ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম
আপনার শরীরের ওজন কি অতিরিক্ত বেশি? আপনি কি আপনার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে চাচ্ছেন! অনেক ব্যায়াম এবং খাবারের তালিকা পরিবর্তন করার পরেও কি আপনার ওজন কমছে না? তাহলে আজকে আর্টিকেলটি আপনার জন্য।আপনাদের সুবিধার কথা ভেবে আজকে আমার আর্টিকেলের বিষয় নির্ধারণ করেছি ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আশা করি আজকের পোস্ট পড়ে আপনি অনেক বেশি উপকৃত হতে পারবেন।
ভূমিকা
ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হলে আমার আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।আপেল সিডার ভিনেগার এর সাথে আমরা সবাই বেশ পরিচিত। এটি রান্নার কাজে সাধারণত ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
কিন্তু শুধুমাত্র রান্নার কাজে নয় বরং আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এটি কার্যকর একটি উপাদান। আপনি যদি সঠিক উপায়ে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পান করতে পারেন তাহলে আপনি আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবেন খুব সহজেই।
ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম
আবার অনেকেই হয়তো জানেন আগে থেকেই যে আপেল সিডার ভিনেগার আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সক্ষম। কিন্তু হয়তো জানেন না যে ওজন কমাতে এই উপাদানটি আমাদের কিভাবে প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়া উচিত! আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার আপনি কিভাবে খাবেন এবং কোন নিয়মে খাবেন।
কিভাবে খেলে আপনার শরীরের বিভিন্ন মাত্র কোনো ক্ষতি হবে না। আপেল সিডার ভিনেগার শুধুমাত্র আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ নয় বরং আপনার সুন্দর করে তুলতে এটি বেশ কার্যকর একটি উপাদান। গবেষণা করার মাধ্যমে জানা গেছে, নিয়ম মেনে আপেল সিডার ভিনেগার খেলে শরীরের বিপাক ক্রিয়া বেড়ে যায় যার কারণে ওজন কমতে পারে।
আর আপেল সিডার ভিনেগার শুধুমাত্র ওজন কমাতে নয় বরং আমাদের রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখে সেই সাথে আমাদের হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে। এবং বিভিন্ন সংক্রমণ এর হাতে সাহায্য করে। সাধারণত ফার্মেন্টেড আপেলের জুস থেকে তৈরি হয় আপেল সিডার ভিনেগার।
প্রাকৃতিক আপেলের মধ্যে থাকা সুগার ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়া অ্যালকোহলে পরিণত হয় এবং এই অ্যালকোহল থেকে অ্যাসিটিক এসিড তৈরি হয় যা ভিনেগারের গন্ধযুক্ত এবং ঝাঁঝালো স্বাদ যুক্ত হওয়ার কারণ। এরমধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন, এনজাইম এবং উপকারী কিছু ব্যাকটেরিয়া।
- ওজন কমাতে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস গরম পানির মধ্যে আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খান। আপনি এক মাসের মধ্যে এর উপকারিতা বুঝতে পারবেন।
- অনেকেই অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের মধ্যে লেবুর রস মিশিয়ে পান করে থাকে। কিন্তু আপেল সিডার ভিনেগারের মধ্যে থাকে অ্যাসিটিক এসিড এবং লেবুর রসের মধ্যে থাকে সাইট্রিক এসিড। আর এই দুই ধরনের এসিড একসঙ্গে খাওয়া উচিত নয়। এজন্য এই দুই উপাদান কখনো একসঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যাবেনা।
- যারা ডায়াবেটিসের রোগী কিংবা ওষুধ খাচ্ছেন অথবা সুগার নিয়ন্ত্রণে আনতে চান তারা খাবার আগে বা পরে অন্তত 30 মিনিট পর অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খেতে পারেন।
- আবার সকালে উঠে খালি পেটে আপনি চিয়া সিডের সঙ্গে অথবা ইসবগুলের ভুষির সঙ্গে আপেল সিডার ভিনেগার খেলে উপকার পাবেন।
- একজন ব্যক্তি সারা দিনে সর্বোচ্চ দুই টেবিল চামচ ভিনেগার খেতে পারবে।
- তবে প্রথমে একদিনে এক চামচ করে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তারপরে সারাদিনে দুই টেবিল চামচ খাওয়ার অভ্যাস করলে যথেষ্ট। আর যাদের খেতে কষ্ট হয় তারা সারা দিনে এক চামচ করে খেলেও হবে।
- সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হল আপেল সিডার ভিনেগার পর্যাপ্ত পরিমাণ পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে।অন্তত ২০০ মিলিলিটার পানিতে এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেতে হবে।
