ব্ল্যাক কফির উপকারিতা ও অপকারিতা
দেহের ক্লান্তি কাটিয়ে মন মেজ ফুরফুরে রাখতে কফি অনেকটা সাহায্য করে থাকে আমাদের। এজন্য আমাদের মধ্যে অনেকেরই সারাদিনের সঙ্গে এক কাপ কফি। কফি না হলে যেন চলে না। প্রিয় পাঠক আজকে আমার আর্টিকেলের বিষয় ব্ল্যাক কফির উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে।কিন্তু দুধ,ক্রিম,চিনি ইত্যাদি মিশ্রিত করার কারণে কফির স্বাদের পরিমাণ বেড়ে গেলেও কমে যায় এটার উপকারিতা। আমাদের মধ্যে হয়তোবা অনেকেই জানেনা কিভাবে ব্ল্যাক কফি খেলে উপকারিতা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে। শুধু আমাদের শরীরের উপকার নয় বরং আমাদের ত্বকের এবং চুলের জন্য ভীষণ উপকারী কফি।
ভূমিকা
আপনি কি ব্ল্যাক কফির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন।ব্ল্যাক কফির উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে হলে আমার আর্টিকেলের সাথেই থাকুন। কফি সঠিক নিয়মে খেতে না পারলে আমাদের শরীরের জন্য উপকারের পরিবর্তে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়াও ব্ল্যাক কফি আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি।চলুন তাহলে জেনে নেই ব্ল্যাক কফির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
ব্ল্যাক কফির উপকারিতা ও অপকারিতা
মূলত কফি দানার গুড়া এবং পানি মিশিয়ে ব্লাক কফি তৈরি করা হয়। তবে কেউ কেউ এই কথা সব বাড়িয়ে তোলার জন্য দুধ চিনি এবং বিভিন্ন ধরনের উপাদান হয়েছে পান করেন। কিন্তু যারা প্রকৃত খাঁটি কফি প্রেমি হয়ে থাকে তারা সাধারনত কফির সাথে কিছু মেশান না। রেগুলার ব্ল্যাক কফি পান করার ফলে কিছু উপকারিতা মিলে আমাদের শরীরে।
- ব্ল্যাক কফির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং এটি আমাদের হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। কয়েকটা গবেষণা অনুযায়ী জানায় গেছে নিয়মিত দুই এক কাপ কফি পান করলে তা আমাদের হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং পাশাপাশি হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দেয়।
- এমনকি ধারণা করা হয় ব্ল্যাক কফিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা অনেক বাড়িয়ে দেয়। এটা আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি আমাদের স্মৃতিশক্তির লোপ পাওয়ার ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। এজন্য মস্তিষ্ক সচল রাখতে আমাদের ব্ল্যাক কফি খাওয়া জরুরী।
- নিয়মিত পরিমিত পরিমানে ব্ল্যাক কফি খাওয়া হলে আমাদের যকৃতের ক্যান্সার ফ্যাটি লিভার সহ হেপাটাইটিস বি এবং লিভার সিরোসিস হওয়ার সমস্যা কমে যায়। এছাড়াও ব্ল্যাক কফির মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা যকৃতের ক্ষতিকারক এনজাইনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- কফি মূত্রবধক তাই আমাদের পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শরীর থেকে ক্ষতিকারক উপাদান ও ব্যাকটেরিয়া বের করে দিয়ে পাকস্থলী পরিষ্কার করতে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে। এজন্য আমাদের পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতে ব্ল্যাক কফি খাওয়ার কোন বিকল্প নেই।
- এছাড়া ব্ল্যাক কফির মধ্যে রয়েছে আরো বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি টু, বি থ্রি এবং রয়েছে পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এর মত উপাদান। যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে।
- আমাদের মধ্যে অনেকেই ওজন কমানোর জন্য শরীরচর্চা করে থাকে। কিন্তু শরীরচর্চার কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য শরীরচর্চা করার কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে ব্লাক কফি পান করা উচিত। কেননা এতে করে আমাদের বিপাক ৫০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে যা পেটে মেদ কমাতে সাহায্য করে।
- ব্ল্যাক কফি আমাদের স্নায়ু গুলোকে বিভিন্নভাবে উদ্দীবিত করে থাকে যার কারণে আমাদের শরীরের চর্বির কোষ ভেঙে এবং লাইকোজেনের বিপরীত হিসেবে সংকেত দিতে পারে। ফলে আমাদের ওজন কমে যায়। তাই যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তারা নিয়মিত ব্লাক কফি খেতে পারেন।
