রাতে ঘুমের মধ্যে ভয় পেলে কি করবেন এবং কি দোয়া পড়বেন

রাতে ঘুমের মধ্যে ভয় পেলে কি করবেন এবং কি দোয়া পড়বেন সেটা একজন মুসলমান হিসাবে আমাদের প্রত্যেকের জানা উচিত।মানুষ ঘুমন্ত বা সজাগ যেকোনো অবস্থায় মানুষ ভয় পেতে পারে। কেউ কেউ আবার একাকিত্বে ভুগে। যার কারণে অনেকেই ভয় পেতে পা্রে।
রাতে ঘুমের মধ্যে ভয় পেলে কি করবেন এবং কি দোয়া পড়বেন
হযরত ওমর ইবনে সোয়াইব আলাইহিস সালাম তার পিতা এবং দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন," আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাদের বিভিন্ন সাহাবীদের ভীতিকর অবস্থায় আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।

ভূমিকা

রাতে ঘুমের মধ্যে ভয় পেলে কি করবেন এবং কি দোয়া পড়বেন সেটা জানতে হলে আমার আর্টিকেলের সাথে থাকুন। দিনে কিংবা রাতে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভয় পাওয়া কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু নয়। আবার ঘুমের মধ্যে অনেক সময় খারাপ স্বপ্ন দেখে অনেকে জেগে ওঠে এবং ভয় পায়। এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় আমাদের অনেকের। এরকম অবস্থায় কি করনীয় সেটা আমাদের প্রত্যেকের জেনে রাখা উচিত।

