ঘরে বসে গোল্ড ফেসিয়াল করার নিয়ম
আমরা সবসময়ই সকলেই চাই আমাদের ত্বক সুন্দর হোক। বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার আগে কিংবা কোন অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে আমরা কম বেশি সকলেই মুখের যত্ন করে থাকি। সামনে পুজো আসছে এবং এই পুজোর উপলক্ষে সবাই চাই ঝকঝকে ত্বক। সেই সঙ্গে অনেকেই পার্লারে গিয়ে বসে থাকেন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় পার্লারে যাওয়ার পরে ফেসিয়াল করলে কিছুক্ষণ পর বা কয়েকঘন্টা পর থেকে মুখে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।আবার যাদের সেনসিটিভ স্কিন তাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যেতে পারে। এজন্য আপনি ঘরে বসে সহজ কিছু উপাদান দিয়ে আপনার গোল্ড ফেসিয়াল করতে পারবেন। সুপ্রিয় পাঠক আজকে আমার আর্টিকেলের বিষয় ঘরে বসে গোল্ড ফেসিয়াল করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য নিয়ে।
ভূমিকা
ঘরে বসে গোল্ড ফেসিয়াল করার নিয়ম জানতে হলে আমার আর্টিকেলে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। গোল্ড ফেসিয়াল আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এটি যখন আমরা পার্লারে গিয়ে করব তখন সেটা আমাদের জন্য অনেক ব্যয়বহুল হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা চাইলেই এটি ঘরে বসে খুব সহজেই করতে পারি কয়েকটি উপকরণ দিয়ে। প্রিয় পাঠক চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক ঘরে বসে গোল্ড ফেসিয়াল করার নিয়ম সম্পর্কে।
ঘরে বসে গোল্ড ফেসিয়াল করার নিয়ম
ঘরে বসে গোল্ড ফেসিয়াল করতে সর্বপ্রথম আপনাকে এক চামচ নারকেল তেল, সাথে এক চামচ টক দই ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এর মধ্যে আপনি চাইলে হাফ চামচ চালের গুড়া মিশিয়ে নিলে এক ধরনের ক্লিনজার এবং স্ক্রাবার তৈরি হয়ে যাবে। এই স্ক্রাবার আমাদের ত্বকের জন্য খুব উপকারী। প্রথমে আপনার মুখ ভালোভাবে ঠান্ডা পানি দিয়ে দুই নিন।
এরপর এটা ভালোভাবে মুখের চারপাশে যত দাগ আছে বা পুরো মুখ এবং গলা লাগিয়ে নিন। কয়েক মিনিট রেখে দিয়ে ভালোভাবে স্ক্রাব করে ঠান্ডা পানি দিয়ে আবার মুখ ধুয়ে ফেলুন। অবশ্যই মুখ ধোয়ার পরে মশ্চারাইজার লাগাবেন। মুখ ধুলেই আপনি দেখতে পাবেন আপনার ত্বক কতটা গ্লো দিচ্ছে। এরপরে তৈরি করতে হবে আপনাকে একটি গোল্ড ফেসপ্যাক।
এটা তৈরি করতে আপনাকে প্রথমে একটি ফেয়ারনেস ক্রিম অথবা রেগুলার ব্যবহারের লোশন এক চামচ নিয়ে তার মধ্যে একটু হলুদ মিশিয়ে নিতে হবে। এর ভেতর এক চামচ টক দই মিশাতে ভুলবেন না এবং সাথে সাথে নিয়ে নিবেন কয়েক ফোটা গ্লিসারিন। মুখের চামড়া টাইট রাখতে এই গোল্ড ফেসপ্যাক খুবই উপকারী। এই ক্রিম তৈরি হয়ে গেলে ভালোভাবে মুখে এবং গলায় পাশাপাশি আপনি ঘাড়েও লাগিয়ে রাখতে পারেন।
