নাপাক অবস্থায় কি কি কাজ করা যাবে না বিস্তারিত জেনে নিন
নাপাক অবস্থায় কি কি কাজ করা যাবে না সেটা আমাদের প্রত্যেকের জেনে থাকা উচিত। ইসলামে পবিত্রতা অর্জন অনেক মর্যাদা পূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আল্লাহ তা'আলা নিজে পবিত্র এবং বান্দাদের পবিত্রতা তিনি পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনের আল্লাহ তা'আলা বলেন," তোমরা যদি অপবিত্র অবস্থায় থাকো তবে নিজেদের শরীর গোসলের মাধ্যমে ভালোভাবে পবিত্র করে নাও।"সুতরাং প্রশ্নের উল্লেখিত ফরজ গোসল অবস্থায় দৈনন্দিন কাজ করা জায়েজ আছে কিন্তু অপবিত্র অবস্থায় কোন কাজ করা কিংবা খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি অভ্যাসে পরিণত করা বিষয়টি অপছন্দনীয়। কেননা ইসলামে সবসময় পবিত্র থাকার আলাদা কদর রয়েছে।
পবিত্রতা অর্জনের ফজিলত প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন," ইসলাম পরিচ্ছিন্ন। সুতরাং তোমরা নিশ্চয়ই পরিচ্ছন্নতা অর্জন করো। নিশ্চয়ই জান্নাতে কেবল পরিছন্ন ব্যক্তিরা প্রবেশ করবে।" প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমার আর্টিকেলের বিষয় নাপাক অবস্থায় কি কি কাজ করা যাবে না সে সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য নিয়ে।
ভূমিকা
নাপাক অবস্থায় কি কি কাজ করা যাবে না জানতে হলে আমার আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত থাকুন। বিভিন্ন কারণে মানুষের শরীর অপবিত্র হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু কিছু অপবিত্রতা থেকে ওযু করার মাধ্যমে পবিত্র হওয়া যায়। আবার কিছু কিছু অপবিত্রতা দূর করার জন্য গোসল করে পবিত্র হতে হয়। যেমন স্ত্রী সহবাস এবং স্বপ্নদোষ,মেয়েদের হায়েজ নেফাস থেকে পবিত্র হওয়ার পর গোসল করা ফরজ।
নাপাক অবস্থায় কি কি কাজ করা যাবে না
কোন ব্যক্তির উপর গোসল ফরজ হলে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতার না অর্জন করলে বেশ কিছু কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে ইসলামে। চলুন তাহলে জেনে নেই নাপাক অবস্থায় কি কি কাজ করা যাবে না সে সম্পর্কে বিস্তারিতঃ
নামাজ আদায় করা যাবেনা
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, হে মুমিন গন, যখন তোমরা নামাজ পড়ার জন্য ওঠো তখন তোমাদের মুখমন্ডল এবং হাত কোনই পর্যন্ত ধৌত কর এবং মাথা মাসেহ করো এবং পদযুগল গিটসহ ধৌত কর। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদারগণ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাত আদায় করো না, যতক্ষণ না পর্যন্ত তোমরা বুঝতে পারো যে তোমরা নামাজে কি বলছো। তাছাড়া বড় নাপাকি হয়ে গেলে গোসল না করা পর্যন্ত সালাত আদায় করবে না।
কোরআন শরীফ স্পর্শ করা যাবেনা
অপবিত্র শরীর নিয়ে কোরআন শরীফ স্পর্শ করা যাবে না। পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ পবিত্র তারা ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি তা যেন স্পর্শ না করে। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা থেকে বর্ণিত হয়েছে, পবিত্র না হয়ে কোরআন কারীম স্পর্শ করা যাবে না।
কোরআন তেলাওয়াত করা যাবেনা
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় আমাদেরকে কোরআন পড়িয়েছেন, তবে যখন বড় নাপাকি অবস্থায় থাকতেন শুধুমাত্র সে সময় ছাড়া। এজন্য নাপাক অবস্থায় কখনো কুরআন স্পর্শ করা বা কোরআন তেলোয়াত করা যাবে না। একই সাথে ঋতুস্রাব মহিলা এবং প্রসব পরবর্তী রক্তপাতের অবস্থায় থাকা মহিলা উভয়দের ক্ষেত্রে একই বিধান রয়েছে।
মসজিদে অবস্থান না করা
