সেহেরীতে কি খাবেন আর কোন খাবারগুলো এড়িয়ে যাবেন বিস্তারিত জানুন
সেহেরীতে কি খাবেন আর কোন খাবারগুলো এড়িয়ে যাবেন এটা অনেকেই জানেন না হইতবা। বছর ঘুরে আবার চলে এলো সিয়াম সাধনার মাস। আত্মশুদ্ধির এই মাসে অনেকেই যে বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকে সেটা হল ইফতার এবং সেহরি নিয়ে। খাদ্য তালিকায় কোন খাবার রাখলে সুস্থ এবং সফলভাবে সারা মাস রোজা রাখা যাবে সেই বিষয় নিয়ে।
অনেকে আমরা শুধু ইফতারিকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি কিন্তু সেহেরিকে তেমনভাবে প্রাধান্য দেয় না। সেহেরির খাবার নিয়ে খেয়াল না রাখার কারণে নিজেদের অজান্তেই আমরা রোজা রেখে হয়ে যায় অতিরিক্ত ক্লান্ত। প্রিয় পাঠক আজকে আমার আর্টিকেলের বিষয় সেহরিতে কি খাবেন আর কোন খাবারগুলো এড়িয়ে যাবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য নিয়ে।
ভূমিকা
সেহেরিতে কি খাবেন আর কোন খাবারগুলো এড়িয়ে যাবেন জানতে হলে আমার আর্টিকেলের সাথেই থাকুন। আমরা সকলেই জানি রমজান মাসের এবাদত বন্দেগীর ফজিলত অন্যান্য মাসের চেয়ে তুলনামূলক অনেক বেশি। কিন্তু আপনি যদি সুস্থ না থাকেন তাহলে ঠিকমতো এবাদত করতে পারবেন না। এমনকি রমজানের শুরু থেকে জীবন যাপনের সচেতন না হলে আপনার ভালো স্বাস্থ্যও খারাপের দিকে যেতে পারে।
সেহেরীতে কি খাবেন আর কোন খাবারগুলো এড়িয়ে যাবেন
জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো খাবার দাবার। খাবার দাবার যদি ঠিকঠাক ভাবে না হয় তাহলে আমরা অসুস্থ হয়ে যাই এবং আমাদের জীবন যাপনে ব্যাঘাত ঘটে। আর রোজার সময়ের কথা বললে তো প্রথমে খাবারের দিকে নজর দেওয়া দরকার। সেহেরিতে যেমন তেমন খাবার খেলে শরীরের বিভিন্ন পাশে প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি আছে যার কারণে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত করতে পারে বিভিন্নভাবে। প্রিয় পাঠক সেহরিতে কি খাবেন আর কোন খাবারগুলো এড়িয়ে যাবেন সেগুলোর একটা তালিকা নিচে দেওয়া হলঃ
আঁশ সমৃদ্ধ খাবার
যেসব খাবার প্রচুর পরিমাণে আর সমৃদ্ধ সেগুলো শোষণ করে নিতে শরীর বেশি সময় নিয়ে থাকে। রোজা রাখা অবস্থায় যখন আমরা সমৃদ্ধ খাবার খায় তখন অতিরিক্ত সময়ের জন্য শরীরের শক্তি থাকে এবং খিদে কম পায়। তাই রোজার সময় সেহরিতে আজ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আর সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে কলা, আম, গাজর, বাদাম, ডাল, সজনে, ঢেঁড়স ইত্যাদি জাতীয় খাবার।
কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার
রোজা থাকা অবস্থায় আপনার দেহে পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট এর কোন বিকল্প নেই। এর উপাদানের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সেহরিতে পরিমিত পরিমাণ ভাত, আলু এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার রাখুন।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি
সেহরিতে অনেকেই মনে করেন পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার দরকার নাই। কিন্তু সেহরিতে উঠে কিছুক্ষণ পরপর পানি পান করার জরুরী। কেননা সারাদিন রোজা রেখে প্রতিদিন কমপক্ষে সাত থেকে আট গ্লাস পানি পান করা উচিত। এটা আমাদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং আপনার শরীরকে সুস্থ রাখবে।
ডিম
আমরা সকলেই জানি ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। ডিম খেলে আমাদের মাংসপেশি থাকবে শক্তিশালী এবং আমরা সারাদিন রোজা রাখার মত প্রয়োজনীয় শক্তি পাব। তাই প্রতিদিন সেহরিতে একটি করে ডিম রাখতে পারেন।
