কোন ধরনের শর্করা কতটুকু পরিমান খাওয়া দরকার সেগুলো বিস্তারিত জানুন
কোন ধরনের শর্করা কতটুকু পরিমান খাওয়া দরকার সেগুলো সম্পর্কে আমাদের অনেকের মধ্যেই কোন ধারণা নেই। শর্করা জাতীয় খাবার এড়ানো খুবই কঠিন। শর্করা জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে চিনি, শ্বেতসার এবং আঁশ। যা আপনি ফল দুধ এবং বিভিন্ন রকম সবজির মধ্যে পাবেন। কিন্তু শর্করাকে ইদানিং অনেকটাই খাবার তালিকা থেকে আলাদা করে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।বিশেষ করে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শর্করাকে খাবার তালিকা থেকে অনেকটাই বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হলে আপনাকে শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। কারণ হচ্ছে শর্করা আমাদের খাদ্য তালিকার মধ্যে অন্যতম একটি মৌলিক উৎস।
ভূমিকা
কোন ধরনের শর্করা কতটুকু পরিমান খাওয়া দরকার এটা নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগে থাকেন। প্রিয় পাঠক আজকে আমার আর্টিকেলের বিষয় কোন ধরনের শর্করা কতটুকু পরিমান খাওয়ার দরকার সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য নিয়ে। জানতে হলে আমার পোস্টের সাথেই থাকুন। শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট হলো এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ।যার প্রতিটি অণুতে কার্বনের সঙ্গে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন থাকে।হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের অনুপাত হয়২ঃ১।
কোন ধরনের শর্করা কতটুকু পরিমান খাওয়া দরকার
শর্করা জাতীয় খাবারের কাজ হল আমাদের শরীরের শক্তি তৈরি করা। আর একজন মানুষের দৈনন্দিন ক্যালরির ৫০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট থাকা দরকার। কেউ কেউ কার্বোহাইড্রেট কমাতে বা শরীরের ওজন কমাতে এক পর্যায়ে পাঁচ শতাংশের নামিয়ে ফেলে দেন যা একেবারেই ঠিক নয়। কেননা শর্করার সঙ্গে ভিটামিন এবং মিনারেলসের অনেক সম্পর্ক রয়েছে।
আবার অনেকে দেখা যায় শর্করা জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকা থেকে কমিয়ে বা বাদ দিয়ে প্রোটিন এবং ফ্যাট জাতীয় খাবার খায়। এই খাবারগুলো তখন শর্করার ঘাটতি পূরণে লেগে যায় তখন প্রোটিনের অভাবে তৈরি হতে থাকে। প্রতিদিন প্রয়োজনমতো ক্যালরি কিংবা প্রোটিন খেতে না পারলে আমাদের মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
এমনকি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যাসহ হরমোনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ফলে মানুষ ধীরে ধীরে কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলে এবং তাদের মাংসপেশির ক্ষয় হতে থাকে। পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমতে থাকে। দীর্ঘায়ু হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। পর্যাপ্ত শর্করার অভাবে ব্লাড সুগার কমে যায় মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ কমে যায়,ব্লাড সুগার কমে যায় এবং মানুষের ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
শরীর নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেসব খাবার খাওয়ার দরকার তার মধ্যে শর্করা খুব কম অন্তর্ভুক্ত করা হয় বা অনেকেই এ ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হলে অবশ্যই শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। তবে শর্করার ঘাটতি পূরণে আপনি যদি ভাত খেতে না চান তাহলে তার পরিবর্তে নুডুলস, চিড়া মুড়ি কিংবা ওটমিল অথবা লাল আটার রুটিও খেতে পারেন।