নাপাক অবস্থায় কি কি কাজ করা যাবে না তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নাপাক অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করা যাবে না। কিন্তু অপরিষ্কার অবস্থায় একজন ব্যক্তি অজু করে বা অজু করার জন্য মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়া জায়েজ আছে। শুধুমাত্র মসজিদের ভেতরে থাকার জন্য নাপাক অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করা যাবে না।
তাওয়াফ করা যাবে না
নাপাক অবস্থায় কি করা যাবে না সেগুলো আমরা ইতিমধ্যে জানলাম। এর মধ্যে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নাপাক অবস্থায় তাওয়াফ করা যাবে না। যেহেতু তাওয়াফ করা নামাজের সমতুল্য একটি বিষয় তাই নাপাক অবস্থায় তাওয়াফ করা যাবে না। নবীজির রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেন তাওয়াফকে সালাত হিসেবে গণ্য করা হয়।
নাপাক অবস্থায় সেহরি খেয়ে রোজা রাখা যাবে কিনা
রোজা একটি ফরজ এবাদত। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ও জ্ঞান সম্পন্ন সুস্থ ব্যক্তির উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। তবে শারীরিকভাবে রোজা পালনের সকল ব্যক্তির জন্যই রোজা রাখা আবশ্যক। রোজা রাখতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধি-বিধান রয়েছে যা সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকের জ্ঞান থাকতে হবে
নাপাক অবস্থায় সেহেরী খেয়ে রোজা রাখা যাবে কিনা এই ধরনের প্রশ্ন অনেকেই করে থাকে। যার ওপর গোসল ফরজ হয়েছে তিনি গোসল না করে খাওয়া-দাওয়া করতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে গুলি করে উভয় হাত ধুয়ে খাবার গ্রহণ করা উত্তম। গোসল ফরজ হওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ গোসল না করে সেহরি খেয়ে নেই তাহলে তার রোজা রাখা যাবে।
কিন্তু অবশ্যই মনে রাখতে হবে ফজরের ওয়াক্ত থাকতে গোসল করে সময় মতো নামাজ আদায় করতে হবে। রোজা রাখা যেমন ফরজ ঠিক তেমনি সময় মত সালাত আদায় করা ফরজ। তবে মনে রাখতে হবে, গোসল ফরজ হওয়া সত্ত্বেও আলসেমি করে গোসল না করে অপবিত্র অবস্থায় এক ওয়াক্ত নামাজের সময় অতিবাহিত করা কবিরা গুনাহ।
কবিরা গুনাহ একটি বড় গুনাহ এই গুনাহ হয়ে জাহান্নামে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রমজান মাসে স্বপ্নদোষ ব্যতীত অপবিত্র অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুবহে সাদিক অতিক্রম করতেন। এরপর তিনি গোসল করে পাক পবিত্র হয়ে নিতেন এবং সালাত আদায় করতেন।
গোসল করে পবিত্র হওয়ার নিয়ম
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় পবিত্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার উদ্দেশ্যে পবিত্র পানি দ্বারা পুরোপুরি ধৌত করাকে গোসল বলা হয়ে থাকে। আর তিনটি কাজ করার মাধ্যমে ফরজ গোসল করতে হয়। যথাযথভাবে তিনটি কাজ না করে গোসল করলে ফরজ গোসল আদায় হবে না। সেগুলো হলঃ কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া, সারা শরীর পানি দিয়ে এমনভাবে ধোয়া যাতে দেহে চুলের পরিমাণ জায়গাও শুকনা না থাকে।
তবে গোসল করার সর্বোত্তম নিয়ম হলো, বিসমিল্লাহ বলে গোসল শুরু করা। তবে গোসলখানার মধ্যে যদি টয়লেট একসাথে থাকে তাহলে বিসমিল্লার মুখে উচ্চারণ করা যাবে না। ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে নেওয়া এবং হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে ফেলা। ভালোভাবে লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলা এবং বাম হাত দিয়ে পানি দিয়ে লজ্জাস্থান সম্পূর্ণ রূপে পরিষ্কার করা। সম্ভব হলে প্রস্রাব করে নেওয়া।