রাতে ঘুমের মধ্যে ভয় পেলে কি করবেন এবং কি দোয়া পড়বেন

ভয় মানুষের একটি স্বভাবজাত বিষয়। মানুষ বিভিন্ন কারণে ভয় পেতে পারে। তবে কুরআনের ভাষায় ভয় পাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ আল্লাহর সাথে সম্পর্কের দুর্বলতা। আল্লাহর উপর যখন বিশ্বাস, ভরসা, আনুগত্য বিষয়গুলো থাকবে তখন কোন মানুষের ভয় পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন ,"মনে রেখো, যারা আল্লাহর অলি বা বন্ধু তাদের মনে কোন ভয় নেই।
তারা কখনো চিন্তান্বিত হবে না।" অন্যদিকে শরীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে অবশ্যই আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো দরকার। কেননা ঘুম হচ্ছে মানুষের শারীরিক ও মানসিক তৃপ্তি। ঘুমের মাধ্যমে আমরা সারাদিনের তৃপ্তি লাভ করি। সারাদিন কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ততার পরে মানুষ ঘুমাতে গেলে অনেক সময় সেসব দিনের কাজকর্ম আমাদের স্বপ্ন হয়ে থাকে।
আবার ঘুমের মধ্যে আমরা ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে থাকি। কেউবা আবার ঘুমের মধ্যে ভয় পেয়ে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করতে থাকে এবং চিৎকার করতে থাকে। যা মানুষকে অব্যক্ত করে ফেলে।আমরা ঘুমের মধ্যে ভয় পেয়ে যাই তখন তাদের পরে আর ঘুম আসতে চায় না। ফলে আমাদের ঘুম না হওয়ার কারণে শরীর খারাপ হতে থাকে।
যখনই আমরা ঘুমের মধ্যে খারাপ স্বপ্ন দেখবো বা ঘুমের মধ্যে কোন কারণে ভয় পেয়ে যাব তখনই আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। দোয়া হচ্ছে সকল ইবাদতের মূল। দোয়া ছাড়া সকল ইবাদত অসম্পূর্ণ থাকে। যে কোন সময় যে কোন দোয়া পড়া যায়। জীবনে প্রত্যেকটা কাজের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বিভিন্ন দোয়া শিখিয়েছেন।
চলুন তাহলে জেনে নেই রাতে ঘুমের মধ্যে ভয় পেলে কি করবেন এবং কি দোয়া পড়বেন।আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমের মধ্যে ভয় থেকে পরিত্রাণের জন্য একটি দোয়া শিখিয়েছেন। সেটি হলঃ" আউযুবি কালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন গাদাবিহি ওয়া শাররি ইবাদিহি ওয়া মিন হামাজাতিশ শাইতানি ওয়া আন ইয়াহদুরুন।" এই দোয়াটির অর্থ হলোঃ আমি আশ্রয় চাই আল্লাহ তাআলার পরিপূর্ণ বাক্যগুলো, যার মাধ্যমে তার উপর থেকে এবং তার বান্দাদের ক্ষতি থেকে পাশাপাশি শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং তাদের উপস্থিতি থেকে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এই বাক্যগুলো সন্তানদের শেখাতে এবং নাবালক সন্তানদের জন্য লিখে গলায় ঝুলিয়ে দিতেন। এছাড়াও ঘুমের মধ্যে কেউ যদি খারাপ স্বপ্ন দেখে তাহলে হাদিসে আরো অনেক আমল করার কথা বলা হয়েছে। সেগুলোর উপর ভিত্তি করে আমাদের আরো আমল করা উচিত। সেগুলো হলোঃ
  • শরীর বাম দিক করে তিনবার শুধু ফেলতে হবে।
  • যে কাজ হয়ে ঘুমিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখেছেন সে কাজ পরিবর্তন করে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে তোমাকে হবে।
  • খারাপ স্বপ্ন দেখলে কারো কাছে বলার দরকার নেই এবং এর ব্যাখ্যা নিজেও জানান চেষ্টা করার দরকার নেই।
  • শয়তান থেকে এবং যা দেখেছে তা মন্দ থেকে বাচতে আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম তিনবার পড়তে হবে।
  • সম্ভব হলে উঠে নামাজ পড়তে হবে।
  • খারাপ স্বপ্ন দেখার পরে যদি কারো ভয়ে ঘুম না আসে তাহলে এই দোয়া পড়তে হবে," লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহিদুল কাহহার, রাব্বু সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়ামা বাইনাহুমাল আজিজুল গাফফার।" এর অর্থ হল আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই যিনি এত প্রবল ক্ষমতাশালী এবং সবকিছুর প্রতিপালক। তিনি ক্ষমাশীল।
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, যদি কেউ চায় যে বিপদের সময় তার দোয়া কবুল হোক, তাহলে সে যেন সুখের দিনগুলোতে বেশি বেশি দোয়া করে। হযরত সালমান রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দোয়া ছাড়া আর কিছু আমাদের তকদির পরিবর্তন করতে পারে না। এমনকি নেক আমল ছাড়া আর কোন কিছুই সম্ভব হয়না।
এছাড়াও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো কিছু দোয়া আমাদের বলে গেছেন যেগুলো আমল করলে আমাদের মনের সাহস আসবে এবং আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে উন্নতি হবে। আমাদের তাওয়াক্কুল এবং ভরসার জায়গা আরো মজবুত হবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত," তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বিপদ-আপদে ভয়ের সময় এই দোয়া পাঠ করতে বলেছেন। "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আজিমুল হালিম।"
" লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরসিল আজিম।" " লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামা ওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদি ওয়া রাব্বুল আরসিল আজীম।" অর্থ হলো মহান ও মহান ধৈর্যশীল আল্লাহ তায়ালার সত্যিই কোনো উপাস্য নেই। তিনি এক ও অদ্বিতীয় এবং মহান আল্লাহর আরশের রব ছাড়া আর সত্য কোন উপাস্য নেই। আসমান ও জমিনের রব আল্লাহ তা'আলা ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি কোন শত্রু হতে ভয় পেতেন এবং সে মুহূর্তে তিনি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন। এছাড়াও রাসূল সাঃ কোন কিছু নিয়ে ভয় অনুভব করলে আমাদের আরেকটি দোয়া শেখার কথা বলে গেছেন। সেটা হলঃ আল্লাহুমা ইন্নি নাঝআলুকা কি নুরুরিহিম ওয়ান নাউজুবিকা মিন সুরুরিহিম।
এর অর্থ হলোঃ হে আল্লাহ তাআলা আমরা তোমাকে শত্রুর মেকাবেলায় পেশ করছি, তুমি তাদেরকে দমন করো আর তাদের অনিষ্ট হতে আমাদের আশ্রয় প্রদান কর। এছাড়াও আর একটি বিষয় সেটা হল মানুষ স্বপ্ন দেখলে সেটার কাছের অথবা দূরের মানুষকে বলে বেড়ায় বা গল্প করে থাকে। এটা মানুষের স্বভাব।
তবে অনেক সময় কিছু স্বপ্নের বর্ণনা দিতে গিয়ে অনেকেই রং মাখিয়ে স্বপ্নের বর্ণনাকে আরো বিভিন্ন গল্প দিয়ে সাজিয়ে ফেলে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে বলেছেন, সবচেয়ে বড় মিথ্যা হল কোন ব্যক্তি নিজেকে তার পিতা ছাড়া অন্য কারোর সন্তান বলে দাবি করা। অথচ যে স্বপ্ন সে দেখেনি তা বর্ণনা করা। আর আল্লাহর রাসূল যা বলেননি, সেটা সম্পর্কে মানুষের কাছে বলে বেড়ানো।