- এছাড়াও কয়েকটি গবেষণা মতে জানা গেছে যে, ব্ল্যাক কফি আমাদের শরীরে ডায়াবেটিস টু ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও আরো গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে, যারা নিয়মিত তিন কাপের বেশি কফি পান করে তাদের টা একটু ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা ৪২ শতাংশ কমে যায়।
- পছন্দনীয় পানির হিসেবে আপনার খাদ্য তালিকায় অন্য কোন কোমল পানীয় না রেখে রাখতে পারেন ব্ল্যাক কফি। কারণ এটি আমাদের হতাশা কমাতে সাহায্য করে। এক গবেষণা অনুযায়ী জানায় গেছে যারা নিয়মিত কফি পান করে থাকে তাহলে অন্যদের তুলনায় কম হতাশাগ্রস্ত হয়।
- অন্যদিকে আরেক গবেষণায় জানা যায়, তিনি যারা ব্ল্যাক কফি পান করলে দীর্ঘমেয়াদি কোলন বা লিভারে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে ক্যাফেইনের ভেতর অভ্যন্তরীণ প্রদাহ কমানোর অনেক ক্ষমতা রয়েছে। এজন্য ব্ল্যাক কফি পান করলে আমাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কম থাকে।
ব্ল্যাক কফির অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
প্রিয় বন্ধুরা এতক্ষণ ধরে আমরা জানলাম ব্ল্যাক কফি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন তাহলে এখন জেনে নেই অতিরিক্ত ব্ল্যাক কফি খেলে আমাদের শরীরে কি কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্যঃ
- অতিরিক্ত কফি পান করার ফলে আমাদের শরীরের ভিতরে হরমোনের চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে করে আমাদের শারীরিক এবং মানসিক উদ্বেগ বাড়তে পারে। তাই সবসময় পরিনতই পরিমাণে কফি পান করা উচিত।
- এছাড়াও অতিরিক্ত ব্লগ কফি খাওয়ার কারণে আমাদের ঘুমের জটিলতা বা ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সবসময় রাতে ঘুমানোর আগে কফি পান করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
- ব্ল্যাক কফি সবসময় উচ্চ ক্যাফেইন যুক্ত হয়ে থাকে। উচ্চ ক্যাসে যুক্ত হওয়ার কারণে অনেকের পেটে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকের পেটে এসিডিটি বা পেট জ্বালাপোড়ার মত সমস্যা হতে পারে। আবার অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত ব্ল্যাক কফি গ্রহণ করার ফলে আমাদের দেহে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ যেমন লৌহ, জিংক, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি শোষণ হতে বাধা পায়। এজন্য কখনো অতিরিক্ত ব্ল্যাক কফি পান করা ঠিক নয়। বরং আমাদের শরীরের জন্য এটি হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
- আমাদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন যে অতিরিক্ত কপি পান করলে আমাদের শরীরে পানি শূন্যতার সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু এটাই সম্পূর্ণ ধারণ।কফি পান করলে আমাদের শরীরে পানিটা দেখা দেয় না। বরং অতিরিকের পান করলে আমাদের কিছু শারীরিক সমস্যা মাথা ব্যথা সহ বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ব্ল্যাক কফি পানের সঠিক অভ্যাস
কমবেশি ব্লাক কফি আমরা সবাই পছন্দ করে থাকি। কিন্তু এই পানীয়টি পান করার কিছু নিয়ম রয়েছে। যা হয়তোবা আমরা অনেকেই জানিনা। অনেকেই অতিরিক্ত কফির আসক্তিতে ভুগে থাকে। তবে সঠিকভাবে কফি পান করলে এবং সঠিক নিয়মে পান করতে পারলে আমাদের শরীরের জন্য এটি উপকার।
কিন্তু ভুল পদ্ধতিতে যদি আমরা এই কফি খেয়ে থাকি তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যর জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে কফি পানের ক্ষেত্রে কিছু দিক খেয়াল রাখার কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলঃ
সকাল দশটার আগে কফিকে না বলুন
গবেষণায় জানা গেছে বেশিরভাগ মানুষ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আগে কফির কাপ হাতে নেন। কিন্তু ঘুম থেকে উঠার দুই এক ঘন্টা পর্যন্ত কর্টিসন নামক এক ধরনের হরমোনের মাত্রা আমাদের শরীরে বেশি থাকে। এজন্য ওই টাইম আমাদের কফি পান করার কোন প্রয়োজন নেই। বরং একটু সময় বাড়ার সাথে সাথে বা আমরা যখন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি তখন আমাদের শরীরে এই হরমোনের মাত্রা কমতে শুরু করে। যখন কমতে শুরু করে তখন কফি পান করা উচিত।