- এর সাথে তোকমা মিশিয়ে নিতে পারলে আরো উপকারিতা পাওয়া যাবে।
আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার সময়
আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্যকর সকল পানিওগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রাকৃতিকভাবে ফার্মেন্টেড এই পানীয়র মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান। কিন্তু বিষয় হচ্ছে যে অ্যাপেল সিডের ভিনেগার খাওয়ার সেরা সময় কোনটি? আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার বিভিন্ন রকম উপকারিতা এবং নিয়ম সম্পর্কে হয়তো আপনি জেনেছেন বা জানেন।
কিন্তু আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার সেরা সময় কখন সেটা কি আপনি জানেন?বেশিরভাগ মানুষ আপেল সিডার ভিনেগার সকালে খালি পেটে পান করে থাকে। কেউ কেউ এটি খাবারের পর কিংবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেতে পছন্দ করে থাকে। কিন্তু আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার সর্বোত্তম সময় হতে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে।
এটি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেলে আমাদের ওজন কমানোর জন্য খুব একটা উপকার হয় না। এছাড়াও আপেল সিডার ভিনেগার খেলে আমাদের শরীরে রক্তের শর্করা মাত্র কমে যেতে পারে এবং হজমে ব্যাঘাত করতে পারে। এজন্য সকালে খালি পেটে খাওয়া সর্বোত্তম সময়। খালি পেটে পান করলে এর কার্যকারিতা অনেক বেড়ে যায়।
তবে এটি খাওয়ার পরে অন্তত দশ বিশ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর অন্য কিছু খেতে হবে। তবে মনে রাখবেন কোন কিছুর সাথে মিক্স না করে শুধু আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া কিন্তু ক্ষতিকর। অবশ্যই এটি পানির সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।
আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার উপকারিতা
আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার ফলে যে শুধুমাত্র আমাদের শরীরের ওজন কমে যায় বিষয়টা এরকম না। এটি আমাদের শরীরের আরও বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকে।
সুগার নিয়ন্ত্রণ
আপেল সিডার ভিনেগার খেলে শরীরের সেনসিটিভিটি বাড়ানোর মাধ্যমে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ইনসুলিনের কারণে গ্লুকোজ দেহের প্রবেশ করে এবং কোষের প্রবেশ করে বিভিন্ন বিপাকিও কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এজন্য আপেল সিডার ভিনেগার খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ হওয়ার পাশাপাশি সুগার নিয়ন্ত্রণ হয়।
হৃদযন্ত্র ভালো থাকে
আপেল সিডার ভিনেগার আমাদের রক্তের কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যাদের হাই প্রেসার রয়েছে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক বেশি তাদের হৃদরোগের ঝুকি অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই এগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকবে। আর হৃদযন্ত্র ভালো রাখার জন্য নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া জরুরি।
হজমে সহায়তা করে
যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে তারা খাবার খাওয়ার আগে কিংবা পরে কুসুম গরম পানিতে আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনি বেশ উপকার অনুভব করবেন। আমাদের পেটে খাবার হজম করার জন্য যে এনজাইম বা অ্যাসিড প্রয়োজন হয় আপেল সিডার ভিনেগার সে সব এনজাইম এবং এসিডের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে খাবার দ্রুত ও ভালোভাবে হজম হতে পারে।
সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে
প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়ার কারণে এটি এন্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এন্টি ইনফ্লামেটরের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যার কারণে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে আপেল সিডার ভিনেগার। এজন্য আপনার শরীরের বিভিন্ন সংক্রমণ কমাতে আপনি খেতে পারেন বা খাবার তালিকায় রাখতে পারেন আপেল সিডার ভিনেগার।
কারা আপেল সিডার ভিনেগার খাবেন না
- গলা দিয়ে টক পানি আসা, গলা জ্বালাপোড়া করার সমস্যা যাদের রয়েছে তারা আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