শিশুর মন থেকে ভয় দূর করার কৌশল

দুর্বল মনের শিশুরা যারা স্বভাবে অনেক লাজুক এবং মানুষের সঙ্গে মিশতে চায় না বা মিশতে ভয় পাই তারা অনেক সময় লেখাপড়া বা সামাজিক কর্মকাণ্ড অন্যদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে পড়ে। এদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ও অন্য শিশুদের তুলনায় অনেক কম হয় বা বিভিন্ন জায়গায় বাধাগ্রস্ত হয়। এজন্য শিশুর মন থেকে ভয় দূর করা এবং তাকে সাহসী করে তোলা অবশ্যক।
যেন তারা জীবনের সব ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলো জয় করতে পারে। আরবি ভাষায় সাহসিকতা হলো প্রতিকূল এবং বিপদ আপদে অন্তর দৃঢ় থাকা এবং ভয়ভীতির সময় হৃদয় স্থির থাকা। শিশুর মন থেকে ভয় দূর করতে আলেমরা বিভিন্ন ঈমানী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে বলেন শিশুদেরকে। শিশুকে যখন কোন কিছুই শেখানো হবে ভালো-মন্দ যা কিছু শেখানো হোক না কেন সেটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়।
যখন প্রয়োজন সে কাজটি সুন্দরভাবে করা এবং যথাযথভাবে করানোর চেষ্টা করাতে হবে শিশুদেরকে। শিশুকে অবশ্যই ভালো কাজে উৎসাহ দিতে হবে এবং মন্দ কাজে বাধা প্রদান করতে হবে। অবশ্যই শিশুকে ভেতর থেকে ভালো কাজ করার স্বভাবজাত প্রেরণা তৈরি করতে হবে। ফলে আপনার শিশু ভালো কাজ করবে এবং অন্যকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে।
সৎ কাজের আদেশ দিতে হবে এবং অশোক কাজে নিষেধ করতে হবে। বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করার কথা বলতে হবে। সত্য মানুষের ভেতরের সাহস সৃষ্টি করে এবং মিথ্যা মানুষকে ভেতর থেকে দুর্বল করে তোলে। এজন্য আপনার শিশুকে অবশ্যই সত্য কথা বলা শেখাতে হবে। সন্তানকে সাহসী করে তুলতে ভালো কাজে মানসিক দ্বিধা দূর করতে হবে এবং দৃঢ় প্রত্যয়ি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
আপনার শিশুকে যখন ইসলামের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ বীর এবং সাহসী ব্যক্তিদের গল্প শোনানো হবে তখন তাদের ভেতরে সাহস জন্ম নেবে। বিশেষ করে যখন ইসলামে মুসলিমদের বিভিন্ন সাহাবীদের অসামান্য ত্যাগের বর্ণনা দেয়া হবে তখন তাদের মনের মধ্যে থেকে ভয় দূর হয়ে যাবে এবং সাহস আসবে। এবং আপনার শিশুকে সবসময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং ভয় থেকে পরিত্রাণের দোয়া পাঠ করানোর অভ্যাস করতে হবে।

পাঠকের শেষকথা

প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আমরা জানলাম রাতে ঘুমের মধ্যে ভয় পেলে কি করবেন এবং কি দোয়া পড়বেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। ইসলামে প্রত্যেকটি বিষয়ের ছোটখাটো অনেক নির্দেশনা রয়েছে। জীবনের বৃহৎ থেকে খুঁটিনাটি প্রত্যেক বিষয়ে সমাধান দিয়েছে ইসলাম।আশা করছি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন।
তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করবেন।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন।আজকে এই পর্যন্তই।দেখা হবে পরের কোন পোস্টে।আজকের এই পোস্টে যদি আপনার কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন।
এধরনের আরো আর্টিকেল করতে এবং বিভিন্ন সম্পর্কে জানতে আমার ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। আর এতক্ষণ ধরে আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।আসসালামু আলাইকুম

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url