পানি সমৃদ্ধ ফল এবং সবজি
যেসব ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে সেগুলো খেলে তৃষ্ণা কম পাবে। আমাদের শরীরের পানি শূন্যতা পূরণে সেহেরিতে তরমুজ,আপেল, ডাব কিংবা কমলার মত ফল খেতে পারেন। এতে আপনার শরীর যথাযথ পানি শূন্যতা পূরণ হবে এবং আপনি শক্তিশালী থাকতে পারবেন সারাদিন।
দুধ
কম ফ্যাট যুক্ত দুধ শরীরের জন্য উপকারী। সেহরিতে এক গ্লাস দুধ যোগান দিতে পারে আপনার সারাদিনের শক্তি। এজন্য সেহরিতে এক গ্লাস দুধ কিংবা দুধ দিয়ে ভাত খাওয়ার চেষ্টা করুন।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
সেহরিতে আমি কিংবা প্রোটিন জাতীয় খাবার থাকলে আপনার দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সারাদিন আপনাকে শক্তি যোগাবে। মাছ, মাংস, গুঁড়া দুধ, তরল দুধ খাবার প্রভৃতি প্রোটিনের ভালো উৎস। এছাড়াও এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন এবং জিংক যা পুষ্টি উপাদানের শতভাগ পূরণ করবে।
খেজুর এবং বিভিন্ন বাদাম
সেহরিতে বিভিন্ন ধরনের খাবার খেলো শেষে দুই থেকে তিনটি খেজুর খাওয়া প্রত্যেকেই জরুরী। এটি মুখে রুচি ঠিক রাখে এবং আমাদের শরীরকে সতেজ রাখতে এবং শরীরে শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। যেমনঃ কাঠবাদাম, চীনা বাদাম, কাজুবাদাম, কিসমিস ইত্যাদি। এগুলো আমাদের শরীরের শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
চর্বি ছাড়া মাংস
সেহরিতে চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। সে ক্ষেত্রে চর্বি ছাড়া মাংস খেতে পারেন। চর্বি ছাড়া মাংসের মধ্যে রয়েছে মুরগির মাংস। মুরগির মাংস খেলে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা অনেকটাই পূরণ হয়ে যাবে।
দই
সেহেরী শেষ করে অন্তত দুই থেকে তিন চামচ দই খেতে পারেন। কারণ এটি আমাদের পাকস্থলীকে শান্ত রাখে এবং এসিডিটি দূর হতে সাহায্য করে। তাই যারা দুধ খেতে অভ্যস্ত না তারা সেহেরী শেষ করে কয়েক চামচ দই খেয়ে নিতে পারেন।
তবে যারা রুটি বা ভাত খেয়ে অভ্যস্ত তারা ভাত বা রুটি ছাড়া অন্য কিছু খেয়ে কখনো স্বস্তি পাবে না। তাই সেহরিতে তারা ভাত-বার রুটি তাদের পছন্দমত যে কোন একটি খেতে পারবে। তবে এ হাদিসের ওপর আমল করার ইচ্ছায় ভাত খাওয়ার পর দুই একটা খেজুর খেয়ে নেওয়া ভালো। তাহলে সুন্নত রক্ষা করাও হয়ে গেল। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেহরি শেষ করে কয়েকটা খেজুর খেয়ে নিতেন। হযরত হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত,"মুমিনদের শ্রেষ্ঠ সেহরি হল খেজুর।"
সেহেরিতে কোন খাবারগুলো এড়িয়ে যাবেন
- যারা চা বা কফির উপর বেশি আসক্ত তারা সেহরিতে অনেক সময় চা কফি খেয়ে থাকে। ক্যাফিন সমৃদ্ধ পানিও আপনার তৃষ্ণা এবং শরীরের তাপমাত্রা কে বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও এসবের মধ্যে ক্যাফেইন থাকে যা আমাদের মূত্রের পরিমাণকে বাড়িয়ে দেই। ফলে শরীরের পানির পরিমাণ কমে যায় খুব তাড়াতাড়ি এবং আমাদের তৃষ্ণা পায়। এজন্য সেহরিতে যা কফি বা ড্রিংকস জাতীয় কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- রোজা রাখা অবস্থায় যেন ক্ষুদা না লাগে সেজন্য অনেকেই সেহরিতে ভারী খাবার খেয়ে থাকেন যা কখনোই খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের পাকস্থলীর ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যায় এমনকি সেখান থেকে বদহজমের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অনেকের মধ্যে এ ধরনের ভুল ধারণা আছে যে সেহরিতে বেশি করে পানি খেলে হয়তোবা সারাদিন আর পিপাশা পাবে না। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল কথা। সেহরিতে অনেক বেশি পানি পান করার ফলে আপনার শরীরে আসতে পারে হজমের সমস্যা। তাই সব সময় পরিমিত পরিমাণে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