এভাবে 10 থেকে 15 মিনিট এই গোল্ড ফেসপ্যাক মুখে রেখে দেবেন। ভেজা তোয়ালে দিয়ে অবশ্যই এই ফেসপ্যাক মুছে ফেলতে হবে। এই গোল্ড ফেস প্যাক রাতের বেলা করলে বেশি উপকার পাবেন। এমন কি সকালে উঠলে দেখতে পাবেন আপনার ত্বক কতটা গ্লো দিচ্ছে। তবে মনে রাখবেন আমাদের ত্বকের যে কোন ফেসিয়াল রাতের বেলা করাই ভালো।
এই ফেসিয়াল করার পরে অবশ্যই মুখ শুকনো করে একটি নাইট ক্রিম ব্যবহার করবেন। এই ফেসিয়ালটি মাসে একবার ব্যবহার করুন। খুব প্রয়োজন হলে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন। ছেলেরাও এই ফেসিয়াল করতে পারেন। মুখ থেকে যাবতীয় দাঁত উঠে যাবে এটা ব্যবহার করার ফলে।
ঘরে বসে গোল্ড ফেসিয়াল
ঘরে বসে গোল্ড ফেসিয়াল করার অনেক রকম নিয়ম রয়েছে। পাঠক এতক্ষণ ধরে আমরা জানলাম ঘরে বসে গোল্ড ফেসিয়াল করার একটি পদ্ধতি। এখন আমরা জানবো ঘরে বসে গোল্ড ফেসিয়াল করার আরো একটি পদ্ধতি সম্পরকে।
প্রথমে মুখ পরিষ্কার করতে হবে
ঘরে বসে গোল্ড ফেসিয়াল করার নিয়ম হচ্ছে সর্বপ্রথম আপনাকে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। মুখ পরিষ্কার করে নেওয়ার জন্য আপনি অল্প পরিমাণে কাঁচা দুধ নিয়ে এর মধ্যে তুলো ভিজিয়ে ভালোভাবে ত্বক পরিষ্কার করে নিতে পারেন। এভাবে ত্বক পরিষ্কার করলে ত্বকের মধ্যে জমে থাকা ময়লা দূর হয়ে যাবে এবং মুখ হয়ে যাবে নিখুত এবং পরিষ্কার। মুখ পরিষ্কার হয়ে গেলে অবশ্যই টিস্যু দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিতে হবে।
এরপর ফেস স্ক্রাব করুন
মুখ পরিষ্কার করে নেওয়া হয়ে গেলে সর্বপ্রথম দরকার হলো স্ক্রাব করা। স্ক্রাব করতে আপনি ঘরোয়া কিছু উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন। প্রাকৃতিকভাবে ফেস স্ক্রাব করতে চাইলে আপনি চিনি, কয়েক ফোঁটা মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে একটি ভালো স্ক্রাব বানিয়ে নিন। ভালো করে মিশিয়ে স্ক্রাবটি তৈরি করুন। এবার স্ক্রাব হালকা ভাবে মুখে ঘসে নিন। স্ক্রাব করার ফলে মুখের ভেতরের ময়লা বের হয়ে আসবে এবং মুখে জমে থাকা তেল বেরিয়ে আসবে। ৫ মিনিট বা ১০ মিনিট স্ক্রাব করার পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিন।
ম্যাসাজ করুন
স্ক্রাব করার পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভালোভাবে মাসাজ করা। কারণ মুখ পরিষ্কার করলেই শুধু হবে না মুখ মাসাজ করতে হবে। আর ম্যাসাজ করতে হলে দরকার হচ্ছে ক্রিম। এই ক্রিম তৈরি করতে আপনি ঘরোয়া কয়েকটি উপাদান ব্যবহার করতে পারেন। ক্রিম তৈরি করতে লাগবে অ্যালোভেরা জেল, লেবুর রস এবং অলিভ অয়েল।
এগুলোকে ভালোভাবে মিশিয়ে একটি ক্রিম তৈরি করে নিন। এরপর এটা মুখে লাগিয়ে 10 মিনিট হালকা হাতে মাসাজ করুন। ম্যাসাজ করা হয়ে গেলে টিস্যু দিয়ে হালকা হাতে মুখ মুছে নিন। তারপর দেখতে পাবেন আপনার ত্বক কতটা গ্লো দিচ্ছে।
সবার শেষে লাগান ফেসপ্যাক
ঘরে বসে গোল্ড ফেসিয়াল করার নিয়মের মধ্যে সর্বশেষ হল ফেসিয়াল ফেসপ্যাক। গোল্ড ফেসিয়ালের ফেসপ্যাক লাগানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ফেসপ্যাক ব্যবহার করার জন্য আপনি ঘরে বসে হাতের কাছে থাকা কয়েকটি উপকরণ দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন। ফেসপ্যাক তৈরি করার জন্য সর্বপ্রথম আপনার লাগবে বেসন, দুধ, হলুদের গুড়া এবং কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল।