এতে করে সম্পন্ন নাপাকি বের হয়ে আসবে। কাপড়ে বা শরীরের অন্য কোন জায়গায় নাপাক লেগে থাকলে সেটা ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা। অজু করে নেওয়া এবং পা ধোয়া ছাড়া নামাজের ওযুর মতো করে ওযু করা। সবশেষে গোসলের স্থান থেকে একটু সরে এসে ভালোভাবে পা ধুয়ে নেওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারী-পুরুষ সবাইকে পর্দার মধ্যে থেকে গোসল করার নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে গোসল করার সময় পানির অপচয় করা ঠিক নয়। নখ পালিশ শরীরের কোন অংশে গাড়ো রঙের কোন আবরণ থাকলে তা না উঠিয়ে ফেলা পর্যন্ত গোসল হবে না। আর গোসল না হলে নামাজ হবে না। তবে মেহেদির রং থাকলে কোন অসুবিধা নেই। কপালে টিপ থাকলে তা উঠিয়ে ফেলতে হবে না হলে গোসল হবে না।
নাভিতে আঙুল দিয়ে সেখানেও পানি পৌঁছাতে হবে পরিষ্কার করতে হবে না হলে সম্পূর্ণরূপে গোসল হবে না। আল্লাহতালা মুসলিম ব্যক্তিকে ফরজ গোসল করার সময় এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখার এবং যথাযথভাবে গোসল করার নির্দেশ দিয়ে থাকেন। গোসলের পদ্ধতি উত্তেজনা বা বেগ ছাড়াই বীর্য বের হয়ে যায় তাহলে নতুন করে আবার গোসল করার কোন প্রয়োজন নেই।
ওই অংশটুকু ভালো করে ধুয়ে ফেললেই চলবে। ফরজ গোসল না করে ঘুমানোর জায়েজ আছে তবে ঘুমানোর আগে অবশ্যই লজ্জাস্থান ভালো করে ধুয়ে নিয়ে অজু করে ঘুমাতে হবে। ফরজ গোসলে সাবান শ্যাম্পু লাগিয়ে গোসল করা ভালো। আল্লাহ তায়ালা এই কাজগুলো সঠিকভাবে মেনে চলার তৌফিক দান করুক আমাদের। আমিন।
নাপাক অবস্থায় জিকির করা যাবে কিনা
আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা জিকির করতে বা সবসময় আল্লাহর এবাদতে মশগুল থাকতে পছন্দ করেন। আসলে জিকির করা একটি ভালো এবাদত। অনেকে জানতে চেয়েছেন বা অনেকে গুগলে সার্চ করে থাকেন যে, নাপাক অবস্থায় জিকির করা যাবে কিনা।
আসলে নাপাক অবস্থায় কোন কাজ করা উচিত নয় তবে আপনি যদি কোন কাজ করতে চান তাহলে আপনাকে প্রথম অবস্থায় পবিত্র হয়ে কাজ করতে হবে কেননা ইসলামে সব সময় পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলার কোরআন হাদিস অনুসারে সব সময় জিকির করা যায়।
হোক সেটা হেঁটে বা বসে থেকে বা শুয়ে থেকে কিংবা অন্যান্য কাজের ফাঁকে। তবে যারা সবসময় আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতে চান বা জিকির আজগার করতে চান তাদের সব সময় নাপাক থাকাই উত্তম। এতে করে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন।
পাঠকের শেষকথা
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আমরা জানলামনাপাক অবস্থায় কি কি কাজ করা যাবে না সে সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। এছাড়াও আজকের আর্টিকেল থেকে আমরা জানলাম ফরজ গোসল কিভাবে করতে হয় এবং নাপাক অবস্থায় সেহরি করে রোজা রাখা যাবে কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য।
তাহলে আর দেরি কেন আপনারা সকলেই এই টিপস গুলো ফলো করার চেষ্টা করবেন।আশা করছি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করবেন।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন।আজকে এই পর্যন্তই।
দেখা হবে পরের কোন পোস্টে।আজকের এই পোস্টে যদি আপনার কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন।এধরনের আরো আর্টিকেল করতে এবং বিভিন্ন সম্পর্কে জানতে আমার ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। আর এতক্ষণ ধরে আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url