- পরিহার করতে হবে অতিরিক্ত লবণ জাতীয় খাবার। কেননা অতিরিক্ত লবণ জাতীয় খাবার খেলে আমাদের দেহে পানি শূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি কাঁচা লবণ খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে।
- এছাড়াও সেহরিতে অতিরিক্ত তেল চর্বি জাতীয় খাবার, মসলা জাতীয় খাবার এবং অতিরিক্ত ঝাল জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। সেক্ষেত্রে সেহরির সময় খাদ্য তালিকা থেকে বিরিয়ানি, পোলাও কিংবা তেহেরি জাতীয় ভারি খাবার গুলো বাদ দিতে হবে। এসব খাবার খেলে বদহজম, বুকে ব্যথা, পেট ফাঁপা এবং বুক জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- এছাড়াও সেহরিতে মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। কেননা মিষ্টি জাতীয় খাবারের বদহজম দেখা দিতে পারে। এজন্য সেহরিতে মিষ্টি খেলেও খুবই কম পরিমাণে বা হালকা মিষ্টি খাওয়া দরকার।
- অনেকেই শুটকি খেতে ভীষণ রকম পছন্দ করে থাকেন। কিন্তু শুটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সংরক্ষণ করার সময় প্রচুর পরিমাণে লবণ দিয়ে থাকে। যার কারণে এটি উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগীদের জন্য ভীষণ রকম ক্ষতি করে। তাই সেহেরিতে শুটকি মাছ ভর্তা বা রান্না খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এটি আপনার হজমের সমস্যা করতে পারে পাশাপাশি যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে তারাও এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলবেন।
- সেহরিতে কোন ভাবে বাসি খাবার খাওয়া ঠিক নয়। এমনকি মুরগির মাংস রান্না করার পরে সেটা নতুন ভাবে গরম করলেও সেটার মধ্যে এক ধরনের বিষক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে যা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ রকম ক্ষতিকর। তাই সবসময় চেষ্টা করবেন গরম গরম টাটকা খাবার রান্না করে সেহেরি করার।
- অনেকেই পানির পরিবর্তে লেমন অথবা রোজ ওয়াটার, বিভিন্ন ধরনের শরবত এবং নানা ধরনের প্রক্রিয়াজাত পানীয় পান করে থাকে। এ ব্যাপারে পুষ্টিবিদদের অভিমত হল, একজন রোজাদারের শুধু বিশুদ্ধ পানি পান করাই ভালো। রোজাদার ব্যক্তিদের প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি এবং ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন।
সেহেরী হলো বরকতের খাবার। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন," তোমরা সেহরি খাও। কেননা তাতে বরকত রয়েছে।" সেহরিতে পেট ভরে খেতে হবে বা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খেতে হবে সেটা জরুরী নয়। কোন কারনে খেতে অনীহা থাকলে বা সম্ভব না হলে মাত্র এক ঢোক পানি অথবা একটি খেজুর খেয়েও কিংবা এক লোকমা খাবারের দ্বারাই সেহেরি আদায় করা সুন্নাত। সেহরিতে নিজের রুচিসম্মত যেকোনো খাবার খাওয়ার অনুমতি রয়েছে। নবী করিম রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন," মুমিনের সর্বোত্তম সেহরি হল খেজুর।"
ভাতের বিকল্প হিসেবে সেহেরিতে যা যা খেতে পারবেন
