পালংশাকের পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত তথ্য

পালংশাকের পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। পালং শাক একটি শীতকালীন সবজি এবং এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীর সুস্থ সবল রাখার জন্য যথেষ্ট। বিভিন্ন প্রকার অসুখ-বিসুখ দূরে রাখতে খাবারের তালিকায় এই শাঁক রাখতে পারেন। সবুজ সকল শাকসবজির মধ্যে পালং শাক সবচেয়ে সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর।
পালংশাকের পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত তথ্য
পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এই শাঁকটি খেলে আমাদের পেট ভরে থাকে এবং আমাদের বাড়তি খাবারের চাহিদা কমে যায়। প্রিয় পাঠক আজকে আমার আর্টিকেলের বিষয় পালংশাকের পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।

ভূমিকা

পালংশাকের পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে আমার পোষ্টের সাথেই থাকুন। পাতাপহুল সবজি হিসেবে পালং শাক বেশ সমাদৃত একটি শাক। পালং শাকের বিভিন্ন অনবদ্য গুণাগুণ রয়েছে যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে বাঁচায়। প্রত্যেকটি বাঙালি বাড়িতে শাক খাওয়া রেওয়াজ রয়েছে আদিকাল থেকেই। মনে রাখবেন বিভিন্ন ধরনের শাকের মধ্যে গুনের বিচার করতে গেলে প্রথমেই আসবে পালংশাকের নাম।

পালংশাকের পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা

পালংশাককে শাকের রাজা বললেও ভুল হবে না। এর মধ্যে রয়েছে একাধিক পুষ্টি গুণাগুণ। এর মধ্যে উপস্থিত রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে,ফোলেট , থায়ামিন, ফসফরাস ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান। রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও পালং শাকের মধ্যেই রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড।
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা শাকের মধ্যে রয়েছে ২৩ কিলোক্যালরি শক্তি,৩.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ,০.৪ গ্রাম সুগার,২.২ গ্রাম ফ্যাট এবং২.৯ গ্রাম প্রোটিন। চলুন তাহলে পালং শাকের স্বাস্থ্য গুনাগুন নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেইঃ
  • পালংশাকের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
  • যদি আপনি কম ক্যালরিযুক্ত কোন খাবার বাছাই করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে পালংশাক বাছাই করে নিতে হবে। কেননা এতে ক্যালরি কম রয়েছে যা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
  • যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা রয়েছে তাদের ভালো হবে জীবন যাপন করাটা অনেক কঠিন কাজ হয়ে গেছে। অনেকে আবার কোষ্ঠকাঠিন্যের ভয়ে বিভিন্ন খাবার খেতে পারেন না। সেক্ষেত্রে পালংশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আজ যা আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য নির্ভয়ে দূর করতে পারে।
  • বিভিন্ন প্রকার সবুজ শাক সবজির মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ফাইটোকেমিক্যাল যা আমাদের দৃষ্টি শক্তির ক্ষতি বাধা দেয় এবং এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ মাত্রার বিটা ক্যারোটিন যা আমাদের চোখের ছানি পড়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • পালং শাকের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ যা আমাদের ত্বকের বাইরের স্তরের আদ্রতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটা বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা যেমন ব্রণ, বলিরেখা ইত্যাদি দূর করতে বেশ কার্যকর। এছাড়াও এটা আমাদের ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • পালং শাকের মধ্যে রয়েছে উচ্চ মাত্রার আয়রন যা আমাদের দেহের অক্সিজেনের উৎপাদনের জন্য ভীষণ জরুরী। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ভিটামিন সি এবং ই কে ত্বরান্বিত করে এবং আমাদের পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। এতে আমাদের শরীরে ক্লান্তি ভাব দূর হয়ে যায়।
  • পালং শাকের মধ্যেই রয়েছে নিওজেন্থিন নামক এক ধরনের উপাদান যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ নিরাময় করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যাদের শরীরে বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য তালিকায় পালং শাক রাখা প্রয়োজন। এতে করে তারা উপকৃত হতে পারবেন।
  • এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড যা আমাদের কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেমকে ভালো রাখতে খুবই কার্যকর। আমাদের হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে সাশ্রয় এবং সবজিটি আমাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রাখা দরকার।
  • এই শাকে থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ আমাদের শরীরের রক্তের শ্বেত রক্তকণিকার মাত্রা বজায় রাখে। ফলে দেহ বিভিন্ন রকম সংক্রমণ এবং রোগবালায় থেকে রক্ষা পায়।
  • পালং শাকের মধ্যে থাকা ভিটামিন কে আমাদের হাড়ের ক্যালসিয়াম বজায় রেখে স্থিতিস্থাপকতা বাড়িয়ে দেয়। যার কারণে আমাদের হাড় সুস্থ থাকে এবং ক্ষয় রোধ হয়।
  • আমাদের অতিরিক্ত চুল পড়া অন্যতম কারণ হলো লৌহের সমস্যা বা ঘাটতি। পালং শাক লৌহের অন্যতম একটি উৎস। এতে আছে ভিটামিন এ এবং ফোলেট। যা আমাদের চুলের ফলিকল মসৃণ করতে এবং তেল নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করে।
  • এছাড়াও পালং শাক আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং আমাদের স্মৃতিশক্তিকে বাড়াতে সাহায্য করে।
  • এরমধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে টকোফেরোল, ক্লোরোফাইলিন যা ক্যান্সার প্রতিরোধে এবং ক্যান্সার রোগী চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর। এজন্য নিয়মিত খাদ্য তালিকায় পালংশাক রাখা জরুরী।
  • পালং শাকের মধ্যে রয়েছে আলফা লিপোয়িক নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরে ইনসুলিনের সেন্সেভিটিভিটি বাড়াতে সাহায্য করে।
  • পালং শাকের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন। যা আমাদের এজমা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • পালং শাকের রসে প্রচুর পরিমাণে লৌহ কণিকা আমাদের রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক রাখতে সাহায্য করে ফলে আমাদের রক্ত স্বল্পতার কোন সমস্যা থাকলে সেটা দূর হয়ে যাবে।