তবে সব সময় খাদ্য তালিকায় পরিমিত পরিমাণে শর্করা এবং প্রোটিন রাখা জরুরী। সুস্থতার জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক ১৩০ গ্রাম শর্করা গ্রহণ করা জরুরি দরকার। আজকাল শর্করা নিয়ে এত কথা রয়েছে যে আমরা আসলে দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে যাই। শর্করা আসলে আমাদের শরীরে কিভাবে কাজ করে এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেকেরই অনেক রকম ভুল ধারণা রয়েছে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক শর্করা আমাদের শরীরে কি কি কাজ করে থাকে সেগুলো সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ
সব শর্করা খারাপ নয়
আমাদের শরীর যেসব খাবার থেকে শক্তি সঞ্চয় করে তার অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে শর্করা জাতীয় খাদ্য। যার মধ্যে রয়েছে চিনি,শ্বেতসার এবং ফাইবার। আলু,আটা,চাল এবং পাস্তার মধ্যে অনেক ধরনের শ্বেতসার জাতীয় শর্করা রয়েছে। উভয়ই আমাদের শরীরের ভেতর গ্লুকোজে পরিণত করে এবং শক্তি উৎপাদন করতে সাহায্য করে এবং পরবর্তীতে চর্বিতে পরিণত করতে সাহায্য করে।
তবে আরেকটি শর্করা রয়েছে যেটিকে পথ্য জাতীয় শর্করা বলা হয়। ফলমূল এবং সবজির ভেতরে আশ রয়েছে। এই ধরনের শর্করা আমাদের পাকস্থলীর জন্য খুবই ভালো এবং শেষ পর্যন্ত এটি চর্বিতে পরিণত হয় না।
কতটা শর্করা আমাদের গ্রহণ করা উচিত
এটি পরীক্ষা করার জন্য খুব দ্রুত এবং সহজ একটি পদ্ধতি রয়েছে। একটি সাধারণ বিস্কুট মুখে নিয়ে চিবুতে থাকুন যতক্ষণ না আপনি বুঝতে পারছেন যে বিস্কুটের স্বাদ পাল্টে যাচ্ছে। সাধারণত এটা খানিকটা মিষ্টি লাগতে শুরু করে কিন্তু আপনি হয়তো মিষ্টির পাশাপাশি অন্য স্বাদও বুঝতে পারবেন। যদি এই স্বাদ পরিবর্তনের ঘটনাকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে থাকে তাহলে আপনি পরিমিত পরিমাণে শর্করা গ্রহন করছেন।
আর যদি ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে হয় তাহলে আরো ভালো। কিন্তু যদি আপনি ৩০ সেকেন্ডের পরেও বিস্কুটের স্বাদের কোন পরিবর্তন না পান তাহলে আপনার কম শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। কারণ আপনার শরীর ঠিকঠাক ভাবে শর্করা প্রক্রিয়া করতে পারছে না। এটা হয়তো আপনার ওজন বৃদ্ধি এবং অন্য সব শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। এই পরীক্ষাটি করেছেন ডক্টর শ্যারন মোলেম।
তিনি বলেন আমাদের জিব্বায় কিছু উপাদান রয়েছে, যা বড় শ্বেতসারগুলোকে ক্ষুদ্র চিনিতে বা গ্লুকোজে রূপান্তরিত করতে পারে। এ কারণে বিস্কুটটি একসময় মিষ্টি লাগতে শুরু করে। দ্রুত মিষ্টি লাগতে শুরু করা মানে আপনার শরীরে শর্করা কম আছে যার কারণে দ্রুত এনজাইম তৈরি হচ্ছে।
খারাপ শর্করাও ভালো শর্করায় পরিণত হতে পারে
বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে আবিষ্কার করেছেন যে, খাবার রান্না করা এবং ঠান্ডা করার ফলে খারাপ শর্করা অনেক সময় ভালো শর্করায় পরিণত হতে সক্ষম হয়। খারাপ শর্করা সহজেই গলে গিয়ে চিনিতে পরিণত হয় এবং দ্রুত শরীরের সঙ্গে মিশে যায় যা ওজন বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু ভালো শর্করাগুলো মিশতে একটু সময় লাগে। অনেক পথ পাড়ি দিয়ে সেটি পাকস্থলীতে জমা হয়।
পাউরুটি খাওয়া খারাপ নয়
পাউরুটি খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ নয়। তবে আরো ভালো হয় যদি সাদা রঙের পাউরুটির পরিবর্তে কালচে রঙের পাউরুটি খাওয়া যায় তাহলে। সাধারণত যেসব পাউরুটি তৈরি করা হয় সেগুলো সহজে হজম হয়ে যায় ফলে শরীরে গ্লুকোজ হিসেবে জমা হওয়ার বদলে আগেই অন্যান্য অংশে মিশে যায়।