রমজান মাসে আমরা সারাদিন কিছু খেতে পারি না। ইফতার করার পরেও তেমন কিছু খাওয়ার ইচ্ছা থাকে না। আর বাকি থাকে শুধু সেহেরির সময়। যে সময় আমরা কিছু খেতে পারি বা খাওয়ার ইচ্ছা থাকে। তাই রমজান মাসে সুস্থ থাকতে চাইলে সেহরির সময় নির্দিষ্ট একটি খাদ্য তালিকা অনুযায়ী খাবার খাওয়া উচিত। যা কিনা আপনার শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টির যোগান দিবে।
সেহরিতে আমরা ভাত খেয়ে থাকি এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অনেকেই সেহেরীতে ভাত খেয়ে অভ্যস্ত নয়। তাদের জন্য বেশ কিছু খাবার আছে যা সেহরিতে খাওয়ার জন্য একদম উপযুক্ত। একদিক থেকে যেহেতু গরমের দিন আর অন্যদিকে রমজান মাস তাই কিছু খাবার রয়েছে যা আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখত সাহায্য করবে এবং সারাদিন আমাদেরকে স্বস্তি দেবে।
- রমজান মাসের ইফতারের খাদ্য তালিকায় এবং সেহরির খাদ্য তালিকায় অন্যতম একটি খাবার হলো চিড়া। তবে সেহরিতেও মানিয়ে নিয়ে খাওয়া যাবে এই খাবারটি। রাতের খাবার পর ঘুমানোর আগে পরিমাণ মতো চিড়া ভিজিয়ে রাখুন। সেহরির সময় চিড়ার থেকে পানিটা ফেলে দিয়ে আবারো কিছু নতুন পানি যোগ করুন। তার মধ্যে হালকা পরিমাণে চিনি বা গুড় মিশিয়ে খাবারটি খেতে পারেন। সাথে যোগ করতে পারেন অল্প পরিমাণে দুধ কিংবা প্যাকেটজাত দুধ।
- রমজান মাসের খাদ্য তালিকায় ফলমূল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে কলা এর মধ্যে অন্যতম। প্রতি একশ গ্রাম কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ, শর্করা, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আমিষ, ফ্যাট এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। এসব উপাদান আমাদের সারা দিনের পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে ফল খাওয়া যাবে না। তবে আপনি চিড়ার সাথে কলা মিক্স করেও খেতে পারেন।
- তরমুজের মত বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি পানির একটি উৎকৃষ্ট উৎস। রমজান মাসে আমাদের শরীরে পানির অনেকটা ঘাটতি দেখা দেয় তাই আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখতে এবং পানির চাহিদা পূরণ করতে তরমুজ নামক এই সুমিষ্ট ফলটি আপনার জন্য পারফেক্ট একটি ফল হতে পারে। তাই সেহরিতে তরমুজ রাখা দরকার।
- সেহেরীতে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার পরে খাওয়া শেষে খেজুর, বিভিন্ন ধরনের বাদাম খেলে আমাদের শরীরে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে এবং আমাদের শরীরকে সারাদিন শক্তি যোগান দিতে সাহায্য করবে।
ব্যায়াম কখন করবেন
আমাদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত শরীর চর্চা করে থাকেন। কিন্তু রোজার সময়ে অন্য সময় মতো ব্যায়াম করা বা শরীর চর্চা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এছাড়াও বিভিন্ন ডাক্তারদের পরামর্শ হল কোনভাবে রোজা থেকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করা ঠিক নয়। তবে শরীর সায় দিলে হালকা কিছু শরীর চর্চা চাইলে করা যায়। কেউ চাইলে সন্ধ্যার পর করতে পারে আবার কেউ চাইলে সকালে করতে পারে।
সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে তার শরীরের ওপর। তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হেলথ ইন্সট্রাক্টর মুহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, যারা রোজা করবেন তাদের জন্য নামাজ বিশেষ করে ইফতারের পর রাতে তারাবির নামাজ আদায় করাটাই সবচেয়ে বড় ব্যায়াম হতে পারে। এছাড়া ইফতারি বা সেহেরী করার পর হাঁটাচলা করার ব্যায়ামও ভালো একটি ব্যায়াম হিসেবে ধরা দিতে পারে।