এবার সবগুলোকে মিশিয়ে ভালোভাবে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করে নিন। সেটা সুন্দরভাবে আপনার ফেসে লাগিয়ে রাখুন অন্তত 20 মিনিট। 20 মিনিটের মধ্যে শুকিয়ে আসলে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। ভালো ফলাফল পেতে চাইলে এটি মাসে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।
হোয়াইটেনিং ফেসিয়াল করুন ঘরে বসে
বাইরে অনেক ঘুরাঘুরি এবং বিভিন্ন কাজ করার ফলে আমাদের বেশিরভাগ সবার ত্বক মলিন হতে থাকে। এর উপর পড়ে যায় বিভিন্ন দাগ ছোপ। এসব দূর করতে প্রয়োজন আমাদের ত্বকের যত্নের। এছাড়াও বিভিন্ন ছোটখাটো সমস্যা আসে আমাদের মেকআপ থেকে। সব সমস্যার সমাধান একসাথে করা সম্ভব হয় না। তখন আমরা চলে যাই পার্লারে।
পার্লার গুলোতে হোয়াইটেনিং ফেসিয়াল করাতে প্রায় ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা নিয়ে থাকে যা আমাদের অনেকের কাছে ব্যয়বহুল হতে পারে। প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করব জাফরানের সাহায্যে হোয়াইটেনিং ফেসিয়াল করার নিয়ম সম্পর্কে। জানতে হলে আমার আর্টিকেলের শেষ পর্যন্ত সাথেই থাকুন।
ক্লিনজিং
শুরুতে আপনার মুখমন্ডল ভালো ব্র্যান্ডের একটি ক্লিনজিং দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এটাতে বাজারের পন্য ব্যবহার করতে না চাইলে আপনি ঘরে থাকা উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন। আপনি তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী হয়ে থাকলে শসা এবং শুষ্ক ত্বকের অধিকারী হয়ে থাকলে কাঁচা দুধ ব্যবহার করতে পারেন। এটাতে আপনার মুখ ভালোভাবে ক্লিন হবে।
এক্সফোলিয়েসন
ছোট ছোট দানা যুক্ত ফেসওয়াশ কিংবা স্ক্রাবার দিয়ে সমস্ত ভালোভাবে স্ক্রাব করে নিন। এতে আপনি প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে চাইলে আতপ চালের গুড়ো ব্যবহার করতে পারেন। আটক চালের গুড়ো, দুই টেবিল চামচ মধু এবং লেবুর রস ও কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল। এভাবে আপনার মুখ ভালোভাবে স্ক্রাব করে নিন। অবশ্যই হালকা হাতে স্ক্রাব করতে হবে।
স্টিম
হোয়াইটেনিং ফেসিয়াল করার ক্ষেত্রে স্টিম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের মুখের লোমকূপ খুলতে সাহায্য করে। যার কারণে আমাদের ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার হয়। প্রথমে খুব অল্প পরিমাণ বাদাম তেল ছাড়া মুখে মালিশ করে নিন।এরপর বাজারে বিভিন্ন ধরনের স্টিমার পাওয়া যায়।এর মাধ্যমে কিংবা গরম পানির মধ্যে পাতলা কাপড় দিয়ে ভাপ নিতে পারেন।
ব্ল্যাকহেড পরিষ্কার
গরম পানির স্টিম নেওয়ার ফলে আমাদের ত্বকের লোমকূপের গোড়া থেকে সকল ময়লা জেগে যাবে এবং তখন ব্ল্যাকহেড এবং হোয়াইট হেড পরিষ্কার করতে হবে। এটা পরিষ্কার করার জন্য এক ধরনের যন্ত্র পাওয়া যায়। সেটার মাধ্যমে হালকা চাপ দিলেই সব উঠে আসে।