তবে পূর্ণ গমের তৈরি পাউরুটি বা রুটিতে প্রতিরোধী স্বেচ্ছায় থাকে যার ফলে আপনার শরীরের ভেতরে অন্ত্রের ভেতরে এগিয়ে সেটি যাতায়াত করতে সক্ষম হয়। পাউরুটি কেনার সময় চিনির পরিমাণটা অবশ্যই দেখে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ কারণ পূর্ণ গমের অনেক পাউরুটিতে স্বাদ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন রকম চিনি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ফ্রিজ থেকে রুটি বের করে সরাসরি টোস্ট করে খাওয়া
এই প্রক্রিয়াটি রান্না এবং ঠান্ডা করার পদ্ধতি অনুসরণ করে। ঠান্ডা হওয়ার কারণে সেই রুটিতে প্রতিরোধি শ্বেতসার এর পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ওই রুটি থেকে কম শর্করা তৈরি হয় যা আপনার হজমে উপকার করে।
পেটে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে নিয়ে আসে
যেসব শ্বেতসার আমরা খেয়ে থাকি তার প্রায় ৯৫ শতাংশ আমাদের পেটে খুব সহজেই হজম হয়ে যায়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে জানান যে এর মধ্যে ছোট একটি ভাগ রয়েছে যেটিকে বলা হয় প্রতিরোধী শ্বেতসার। যেটি আমাদের পেটের ভেতর গিয়ে ব্যাকটেরিয়ার খাবারের পরিণত হয় এবং এমন কিছু রাসায়নিক তৈরি করে যা আমাদের পেটে ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
কম শর্করাযুক্ত খাবার ডায়াবেটিস২ প্রতিরোধ করতে পারে
ভালো খাবার হয়তো সারা জীবনের ওষুধ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম।সাধারণত খাবারের নিয়ম হলো আপনার প্লেটের খাবারের রং এর দিকে তাকান বাদামি এবং সাদা খাবার বাদ দিয়ে সবুজ খাবার বাড়িয়ে দিন।গবেষণায় জানা গেছে খারাপ শর্করা দূর করতে পারলে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।যার কারণে আপনার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যেতে পারে তাই সবুজ খাবার বেশি খাবার চেষ্টা করতে হবে।
জটিল শর্করাযুক্ত খাবার
আস্ত শস্যদানা
শস্য দানা বা গোটা শস্য আশ সমৃদ্ধ খাদ্যের মধ্যে অন্যতম। এর মধ্যে ব্রান এবং এন্ডোস্পার্ম থাকে যা গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করতে সাহায্য করে। যেমন:লাল চাল, ওটস, রাই, ভুট্টা এবং বার্লি। পাশাপাশি এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, প্রোটিন, জিংক এবং ভিটামিন বি।
আলু
আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ,পটাশিয়াম, ফাইবার, আয়রন, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি ৬। এক কাপ খোঁসা সহ আলুতে রয়েছে ৩১ গ্রাম শর্করা এবং মাঝারি সাইজের আলুতে রয়েছে ১১০ গ্রাম ক্যালরি। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
সাইট্রাস ফল
এ জাতীয় ফলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি জাতীয় ফল। এর মধ্যে রয়েছে আমলকি, লেবু, কমলালেবু, জলপাই ইত্যাদি ফল। এ সকল ফল উচ্চ মাত্রার আঁশ, খনিজ এবং ভিটামিনের উৎস।
বেরিজাতীয় ফল
বেরি জাতীয় ফলের মধ্যে রয়েছে স্ট্রবেরি, চেরি ফল ইত্যাদি। এই ফলগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রো-অ্যান্থোসায়ানিন নামক প্রাকৃতিক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার রোগের ঝুঁকি কমাতে ভীষণ রকম সাহায্য করে।
আপেল
একটি আপেলের মধ্যে রয়েছে ২৩ গ্রাম শর্করা ও প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরে বিভিন্নভাবে উপকার করে থাকে।
মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলুর মধ্যে রয়েছে খুব কম সোডিয়াম, কোলেস্টেরল এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট। এ ছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ,পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন এ এবং সি।
বাদাম এবং লেগুম
বাদাম এবং লেগুমের মধ্যে শর্করার পাশাপাশি রয়েছে ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড, খনিজ, ভিটামিন। তবে অবশ্যই এসব খাবার শারীরিক অবস্থা ভেদে খেতে হবে। এছাড়াও খেতে পারেন সিমের বিচি,মটরশুটি,মুগ ডাল,মসুর ডাল,ছোলা ইত্যাদি।
কলা
আমরা সকলেই জানি কলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেলস রয়েছে। এছাড়াও কলায় আছে পটাশিয়াম, ভিটামিন b6। একটি কলাতে সর্বোচ্চ ২৪ গ্রাম শর্করা থাকে যা থেকে ভালো মাপের পুষ্টি পাওয়া যায়।
সবুজ শাকসবজি
সবুজ শাকসবজি মধ্যে ক্যালরি পরিমাণে কম থাকে। উচ্চমানের ভিটামিন মিনারেলস সমৃদ্ধ হয় প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন শসা,টমেটো,পুদিনা,ধনেপাতা,লাউ,ফুলকপি ইত্যাদি শাকসবজি।
শুষ্ক ফল
খেজুর,কিসমিস,বিভিন্ন বাদাম ইত্যাদির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমানে শর্করা।এছাড়াও পাশাপাশি রয়েছে ভিটামিন, মিনারেলস এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে আশ।
সিমের দানা এবং মটরশুটি
এ জাতীয় খাবারে খুব কম পরিমাণ চর্বি থাকে। আর পেটেও থাকে অনেকক্ষণ পর্যন্ত। তাই এই খাবারগুলো যতটা সম্ভব খাওয়া দরকার। এছাড়াও এই ধরনের খাবারের মধ্যে ফলিক এসিড, আর ভিটামিন এবং অন্যান্য শর্করায় পরিপূর্ণ থাকে।
শালগম
শালগম শর্করার অন্যতম একটি উৎস।এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শর্করা। তাই অন্য সবজির সাথে অল্পমাত্রায় শালগম মিশিয়ে রান্না করলে আপনার দৈনন্দিন শর্করার চাহিদা পূরণ হবে খুব সহজেই।
ছোলা
ছোলা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ছোলা খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে প্রচুর পরিমাণে শর্করার ঘাটতি পূরণ হবে। চাইলে আপনি ছোলা ভুনা করেও খেতে পারেন। এক কথায় কোন না কোন ভাবে ছোলা খেতে পারলে আপনার শরীরের জন্য প্রচুর উপকারী হবে।
কম শর্করাযুক্ত কিছু আদর্শ খাবার
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বা ওজন কমাতে অনেক সময় খাদ্য তালিকা থেকে শর্করার পরিমাণ অনেকেই খুব কমিয়ে দেয় বা রাখে না বললেই চলে। কারণ শর্করা ওজন বৃদ্ধির জন্য ভীষণভাবে দায়ী। বেশ কয়েকটি ডায়েট পরিকল্পনায় শর্করা সম্পূর্ণভাবে বাদ দিয়ে রাখা হয়েছে তবে আপনার ডায়েট তালিকা থেকে শর্করা সম্পূর্ণ বাদ দিলে ভালো হওয়ার চেয়ে উল্টা বেশি ক্ষতি হতে পারে।
এজন্য কম শর্করাযুক্ত কিছু খাবার আমাদের গ্রহণ করা সব থেকে ভালো উপায়। সাধারণত দুই ধরনের শর্করা রয়েছে। একটি হলো জটিল শর্করা এবং সরল শর্করা। চিনি,মধু,পাস্তা,রুটি,ফলের রস ইত্যাদি খাবারে সাধারণত সরল শর্করা পাওয়া যায়। অন্যদিকে শস্য দানা,ভুট্টা,মটর,গম,রুটি,মিষ্টি আলু সহ কিছু উদ্ভিদে জটিল শর্করা পাওয়া যায়।
সরল শর্করা শরীরে প্রবেশ করার পর খুব দ্রুত সময়ে তা গ্লুকোজ এ পরিণত হয় কিন্তু জটিল শর্করা গ্লুকোজের রূপান্তরিত হতে আরও বেশি সময় নিয়ে থাকে। এ কারনে খারাপ শর্করা গ্রহণের পর তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি পাওয়া যায় তবে তা বেশি সময় পর্যন্ত স্থায়ী হয় না। কিন্তু জটিল শর্করা আপনার শরীরকে অনেকক্ষণ পর্যন্ত শক্তি সরবরাহ করতে পারে।
নিচে কিছু কম শর্করাযুক্ত এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকরী এরকম কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলোঃ
- এক কাপ কাটা ব্রকলি তে(১১.২ গ্রাম) প্রায় ২.২ গ্রাম চিনি এবং ৫.১ গ্রাম ফাইবার থাকে। ব্রকলিতে শর্করা কম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি যেমন ভিটামিন b6 এবং প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। অলিভ অয়েল এবং রসুন দিয়ে ব্রকলি রান্না করে স্বাস্থ্যকর খাবার প্রস্তুত করে আপনি খেতে পারেন।
- এক কাপ রান্না করা মটরশুঁটিতে রয়েছে ৯.৯ গ্রাম শর্করা। এতে চিনির পরিমাণ ফাইবারের পরিমাণের চেয়ে বেশি এবং শর্করার মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
- এক কাপ রান্না করা পালং শাকের মধ্যে ৬.৮ গ্রাম শর্করা থাকে। পালংশাকে তুলনামূলকভাবে কম পরিমাণে চিনি এবং শর্করার রয়েছে যা এটিকে স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় রাখতে সাহায্য করে।
- সূর্যমুখী বীজের মধ্যে রয়েছে ১ গ্রাম চিনি এবং ৩ গ্রাম ফাইবার এবং কম শর্করা থাকে যা একটি স্বাস্থ্যকর নাস্তা হিসেবে আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি।
- এক কাপ রান্না করা ফুলকপির মধ্যে ৫.১ গ্রাম শর্করা থাকে। এর মধ্যে ২.৬ গ্রাম চিনি এবং ২.৯ গ্রাম ফাইবার থাকে। ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান। তাই খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ফুলকপি রাখার চেষ্টা করবেন।
- বেশি সিদ্ধ করার ডিমের মধ্যে প্রায় ০.৬ গ্রাম চিনি ২ গ্রাম ফাইবার এবং ৪ গ্রাম শর্করা থাকে। এছাড়াও এতে অ্যামিনো এসিড এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং স্বাস্থ্যকর কিছু ফ্যাট থাকে। কিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে সকালে প্রতিদিন সিদ্ধ করার ডিম আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সক্ষম।
- আখরোট আমাদের অনেকেরই খুব পরিচিত। ১.৫ গ্রাম আখরোটে প্রায় ০.৭৫ গ্রাম চিনি ২ গ্রাম ফাইবার এবং ৪ গ্রাম শর্করা থাকে। আখরোট সবচেয়ে কম শর্করাযুক্ত একটি খাবার। তাই সকালের নাস্তায় এটি আপনার জন্য খুব স্বাস্থ্যকর একটি খাবার হতে পারে।
- এক্সট্রা ভার্জিন অলিভয়েল দিয়ে আমরা আজকাল অনেকেই রান্না করে থাকি। এবং এই তেল আমাদের হার্ট স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে। এই তেল অন্য সকল তেলের থেকে কম শর্করাযুক্ত।
- মিষ্টি কুমড়াতে রয়েছে একটু কম পরিমাণে শর্করা এবং তার সাথে বিভিন্ন রকমের পুষ্টি গুনাগুন। তাই আপনি যদি সব ধরনের পুষ্টি একটি খাবারের মধ্যে পেতে চান তাহলে আপনি মিষ্টি কুমড়া আদর্শ সবজি হিসেবে খেতে পারেন।
- গাজর খেতে অনেকেই খুব পছন্দ করে থাকে।
- আবার গাজর সালাদ হিসেবেও অনেকে খেয়ে থাকে আবার কেউ খেয়ে থাকে তরকারি হিসেবে। সালাদ জাতীয় সুস্বাদু এই সবজির মধ্যে শর্করার পরিমাণ খুব ভালো এবং স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। তাই খাদ্য তালিকায় গাজর রাখতে ভুলবেন না।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আমরা জানলাম কোন ধরনের শর্করা কতটুকু পরিমান খাওয়া দরকার সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য।তাহলে আর দেরি কেন আপনারা সকলেই এই টিপস গুলো ফলো করার চেষ্টা করবেন।আশা করছি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।
যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করবেন।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। আমার আজকে এই পর্যন্তই। দেখা হবে পরের কোন পোস্টে। আর এতক্ষণ ধরে আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url