গর্ভাবস্থায় পেটের ফাটা দাগ দূর করার উপায় জানুন

সন্তান জন্মদানের সময় বা গর্ভাবস্থায় প্রত্যেক মায়ের একটি কমন সমস্যা হয়ে থাকে এই পেটের ফাটা দাগ বা স্ট্রেস মার্ক। গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকটি মায়েদের এই সমস্যাটা দেখা যায়। অনেকের পেটের ফাটার দাগের উপর কালচে ফাটা দাগ পড়ে যায় আবার অনেকের ক্ষেত্রে এমনি এমনিতেই ফাটা দাগ চলে আসে।
গর্ভাবস্থায় পেটের ফাটা দাগ দূর করার উপায় জানুন
অনেকের আবার এই ফাটা দাগ যেতে চায়না। তবে গর্ভাবস্থায় কিছু সচেতনতার মাধ্যমে পেটের ফাটা দাগ বা ট্রেস মার্ক দূর করা যায়। প্রিয় পাঠক আজকে আমার আর্টিকেলের বিষয় গর্ভাবস্থায় পেটের ফাটা দাগ দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য নিয়ে।

ভূমিকা

গর্ভাবস্থায় পেটের ফাটা দাগ দূর করার উপায় জানতে হলে আমার আর্টিকেলে শেষ পর্যন্ত সাথে থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় শুধু পেটের ফাটা দাগ নয় বরং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কালো দাগ পড়তে পারে। বিশেষ করে ঘাড়ে এবং গলার দিকে কালো দাগ দেখা যায়। অনেকের গর্ভাবস্থা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও এই দাগগুলো উঠে না। তবে বিশেষ কিছু পরিচর্যা করার মাধ্যমে এ দাগ গুলো খুব সহজেই তুলে ফেলা যায়। প্রিয় পাঠক গর্ভাবস্থায় পেটের ফাটা দাগ দূর করার উপায় সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করব। এজন্য আমার আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন শেষ পর্যন্ত।

গর্ভাবস্থায় পেটের ফাটা দাগ দূর করার উপায় জানুন

গর্ভাবস্থায় যেহেতু মায়েদের পেট অনেক বড় হয়ে যায় এবং ভারী হয়ে থাকে যার কারণে তাদের হাটাহাটি করা অনেক কষ্টকর হয়ে ওঠে। কিন্তু নিয়মিত হাটাহাটি করলে শরীর সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন করতে পারে। যার কারণে ত্বকে ফাটা দাগ হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। অন্যদিকে গর্ভবতী মায়েরা ইয়োগা বা যোগব্যায়াম করলে তারা নিজেরা এবং পেটে থাকা সন্তান ও বিশেষভাবে সুস্থ থাকবে।
অনেক সময় প্রথমে ঠান্ডা, তারপরে গরম, আবার ঠান্ডা এরকম ভাবে চাওয়ার নিলে ত্বকের মধ্যে ব্লাড সার্কুলেশন ভালোভাবে হয়ে থাকে। গর্ভধারণের শুরু থেকে এমনটা করা উচিত। প্রতিদিন গোসল করার সময় পেট, উরু এবং স্তনে আলাদাভাবে ঠান্ডা গরম পানি দেওয়ার অভ্যাস করতে হবে। মনে রাখতে হবে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিয়ে আপনার গোসল শেষ করবেন। গোসলের সময় অবশ্যই আপনার শরীর হালকা ভাবে মাসাজ করবেন।
তাহলে আপনার শরীরের ফাটা দাগ হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যাবে। এছাড়াও আপনার পেটের ফাটা দাগ যেন না হয় সেজন্য নিয়মিত আপনার পেটে তেল মালিশ করতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি প্রতিদিন দুই বেলা রাসায়নিক পদার্থ ছাড়া যেসব তৈরি বাদাম তেল রয়েছে সেগুলো যদি নিয়মিত পেটে মালিশ করা হয়। কারণ বাদাম তেল আমাদের টক মসৃণ এবং সুন্দর রাখে।
তেল দেওয়ার সময় বা ম্যাসাজ করার সময় অবশ্যই ধীরে ধীরে নাভি থেকে শুরু করে পেটের চারিদিকে ঘুরিয়ে মালিশ করতে হবে। মনে রাখতে হবে কোনভাবে যেন পেটের মধ্যে চাপ না লাগে। কিছুক্ষণ পরপর বৃদ্ধাঙ্গুল এবং তর্জনীয় আঙ্গুল দিয়ে খুবই আলতোভাবে নাভি থেকে ওপরের দিকে ঘুরাতে হবে। এভাবে মালিশ করার ফলে পেটের শতভাগ দাগ দূর হয়ে যাবে।
অন্যদিকে পেটের ফাটা দাগ দূর করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ত্বকের নমনীয়তা বজায় রাখা। নমনীয়তা বজায় রাখতে এবং আমাদের ত্বককে মজবুত রাখতে কোলাজেন তন্তুর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য প্রথমে কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেমনঃ মাছ, মাংস, ডিম, সবুজ শাক-সবজি, পেয়ারা, কলা, কমলা ইত্যাদি।
এছাড়াও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার আমাদের ত্বকের কোলাজেন তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গর্ভাবস্থায় অনেক সময় আমাদের ত্বক খসখসে হয়ে যায়। আমাদের ত্বক যখন শুষ্ক থাকে তখন এটা ফেটে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। এজন্য ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে নিয়মিত মশ্চারাইজার বা লোশন ব্যবহার করার কোন বিকল্প নেই।
বাজার থেকে কিনে আনা যে কোন ক্রিম এর পরিবর্তে আপনি মশ্চারাইজার এবং অলিভ অয়েল ও বাদাম তেল ব্যবহার করবেন। অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার অভ্যাস থাকতে হবে। একদিন সুস্থ স্বাভাবিক গর্ভবতী নারীর প্রতিদিন কমপক্ষে দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করার অভ্যাস থাকতে হবে। গ্লাস হিসেবে হিসাব করলে আপনাকে দৈনিক 8 থেকে 12 গ্লাস পানি পান করতে হবে।
তবে গর্ভাবস্থায় পেটের ফাটা দাগ দূর করার আরেকটি জাদুকরি উপায় হল আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। এক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় মায়েদের কখনোই না খেয়ে থেকে ওজন কমানোর চেষ্টা করা যাবে না। তবে প্রতিদিন ডায়েট চার্ট অনুসরণ করে খেতে পারবেন। যার ফলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অন্যদিকে ঘরে থাকা একটি উপাদান দিয়ে খুব সহজেই গর্ভাবস্থায় পেটের ফাটা দাগ দূর করা যায়।