টোনিং
অনেকেই ভাবে টোনিং এর হয়তো প্রয়োজন নেই। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। যেহেতু স্টিম করার ফলে আমাদের লোমকূপ সব খুলে যায় এজন্য টোনিং এর মাধ্যমে সব বন্ধ করা জরুরী। না হলে ময়লা ঢুকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ব্রণ হতে পারে। বাজারের টোনার ব্যবহার করতে না চাইলে গোলাপ জল ব্যবহার করতে পারেন।
মাস্ক
এবার আসল কাজ হচ্ছে হোয়াইটেনিং মাস্ক এর। আপনারা হয়তো জাফরানের উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই অবগত। জাফরানের মধ্যে যে হোয়াইটনিং প্রপারটি রয়েছে সেটা আমাদের ত্বক অনেক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। মাস্ক তৈরি করতে জাফরানের আঁশ লাগবে পাঁচ থেকে ছয়টা। টক দই কিংবা দুধের সর লাগবে ১/২ দুই কাপ।
গোলাপের পাপড়ি দুই থেকে তিনটা, চন্দন অথবা মুলতানি মাটি এক টেবিল চামচ, কাঠ বাদামের গুঁড়ো দুই থেকে তিনটা এবং গোলাপজল এক টেবিল চামচ। জাফরান তরল দুধে দুই থেকে তিন ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে যতক্ষণ না এর রং হলুদ হচ্ছে। এরপর গোলাপের পাপড়ি ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। ধুয়ে নেওয়ার পরে এগুলো সুন্দরভাবে পেস্ট করে নিতে হবে।
এবার একে একে দুধ জাফরান, গোলাপ পেস্ট, মুলতানি মাটি এবং বাদামের গুড়া গুলিয়ে রেখে দিতে হবে। সুন্দরভাবে একটি পেস্ট তৈরি হয়ে আসলে এটা আমাদের মুখের ত্বকে লাগিয়ে রাখতে হবে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। এরপর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
ময়েশ্চারাইজিং
সবচেয়ে সে ভালোভাবে মশ্চারাইজার মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপর আয়নায় আপনার নিজের চেহারা দেখব এবং নিজে অবাক হয়ে যাবেন। হোয়াইটেনিং ফেসিয়াল করার ফলে আপনার ত্বকে অদ্ভুত একটা সুন্দর আভা আসবে।
আরও পড়ুনঃঘাড়ের কালো দাগ দূর করার উপায়
পাঠকের শেষকথা-ঘরে বসে গোল্ড ফেসিয়াল করার নিয়ম
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আমরা জানলাম ঘরে বসে গোল্ড ফেসিয়াল করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য।আশা করছি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন।তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করবেন।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন।আজকে এই পর্যন্তই।
দেখা হবে পরের কোন পোস্টে।আজকের এই পোস্টে যদি আপনার কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন।এধরনের আরো আর্টিকেল পড়তে এবং বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে আমার ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।আর এতক্ষণ ধরে আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।আসসালামু আলাইকুম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url