অল্প পরিমাণে কফি পান করুন
দিনের শুরুতে বড় একমত কফি নিয়ে অনেকেই বসে যান। কিন্তু এক মগ কফির তুলনায় কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে অল্প করে কফি পান করলে আমাদের শরীরের জন্য বেশি উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু একসাথে অনেকগুলো কফি নিয়ে বসে যায় যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
দুপুর এবং রাতের খাবারের সঙ্গে কফি নয়
কমপক্ষে দুপুরের খাবার খাওয়ার এক থেকে দেড় ঘন্টা পরে কফি পান করা উচিত। এতে করে ঘুম ঘুম ভাব কেটে যাবে। কিন্তু রাতে খাবারের পরে কফি খাওয়া উচিত নয়। এতে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত করতে পারে বা ঘুম কম হতে পারে।
অল্প ঘুমের জন্য কফি
অনেক সময় কাজ করতে করতে আমরা আক্রান্ত হয়ে পড়ি। এবং কাজের ফাঁকে আমরা বিরতির নিয়ে থাকি। ওই সময় অনেকে পাওয়ার ন্যাপ নিতে পছন্দ করে। এমনকি আমাদের ক্লান্তি ছেড়ে ফেলতে এ পাওয়ার ন্যাপের কোন তুলনা হয় না। এজন্য আপনি যদি জীবনে কাটিয়ে চাঙ্গাভাবে কাজ চালিয়ে যেতে চাই তাহলে দিতে হবে একটি ছোট ঘুম। এই ছোট ঘুমের আগে হালকা করে আপনার কাছে পান করে নিলে ঘুম থেকে ওঠার পর আরও ঝরঝরে অনুভব করবেন।
ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানিয়র পর এক গ্লাস পানি
ব্ল্যাক কফিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন। এবং এই ক্যাফেইন পান করার ফলে আমাদের মূত্রের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। যার কারণে আমাদের শরীর থেকে অনেকটা পানি বের হয়ে যায়। তাই কফি বা এ ধরনের পানি পান করার আগে শরীরে পানির ভারসাম্য ধরে রাখতে হবে। এজন্য আমাদের পানি পান করতে হবে।
ক্যাফেইন গ্রহনের মাত্রা জেনে রাখুন
একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য দিনে ৪০০ মিলিগ্রাম কফি গ্রহণ নিরাপদ বলে মনে করা হয়। তাই প্রতিদিন কতটুকু পরিমাণ কফি বা ক্যাফে আপনার শরীরে প্রবেশ করতে সেটা আপনার খেয়াল রাখা দরকার। অতিরিক্ত ক্যাফে অনুগ্রহ করার ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য কতটুকু পরিমাণ ক্যাফেইন গ্রহণ করা হচ্ছে তার পরিমাণ আমাদের মেপে রাখা দরকার।
প্রশিক্ষণ বা শিখার সময় কফি
আমরা যখন কোন কিছু শিখতে যায় বা কোন প্রশিক্ষণ দিতে যাই তখন তার আগে আমাদের অল্প পরিমাণে কফি পান করা উচিত। কেননা এতে আমাদের স্মৃতিশক্তি আরো প্রখর হয়। এতে করে আপনি যা শিখবেন বা শিখাবেন তা দীর্ঘক্ষণ মনে থাকবে। এছাড়াও আপনি গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজের আগে অল্প করে কফি পান করে নিতে পারেন।
কফি কিভাবে পান করবেন
কফির আসল কার্যকারিতা আসলে নির্ভর করে আপনি কিভাবে কফি পান করছেন তার ওপরে। কারণ কফিতে বাড়তি দুধ এবং চিনি পান করার ফলে কফির আসল কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য ব্ল্যাক কফি খাওয়ার সবচেয়ে বেশি উপকারি। তবে যে কোন পথে পান করার আগে আপনি চিনির পরিবর্তে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আমরা জানলাম ব্ল্যাক কফির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। এছাড়াও আজকের আর্টিকেলের মধ্যে আমরা জেনেছি কফি খাওয়ার বিভিন্ন নিয়ম সম্পর্কে এবং কফি খেলে আমাদের শরীরে কত ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে।
তাহলে আর দেরি কেন আপনারা সকলেই এই টিপস গুলো ফলো করার চেষ্টা করবেন।আশা করছি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করবেন। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন।আজকে এই পর্যন্তই। দেখা হবে পরের কোন পোস্টে।
আজকের এই পোস্টে যদি আপনার কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন। এধরনের আরো আর্টিকেল করতে এবং বিভিন্ন সম্পর্কে জানতে আমার ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। আর এতক্ষণ ধরে আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url