পালং শাকের জুসের উপকারিতা

এতক্ষণ ধরে আমরা জানলাম পালংশাকের পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। উপরের অংশগুলো পড়ার পর আপনারা হয়তো জানতে পেরেছেন সুস্থ থাকার জন্য এবং আমাদের বিভিন্ন রোগ মুক্ত থাকার জন্য পালংশাক কতটা উপকারী।পালংশাক শুধু রান্নার মাধ্যমে নয় এটি আমরা জুস করে খাওয়ার মাধ্যমে উপকারিতা পেতে পারি। পালং শাকের জুসের উপকারিতা গুলো নিচে দেওয়া হলঃ
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • পেশির শক্তি বেড়ে যায়।
  • দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে।
  • আমাদের হার্ট সুস্থ থাকে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
  • চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
  • আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে।
এ ছাড়া পালং শাকের ভেতরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি রয়েছে ভিটামিন ডি, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন কে ও রয়েছে ভিটামিন সি যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকার করে থাকে এবং এইসব ভিটামিনের অভাব পূরণ করে থাকে।

পালংশাকে কি এলার্জি আছে

আমাদের মধ্যে অনেকেরই একটি প্রশ্ন থাকে যে পালংশাকে এলার্জি আছে কিনা? তাই চলুন এই বিষয়টি নিয়ে আজকে আলোচনা করা যাক। আমাদের প্রত্যেকের বোঝা উচিত যে আমরা প্রত্যেকটা মানুষ আলাদা এবং আমাদের প্রত্যেকের শারীরিক গঠন, বৈশিষ্ট্য এবং ত্বকের ধরন আলাদা আলাদা।
এলার্জি সমস্যা মানুষের তখনই হয় যখন আমাদের ইমিউন সিস্টেম ক্ষতিকর না এ ধরনের দ্রব্য বা বস্তুগুলোকে ক্ষতিকর ভেবে রিয়াক্ট করে বসে আর সেই প্রতিক্রিয়াটি আমাদের এলার্জি। আমাদের প্রত্যেকের বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে বিভিন্ন ধরনের খাবারে আমাদের এলার্জি হতে পারে। একেকজনের এলার্জি এক এক ধরনের খাবারে থাকতে পারে।
সবার যে একই বস্তুতে এলার্জি থাকবে বিষয়টি এরকম নয়। কারোর পালং শাক খেলে এলার্জি দেখা যায় আবার কারণ কোন সমস্যা হয় না। তাই পালং শাকে এলার্জি বাড়বে কিনা এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে ব্যক্তির উপর। তবে যারা পালংশাক খেলে এলার্জি সমস্যা বোধ করেন তাদের ক্ষেত্রে এটি এড়িয়ে চলাই ভালো।

পালংশাকের অপকারিতা

পালং শাকের পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা জানলেই হবে না। আরো আমাদের জানা উচিত অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে তার উপকারিতা কি ধরনের হতে পারে। আমাদের প্রত্যেকের জানা উচিত যতই স্বাস্থ্যকর বা উপকারী খাবার হোক না কেন সেটা যখন মাত্রা অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে যায় তখন আমাদের শরীরের উপকারের পরিবর্তে বিভিন্ন রকম ক্ষতি হতে পারে।
তাই উপকারী হলেও আমাদের যে কোন খাবার সবসময় পরিমিত পরিমানে খাওয়া উচিত। পালং শাক এর ব্যতিক্রম নয় কেননা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া দরকার। প্রিয় পাঠক অতিরিক্ত পালন শাক খেলে আমাদের শরীরে কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে চলুন সে সম্পর্কে একটু জেনে নেইঃ
  • বেশি বেশি পালং শাক খাওয়ার ফলে আমাদের ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
  • এছাড়াও পালং শাকের মধ্যে রয়েছে অক্সালিক নামক এক ধরনের উপাদান যা আমাদের ক্যালসিয়ামের সাথে মিলিত হয়ে কিডনিতে পাথরের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • এছাড়াও তাদের পালংশাকে এলার্জি বেড়ে যায় তারা এ ধরনের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো।
  • এছাড়াও আজকাল পালং শাক চাষ করার জন্য জমিতে প্রচুর পরিমাণে কীটনাশকের ব্যবহার করা হয় যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ এবং ক্যান্সার সৃষ্টির মূল কারণ।
  • পালং শাক আমাদের রক্ত ঘন হতে বাধা দেয় এবং এটা থাকা ভিটামিন কে রক্ত ঘনীভূত করে। ফলে অতিরিক্ত পালং শাক গ্রহণ করলে রক্ত পাতলা হয়ে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত পালং শাক খেলে হঠাৎ করে রক্তঝাপ কমে যেতে পারে ফলে বমি বমি ভাব এবং শরীর দুর্বল লাগতে পারে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আমরা জানলাম পালংশাকের পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে  বিস্তারিত তথ্য।এছাড়াও আরো জানলাম অতিরিক্ত পালং শাক খাওয়ার ফলে আমাদের শারীরিক কি ধরনের সমস্যা হয় সেগুলো সম্পর্কে।তাহলে আর দেরি কেন আপনারা সকলেই এই টিপস গুলো ফলো করার চেষ্টা করবেন।আশা করছি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।
যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করবেন।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। আমার আজকে এই পর্যন্তই। দেখা হবে পরের কোন পোস্টে। আর এতক্ষণ ধরে আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url