 এক্ষেত্রে আপনার পেটে ফাটা দাগ দূর করতে ডিমের সাদা অংশ খুবই উপকারী। ডিমের সাদা অংশের মধ্যে একটি মোটা প্রলেপ দিয়ে প্রতিদিন মালিশ করতে হবে। এটা শুকিয়ে গেলে খুব ভালোভাবে গরম পানি দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। এই একই পদ্ধতি অন্তত দুই সপ্তাহ চালিয়ে যেতে হবে। এরপর দেখবেন আপনার স্ট্রেস মার্ক দূর হয়ে গেছে বা অনেকটাই কমে গেছে।
আলুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বকের চামড়া ভালো রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন, মিনারেল সমৃদ্ধ আলু চামড়ার রং হালকা করতেও সাহায্য করে থাকে। যার কারণে আমাদের ত্বকের মধ্যে থেকে সব মৃত কোষ দূর হয়ে গিয়ে নতুন কোষ তৈরি হয়। আপনি পেটের উপর আলুর রস লাগিয়ে রাখবেন। এরপর শুকিয়ে গেলে ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে এই ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিবেন।
এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করার ফলে দেখতে পাবেন আপনার পেটের কাটা দাগ অনেকটাই কমে গেছে। অ্যালোভেরার সাথে আমরা কমবেশি সকলেই পরিচিত। অ্যালোভেরা আমাদের ত্বকের যত্নে আমরা সকলে ব্যবহার করে থাকি। আপনার পেটের ফাটা দাগের ওপর এলোভেরা মালিস করুক। এতে আমাদের টক টানটান থাকে এবং ত্বকের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ কে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
এবং ত্বককে আদ্র রাখতে সাহায্য করে। আপনি ঘরোয়া এই উপাদান গুলো দিয়ে পুরোপুরি দাগ মিশাতে না পারলেও আপনার পেটের ফাটা দাগ অনেকটাই কমাতে পারবেন।