- আমাদের মধ্যে যেসব মানুষের শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা অনেক কম থাকে কিংবা মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে কমে যায় তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আপেল সিডার ভিনেগার খাবেন না।
- যারা ডায়াবেটিসের খুব সাংঘাতিক রোগী অর্থাৎ দুই বেলা যাদের নিতে হয় এই ধরনের রোগীরা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আপেল সিডার ভিনেগার সেবন করবেন না।
- যাদের কিডনিতে কিংবা পেতে পাথর রয়েছে তারা আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- এছাড়াও যাদের শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে এলার্জি রয়েছে তারা এটি এড়িয়ে চলবেন।
- এছাড়াও যাদের দাঁতের খুব জটিল সমস্যা অর্থাৎ এনামেল হয়ে যাওয়া কিংবা দাঁতের ভেতরে গর্ত হয়ে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে তারাও এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
- যাদের অস্টিওপরেসিস আছে তাদের এটি খেতে নিষেধ করা হয়ে থাকে। কেননা আপেল সিডার ভিনেগার বোন মিনারেল ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন কে শোষণে বাধা দেয়।ফলে হারের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃপিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
রূপচর্চায় আপেল সিডার ভিনেগার
আমাদের সকলের কাছে আপেল সিডার ভিনেগার একটি পরিচিত নাম। খাবার থেকে শুরু করে রূপচর্চা এবং চুলের চর্চা ও ওজন কমাতে এটি খুবই জনপ্রিয়। এমনকি এটা দিয়ে আপনি তুলতে পারেন বাসনপত্র ও বাথরুমের জেদি দাগ। রূপচর্চার কাজে এটি বেশ উপকারিতা রয়েছে। চুলে শ্যাম্পু দেওয়ার পর আমরা আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারি।
তাহলে আমাদের চুলের খুশকি দূর হয়ে যাবে এবং ন্যাচারাল কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি নতুন চুল গজাবে। প্রথমে একটি স্প্রে বোতলে অথবা কোন বোতলে তিন থেকে চার চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে এক কাপ পানির মধ্যে মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। এরপর শ্যাম্পু করা হয়ে গেলে ওই চুলে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
অন্যদিকে এটি আমরা টোনার হিসেবেও কাজে লাগাতে পারি। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখ পরিষ্কার করে টোনার এর মতো তুলা দিয়ে এই ভিনেগার ব্যবহার করা যেতে পারে। তাহলে আমাদের মুখের ব্রণ এবং দাগ চলে যাবে। দাঁতের হলদে ভাব দূর করার ক্ষেত্রে আপেল সিডার ভিনেগার বেশ উপকারী।
এক কাপ আপেল সিডার ভিনেগার গোসল এরকম পক্ষে ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে আপনার শরীরে মেখে রাখবেন। এতে করে রোদে পোড়া ভাব দূর হয়ে যাবে। আপেল সিডার ভিনেগার হাত-পায়ে সুন্দরভাবে মেসেজ করলে হাত পায়ে ব্যথা এবং ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
আপেল সিডার ভিনেগার প্রতিদিন ত্বকে ব্যবহার করতে পারলে ত্বকের পিএইচ লেভেল সঠিক থাকে, লোমকূপ ছোট হয় এবং মুখে ব্যাকটেরিয়া প্রকোপ কমে যায়। এমনকি ত্বকের বলিরেখা থেকে শুরু করে মরা চামড়াগুলো দূর করতে সক্ষম। পেডিকিউর মেডিকিউর করতে পানির মধ্যে ভিনেগার যোগ করুন। এতে করে আপনার হাত-পা উজ্জ্বল হবে এবং পায়ের দুর্গন্ধ দূর হবে।
পাঠকের শেষকথা
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আমরা জানলাম ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। এছাড়াও আরো জানলাম রূপচর্চায় অ্যাপেল সিডার ভিনেগার কতটুকু কাজে লাগে এবং আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার উপকারিতা এবং কারা খাবেনা সে সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য।আশা করছি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।
যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন।তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করবেন।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন।আজকে এই পর্যন্তই।দেখা হবে পরের কোন পোস্টে।আজকের এই পোস্টে যদি আপনার কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন।
এধরনের আরো আর্টিকেল পড়তে এবং বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে আমার ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।আর এতক্ষণ ধরে আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url