তখন রক্তে শর্করা কে প্রভাবিত করে এবং ইনসুলিন সংবেদন চলে তাকে রাজ করে। যার কারণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
  • মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ঘুম খুব প্রভাব ফেলে। মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে বিষন্নতা এবং হতাশা ঘুমের উপর নির্ভর করে অনেকটাই। তাই রাতে ভালো আপনার বিষন্নতা কাটাতে পারে।

ঘুম কম হওয়ার কিছু বিশেষ কারণ

কম ঘুম হওয়ার বিশেষ কিছু কারণ রয়েছে। আজকে সেই কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করব। আমাদের মধ্যে অনেকেরই এ ধরনের সমস্যা রয়েছে যে, সারারাত শুয়ে থাকে কিন্তু ঘুম আসে না। ঘুম আসে সেই ভোর ছয়টায়। আর ঘুম ভাঙ্গে দুপুর ২ টায়। এ ধরনের সমস্যা হওয়ার বেশি কিছু কারণ রয়েছে। ঘুমের জন্য দরকার ঘুমের মতো পরিবেশ। চলুন তাহলে জেনে নিই ঘুম কম হওয়ার বিশেষ কিছু কারণ সম্পর্কেঃ
  • আমাদের সব সময় ব্যস্ত জীবনে সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিস যাওয়া থেকে শুরু করে সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা পর্যন্ত সবসময় আমরা ব্যস্ত থাকি। যার কারণে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাফেরা পারিবারিক আড্ডা ঘোরাঘুরি টেলিভিশন দেখা ইত্যাদি কাজগুলো আমরা দিনের সময় গুলোতে দিতে পারি না। তাই দিন শেষে ঘরে ফিরে ঘুমাতে যাওয়ার সময়টুকুতে আমরা এসব কাজ করে থাকি।
  • ঘুমের একটা ভাবমূর্তি সংকট রয়েছে। এটা সাধারণত আমাদের বিশ্বাস এবং দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যা। কেউ যদি একটু বেশি ঘুমিয়ে থাকে তাহলে তাকে নিয়ে অনেকেই হাসাহাসি করতে থাকে। অনেকে মনে করে যে কম ঘুমানো টা আসলে অহংকারের বিষয়। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়। ঘুম যত ভালো হবে তার শরীর তত সুস্থ থাকবে।
  • ঘুমানোর সময় অনেকের লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাই। কিন্তু আমাদের ঘুমের জন্য দরকার অন্ধকার একটি পরিবেশ। কেননা আমাদের শরীরে মেলাটোনির নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয় অন্ধকারে। কিন্তু আধুনিকতার যুগে আমরা যখন ঘরে বড় লাইট জ্বালাচ্ছি তখন আমাদের মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের ঘুম না হওয়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
  • আধুনিক সভ্যতার আরেকটি বড় ও প্রত্যাশিত সাইড ইফেক্ট হলো আমরা গরম ঠান্ডা প্রাকৃতিক মিশ্রণটা পছন্দ করে থাকি। কিন্তু আসলে ঘুমের জন্য দরকার শীতল একটি ঘর। যদি আপনি ভালো ঘুমাতে চান তাহলে প্রতি রাতে রুমের তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সেট করা উচিত।
  • আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষেরই আসলে ধারণা নেই যে নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য কতটা উপকারী। তাই আমরা ঘুমকে অনেক সময় গুরুত্ব দেয় না। এজন্য তারা যথেষ্ট সময় নেই ঘুমাতে চান না। এটা আসলে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব।
  • গবেষণায় দেখা গেছে ঘুমানোর আগে আমরা সাধারণত ফোন বা ট্যাবের খুব ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু এই সব ব্যবহারের ফলে আমাদের ঘুমের সময়ের গতি হারিয়ে ফেলছি আমরা। তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রাকৃতিকভাবে দেরি হলে কোন সমস্যা নাই কিন্তু ফোন ল্যাপটপ টিপে কখনো দেরি করা যাবে না।
  • রাতের খাবার শেষ করে সাথে সাথে অনেকে বিছানায় ঘুমাতে চলে যান। যা একদমই উচিত নয়। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। ঘুমানোর দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগেই সাধারণত খাওয়া দাওয়া শেষ করে নেওয়া উচিত। তাহলে খাবারও ভালোভাবে হজম হবে আর আমাদের ঘুমটাও ভালোভাবে হবে।
  • আপনি যদি নেশা করার অভ্যাসে পড়ে থাকেন তাহলে আজ থেকে সেটা বাদ দিয়ে দিতে হবে। কেননা ধূমপান এবং যেকোনো ধরনের নেশা দ্রব্য দূরে থাকতে হবে। এগুলো আমাদের শরীরের ক্ষতি করে তো বটেই তার সাথে আমাদের ঘুমেরও বিভিন্ন ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে।
  • ঘুম কম হয় আরেকটি বিশেষ কারণ হলো অতিরিক্ত চা বা কফির ব্যবহার। তেল চর্বি এবং চা কফি জাতীয় খাবারের পরিবর্তে শাকসবজি এবং আঁশযুক্ত খাবার বেশি বেশি খাবার অভ্যাস করতে হবে। চিনি যুক্ত খাবার অতিরিক্ত না খাওয়াই ভালো।