গর্ভাবস্থায় পেটে ফাটা দাগ হওয়ার কারণ

গর্ভাবস্থায় যেটা সবচেয়ে পরিবর্তন হয় সেটা হচ্ছে প্রত্যেকটা মেয়েদের শরীরে এই ফাটা দাগ। এটা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হলেও চুলকানি হতে পারে। যেটা বেশ অস্বস্তিকর। এছাড়াও অনেকেই এই ফাটা দাগ নিয়ে চিন্তিত থাকেন সৌন্দর্য হানির কারণে। গর্ভকালীন সময়ে একজন মায়ের ওজন বেশি হয় এটা খুব স্বাভাবিক।
এক একটা নারীর ক্ষেত্রে একেক ভাবে ওজন পরিবর্তন হতে পারে। স্বাভাবিকের তুলনায় ওজন যখন বেড়ে যায় তখন আমাদের শরীর প্রসারিত হতে থাকে। শরীর প্রসারিত হওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে শরীরে চামড়া বা ত্বক প্রসারিত হতে পারে না। যার ফলে ত্বকের মাঝের স্তরটিতে অনেক বেশি টান পড়ে এবং ফেটে যায়। এছাড়াও গর্ব অবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন স্ট্রেস মার্ক হওয়ার আরো একটি অন্যতম কারণ।
এই পরিবর্তনের ফলে অনেক সময় আমাদের ত্বকের কোলাজেন তন্তু কমে যায় বা দুর্বল হয়ে যায়। আর কোলাজেন তন্তু আমাদের ত্বকের এমন একটি উপাদান যা আমাদের চামড়া বা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করে। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত চামড়া প্রসারিত হওয়ার পর তাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে থাকে। কিন্তু কোলাজেন তন্তু দুর্বল হয়ে গেলে তখন আর এই ক্ষমতা থাকে না। হলে গর্ভাবস্থায় মায়েদের শরীর প্রসারিত হতে থাকে এবং খুব সহজেই শরীরে বা পেটে বিভিন্ন জায়গায় ফাটা দাগ দেখা যায়।

গর্ভাবস্থায় শরীর এবং মনের পরিবর্তন

নতুন একটি প্রাণের জন্মদানের জন্য একজন মায়ের পেটে ৯ মাস বা তারও বেশি সময় ধরে পেটের ভেতরে ধীরে ধীরে একটু করে রক্তপিণ্ড থেকে হৃদপিণ্ড তার পর মস্তিষ্কে হাত-পা এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি হয় এবং শেষে একটি ব্রণে রূপান্তর হতে থাকে। এই পুরো প্রসেস আমাদের প্রত্যেকটা মায়ের আসে। গর্ভাবস্থায় শরীর এবং মনের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হতে পারে।
বিভিন্ন ধরনের হরমোনের পরিবর্তন হতে পারে। গর্ভবতী নারীদের প্রেগনেন্সির শুরুতে বমি বমি ভাব অনুভব করেন বিশেষ করে সকালের দিকে। কিছু খেতে পারে না। এ ধরনের সমস্যা দেখা যেতে পারে। এছাড়া গর্ব অবস্থায় নারীদের শরীরের হাড়ের সংযোগস্থল ঢিলা হয়ে যেতে পারে এবং ব্যথা হতে পারে। এবং সামনের অংক বেড়ে যাওয়ার কারণে পিঠের হাড়ে এক ধরনের চাপ অনুভব হয় যার কারণে পিঠে ব্যথা হয়।
অনেক সময় দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া থেকে শুরু করে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। জরায়ুর আকার বড় হয়ে যাওয়ার কারণে মূত্রথলিতে চাপ পড়তে পারে তাই বারবার প্রস্রাব চাপে। গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই বেড়ে যায়। এছাড়াও এই সময় নারীদের শরীরে তরল উৎপাদন বেড়ে যায়। যার কারণে হাত-পা ফোলা ভাব হতে পারে।
অনেকের উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। আবার কারো কারো হরমোনের কারণে স্তনের আকার বড় হতে পারে। যার ফলে আশেপাশে আরো কালো দাগ বেশি হতে পারে। যৌনতায় আগ্রহ অনেক বেড়ে যেতে পারে কিংবা একদমই কমে যেতে পারে। এগুলো সমস্যা একজন গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিক। শুধু তাই নয় বরং মানসিক বিভিন্ন চাপ পড়ে থাকে একজন গর্ভবতী নারীর ওপর।
গর্ভবতী নারীদের মাঝে মধ্যেই মানসিক বিভিন্ন পরিবর্তন হতে পারে। হুট করেই মেজাজ খারাপ হওয়া বা মন খারাপ হয়ে যাওয়া কিংবা ঘন ঘন রাগ অল্পতেই কেঁদে ফেলা এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। কেননা এই সময় অনেক কিছুই তার নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। গর্ভাবস্থায় একজন নারী চারপাশের মানুষজন তাকে বোঝার চেষ্টা না করলে সেটি তার জন্য খুবই কষ্টদায়ক হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে তার স্বামীর কাছ থেকে মানসিক সাপোর্ট, পাশে থাকা এসব খুবই জরুরী।

পাঠকের শেষকথা-গর্ভাবস্থায় পেটের ফাটা দাগ দূর করার উপায়

প্রিয় পাঠক এতক্ষণ ধরে আমরা জানলাম গর্ভাবস্থায় পেটের ফাটা দাগ দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য।আশা করছি আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন।যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন।তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করবেন।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন।আজকে এই পর্যন্তই।
দেখা হবে পরের কোন পোস্টে।আজকের এই পোস্টে যদি আপনার কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন।এধরনের আরো আর্টিকেল পড়তে এবং বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে আমার ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।আর এতক্ষণ ধরে আমার আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url