ঢাকার একটি সুপরিচিত হোটেলের জিমের প্রধান প্রশিক্ষক বলেন, রোজার সময় অর্থাৎ রোজা রেখে ভারী কোন উপকরণ ব্যবহার করে ব্যায়াম করা ঠিক হবে না। রোজার সময় ভারী উপকরণ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং পাশাপাশি বাড়ির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার সময় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
যারা শরীরে প্রতি অনেক বেশি যত্নশীল বা ফিটনেস ধরে রাখতে চাই তারা ইফতারের পর অন্তত আধাঘন্টা বিরতি দিয়ে হালকা ওয়ার্ম আপ বা সকালে কিছুটা ওয়ার্ম আপ করতে পারে। তবে ব্যায়ামের ক্ষেত্রে নিজ নিজ প্রশিক্ষকের পরামর্শ মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
রোজা থেকে ভুলে খেয়ে ফেললে রোজা হবে কিনা
দরজায় কড়া নাড়ছে রমজান মাস। মুসলিম জাহানের সব থেকে পবিত্র একটি মাস রমজান মাস। মুসলিমের জন্য অনেক সাধনা এবং সংযমের একটি মাস হলো রমজান মাস। যার শুরুটা হয় ভোরবেলার সেহেরী দিয়ে এবং শেষ হয় সন্ধ্যার ইফতারি দিয়ে। রমজান মাসে প্রাপ্ত বয়স্ক মুসল্লিদের উপর রোজা রাখা ফরজ। এছাড়াও আরো অনেক নফল রোজা রয়েছে।
কিন্তু কথা হচ্ছে যে, রোজা রাখা অবস্থায় যদি কোন ব্যক্তি ভুল করে কোন খাবার খেয়ে ফেলে তাহলে কি তার রোজা ভেঙে যাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুবই সহজ। উত্তরটা হলো-সজাগ থাকা অবস্থায় যদি কেউ ভুলে পানাহার করে তাহলে তার রোজা ভাঙবে না। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত,"যে ব্যক্তি ভুলে আহার করল বা কোন কিছু পান করলো, সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে। কেননা আল্লাহ তাকে পানাহার করিয়েছেন।"
আবু হুরায়রা রাঃ থেকে আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে," কোন রোজাদার ব্যক্তি যদি ভুল করে রমজান মাসে পানাহার করে ফেলে তাহলে তার ওপর সে রোজার কোন কাজা নেই। কোন কাফফার ও তাকে দিতে হবে না।" তবে লক্ষণীয় যে, দাঁতের মধ্যভাগে যদি কোন জিনিস ছোলা অথবা ভাতের কিঞ্চিৎ পরিমাণ লেগে থাকে এবং সেটি ইচ্ছাকৃতভাবে পুনরায় খেয়ে ফেলে তবে তার রোজা ভেঙে যাবে।
দাঁত দিয়ে রক্ত বের হয়ে কণ্ঠনালীর নিচে নেমে গেলে অথবা রক্ত যদি থুথু অপেক্ষা বেশি কিংবা সমান অথবা কম হয় সেটার স্বাদ যদি গলায় অনুভূত হয় তবে রোজা ভেঙে যাবে। তবে যদি কম থাকে এবং স্বাদ অনুভূত না হয় তবে সেই রোজা ভাঙবে না।
শেষ কথা
রমজান মাস শ্রেষ্ঠ রহমতের একটি মাস। সংযম পালন এবং সংযম শিক্ষার একটি মাস। এ মাসে বেশি বেশি সুষম খাদ্য খেয়ে পরিমিত ভজন করে শরীরকে সুস্থ সবল রেখে এবং বেশি বেশি এবাদত করতে পারাই হবে উত্তম কাজ। রোজায় স্বাস্থ্যকর খাবার খান, সুস্থ থাকুন।
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আমরা জানলাম সেহেরীতে কি খাবেন আর কোন খাবারগুলো এড়িয়ে যাবেন এই সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য।এছাড়াও আরো জানলাম সেহরিতে ভাতের পরিবর্তে কোন খাবারগুলো খাওয়া যায় সেগুলো সম্পর্কে।তাহলে আর দেরি কেন আপনারা সকলেই এই টিপস গুলো ফলো করার চেষ্টা করবেন।আশা করছি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।
যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করবেন।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন। আমার আজকে এই পর্যন্তই। দেখা হবে পরের কোন পোস্টে। আর এতক্ষণ ধরে আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url