রাতে ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন? খাবার তালিকায় রাখুন এই খাবারগুলো

নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ উপকারি। অনেকে চেষ্টা করেও রাতে ঠিক সময় ঘুমাতে পারে না। এতে করে দেখা যায় পরের দিন তার শরীর দুর্বল এবং মাথাব্যথা সহ আরো বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। ঘুম না হওয়ার সমস্যাকে ইনসমনিয়া বলে। অনেকেই ঘুম না হলে হুট করে ঘুমের ওষুধ খেয়ে নেন।

 কিন্তু নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খাওয়া আমাদের শরীরের উপর বিভিন্ন সাইড ইফেক্ট ফেলে। কারণ ঘুমের ওষুধের রয়েছে বিভিন্ন রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। তাই যাদের ঘুম আসে না তাদের খাদ্য অভ্যাসে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসলে তাদের ঘুম না হওয়ার সমস্যাটা কম হতে পারে। যেমনঃ
  • আখরোট হাটের জন্য খুবই ভালো একটি খাবার। এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে আখরোটের মধ্যে উপস্থিত মেলাটোনিন পর্যাপ্ত ঘুম হতে সাহায্য করে থাকে।
  • কলা আমাদের ইনসমনিয়া দূর করতে সাহায্য করে। কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, সেরোটেনিন এবং মেলাটোনিন যা আমাদের ঘুমের জন্য ভীষণ উপকারী।
  • তুলসী পাতা বা তুলসী বীজ ঘুমের জন্য ভীষণ উপকারী একটি পদার্থ। তুলসীতে থাকা হাইড্রা অ্যালকোহলিক উপাদান যা ঘুমের জন্য খুবই উপকারী।
  • ছোটবেলা থেকে ঘুমের আগে গরম দুধ খাওয়ার রীতিনীতি রয়েছে। চিকিৎসকদের মতে দুধের মধ্যে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড এবং ট্রিপ্টোফ্যান নামক এক ধরনের উপাদান যা আমাদের ঘুমের জন্য ভীষণ উপকারী।
  • সেই সঙ্গে ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম যা আমাদের পেশীকে শিথিল করে দেয়। তাই ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে ডাবের পানি।
এছাড়াও ভালো ঘুমের জন্য দরকার মানসিক শান্তি। এজন্য আমাদের মানসিক দুশ্চিন্তার পরিমাণ কমাতে হবে এবং মোবাইল কম্পিউটার যত সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। আর কাজের চাপ যদি থাকুক না কেন কফিন বা ক্যাফেই জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। তাহলে আমাদের ঠিকঠাক মতো ঘুমের অভ্যাস হয়ে যাবে।

বেশি ঘুমানো শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর

বিশেষজ্ঞদের মতে বয়স এবং শারীরিক স্থূলতা অনুযায়ী সুস্থ থাকতে প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা নিয়মিত ঘুমানো জরুরী। গবেষণায় জানা গেছে,কম ঘুম আমাদের শরীরের জন্য যেমন ক্ষতিকর ঠিক তেমনি অতিরিক্ত ঘুম আমাদের শরীরের জন্য বেশ কিছু সমস্যা ডেকে নিয়ে আসে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক বেশি ঘুমানোর জন্য আমাদের শরীরের উপর কি কি প্রভাব পড়তে পারেঃ

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়

গবেষণায় জানা গেছে অতিরিক্ত ঘুমের কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে। দীর্ঘক্ষণ ঘুমালে ডায়াবেটিস টু হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই ঘুমের স্বাভাবিক চক্র আমাদের মেনে চলতে হবে।

স্থূলতা

কম ঘুম এবং বেশি ঘুম দুটোই আমাদের শরীরের ওজন এবং মেদ বাড়ায়। যারা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশিক্ষণ ঘুমান এবং প্রতি রাতে ৯ ঘন্টায় বেশি ঘুমান তাদের ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া অতিরিক্ত ঘুমানোর ফলে শরীরে ভাসা করতে পারে বিভিন্ন রকম রোগ ব্যাধি।

হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে

অতিরিক্ত ঘুমের কারণে হৃদরোগ জনিত বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে আমাদের শরীরে। গবেষণায় দেখা গেছে যে মানুষগুলো প্রতিদিন দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুমান তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটা বেড়ে যায়।

বিষন্নতা দেখা দিতে পারে

অতিরিক্ত ঘুমানো আমাদের বিষন্নতার কারণ হতে পারে। কম ঘুমালেও যেমন আমাদের মধ্যে বিষন্নতা দেখা দিতে পারে ঠিক তেমনি বেশি ঘুমালেও হতে পারে বিষন্নতা এবং মানসিক অশান্তি। তাই বেশি ঘুমানো কিংবা ঘুমের মধ্যে অস্থিরতা দেখলে আপনার সতর্ক হওয়া দরকার।

ক্লান্তি এবং আলসেমি

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলে শরীরের মধ্যে একটি তরতাজা ভাব চলে আসে। কিন্তু যখন রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে সকালে অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠা হয় তখন আমাদের শরীরের মধ্যে একটি আলসেমি কাজ করে। কাজে তেমন মনোযোগ দেওয়া যায় না। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল নয়।

ভাতঘুম কি শরীরের জন্য উপকারী

যদি ভাত ঘুম দিতেই হয় বা ঘুমাতে চান তাহলে শুরুতেই আপনার মোবাইলে বা এলার্ম ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে দেন। প্রতিদিন সময় না বদলে একই সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। আর প্রতিদিনই নিয়ম করে অ্যালার্ম দিয়ে ঘুমাবেন। এতে করে আমাদের শরীরের নির্দিষ্ট একটি নিয়মে ঘুমের অভ্যাস হয়ে যাবে। আর প্রতিদিন ওই একই টাইমে আমাদের শরীর অলস হয়ে ঘুম চাইবে।
একেকদিনে এক এক রকম টাইমে ঘুমানো আমাদের শরীরের জন্য খুব একটা উপকারী না। শরীরের এরকম একটি অভ্যাস তৈরি করতে কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগবে। আসলে ভাতঘুম দেওয়ার অভ্যাসটা ভালো। এই অভ্যাসের কারণে আমাদের শরীরের কি কি উপকার হয় চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাকঃ
  • কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যখন আমাদের ঘুম কম হয় তখন আমাদের শরীরে এক ধরনের কটিসল হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যেতে পারে। এই হরমোন মূলত স্ট্রেস নামে পরিচিত। এর কারণে মানসিক চাপ আসতে পারে। এজন্য দুপুরে খাওয়ার পর হালকা ঘুম আসলে ঘুমানো আমাদের শরীরের জন্য উপকার।
  • এই অভ্যাসটি গড়ে তুলে আমাদের শরীরের হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং যার কারণে থাইরয়েড এবং ডায়াবেটিসের মতো জটিল অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
  • আমাদের মধ্যে অনেকেরই হজমের খুব সমস্যা রয়েছে। সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে ভাতঘুম দিতে পারেন। যা আপনার শরীরে চমকের মত কাজ করবে।
  • যাদের অনিদ্রা সমস্যা রয়েছে তাদের ভাতঘুম খুব উপকারী। ভাত ঘুমের ফলে তাদের শরীর এবং মন দুটোই ফুরফুরে থাকবে।
  • ভাতঘুম দেওয়ার কারণে আমাদের শরীরের বিপাক ক্রিয়া সঠিকভাবে হয়ে থাকে। আর বিপাক ক্রিয়া সঠিকভাবে হওয়ার কারণে আমাদের ওজন ও নিয়ন্ত্রণে থাকে। এজন্য যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান বা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য ভাত ঘুম খুবই ভালো একটি অভ্যাস।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আমরা জানলাম নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য কতটা উপকারী এবং দরকারি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য।তাহলে আর দেরি কেন আপনারা সকলেই এই টিপস গুলো ফলো করার চেষ্টা করবেন।আশা করছি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।
যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করবেন।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। আমার আজকে এই পর্যন্তই। দেখা হবে পরের কোন পোস্টে। আর এতক্ষণ ধরে আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url